বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বিশ্বের প্রথম মুক্ত-সোর্স ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েন। একটি বিটকয়েনের মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৬ লাখ টাকা। প্রতিদিন এর মূল্য ওঠানামা করে। বিটকয়েন লেনদেনে কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার প্রয়োজন হয় না। বিটকয়েন একটি অনলাইন কারেন্সি সিস্টেমের মুদ্রা। এই কারেন্সি সিস্টেমকে ক্রিপ্টোকারেন্সিও বলে। একে দেখা অথবা ছোঁয়া যায় না। এটি তৈরি হয় অনলাইনে এবং ব্যবহারও হয় অনলাইনে, ডিজিটাল মাধ্যমে। বিটকয়েন পুরোপুরি আমাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত, এটি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না।
বিটকয়েন নেটওয়ার্ক হলো একটি পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক যা ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রটোকলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ব্যবহারকারীরা বিটকয়েন ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট সফটওয়্যার ব্যবহার করেন এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে নামাঙ্কিত মেসেজ চালাচালির মাধ্যমে বিটকয়েন আদান-প্রদান করেন।
লেনদেনগুলো ব্লকচেইন নামে পরিচিত একটি বন্টিত, প্রতিলিপিকৃত পাবলিক ডাটাবেসে রেকর্ড করে রাখা হয় এবং মাইনিং নামের প্রুফ অব ওয়ার্ক প্রটোকল ব্যবস্থায় ঐকমত্য অর্জিত হয়। বর্তমানে অনলাইনে বিটকয়েন অনেক বেশি জনপ্রিয়।
বিটকয়েনের ডিজাইনার সাতোশি নাকামতো দাবি করেন, বিটকয়েনের ডিজাইন ও কোডিং ২০০৭ সালে শুরু হয়েছিল। প্রকল্পটি ২০০৯ সালে মুক্ত সোর্স সফটওয়্যার হিসেবে অবমুক্ত করা হয়।
সারা বিশ্বে বিটকয়েন ছাড়াও লাইটকয়েন, এথেরিয়াম, রিপলের মতো কিছু ভার্চুয়াল মুদ্রাও রয়েছে। এসব মুদ্রায় বিশ্বব্যাপী লেনদেন বাড়ছে। বাংলাদেশে এসব মুদ্রায় লেনদেন বেআইনি হওয়ার পরও এ ধরনের মুদ্রায় লেনদেন হচ্ছে।
বাস্তবিকভাবে দেখতে গেলে একটি সাধারণ কাগজ আর কোনো নোটের মধ্যে পার্থক্য থাকে না। কিন্তু একটি নোটের মূল্য ২ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। কেননা এর পেছনে সরকার থাকে, ব্যাংক থাকে এবং কোনো অথোরিটি থাকে। তারা একসঙ্গে বসে এটি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে যে, কোন নোটের মূল্য কত হবে। আর আমরা তাদের বিশ্বাস করি এবং এই সামান্য কাগজের টুকরাটাকে মূল্যবান বানিয়ে দেয়। কিন্তু বিটকয়েনের ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণই আলাদা। বিটকয়েনের মান কোনো সরকার নির্ধারণ করে দেয় না, আর এর নাই বা কোনো ব্যাংক। বিটকয়েন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট অথোরিটিও থাকে না।
কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইনে বিটকয়েনের লেনদেন চলে। ইন্টারনেট সিস্টেমে প্রোগ্রামিং করা আছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটে জমিয়ে রাখা যায়। ওয়ালেট হলো ব্যক্তিগত ডাটাবেস বা তথ্যভান্ডার যা কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইসে রক্ষিত থাকে। একজনের ব্যক্তিগত ওয়ালেট থেকে আরেকজনের ব্যক্তিগত ওয়ালেটে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন করা যায়। ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময় মূল্য প্রচলিত মুদ্রায় পরিশোধ করতে হয়। কিছু কিছু দেশে সীমিত কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন কেনাকাটায় ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েন গ্রহণ করলেও অনেক দেশেই মুদ্রা হিসেবে এখনো স্বীকৃতি পায়নি বিটকয়েন।
বিটকয়েনের বাজার অস্থিতিশীল অর্থাৎ বাজারদর ওঠানামা করে। এতে বাজার ঝুঁকি আছে। বাজারদর ওঠানামার কারণে যে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তাকে বাজার ঝুঁকি বলা হয়। বিনিয়োগে কমবেশি ঝুঁকি থাকে। যেমন শেয়ারে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি আছে। দাম বাড়তে পারে, আবার দরপতনও হতে পারে। অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম মেনে চাহিদা এবং সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে দাম ওঠানামা করে। বিটকয়েনের ক্ষেত্রে বাজারদর ওঠানামার মাত্রা অনেক। ফলে এখানে উচ্চমাত্রার ঝুঁকি আছে। ফুঁৎকারে উড়ে যেতে পারে বিনিয়োগ। সোজা কথায়, পুঁজি হারাতে পারেন বিনিয়োগকারী। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিটকয়েন মাঝেমধ্যেই খবরের শিরোনাম হয়েছে। চড়া দামে বিকোচ্ছে বিটকয়েন। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক বিটকয়েনে মোটা অঙ্ক বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। তাঁর বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘টেসলা’ এ খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি ক্রেতাদের কাছ থেকে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বিটকয়েন গ্রহণ করবে- প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা দেওয়ার পর বিটকয়েনের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায়। বিটকয়েনের বাজারে এর প্রভাব পড়ে। ঘোষণার পর মুদ্রাটির মূল্য রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে এপ্রিলের মাঝামাঝি ৬৪ হাজার ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। বিটকয়েনের সূচনালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত এটাই ছিল সর্বোচ্চ দর। কিন্তু যা ঘটার তা-ই ঘটেছে। বড় ধরনের দরপতন হয়েছে এ ডিজিটাল মুদ্রার। এক মাসের কিছু বেশি সময়ের ব্যবধানে এর দাম কমে ৪০ হাজার ডলারের নিচে নেমে এসেছে। দরপতন ৪০ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের মোট ৬৯টি দেশে সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে চলছে এই মুদ্রার লেনদেন। প্রতিবেশী ভারতও আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নিয়েছে এই মুদ্রার লেনদেনকে। তবে বাংলাদেশ ২০১৪ সালে অবৈধ ঘোষণা করে বিটকয়েন লেনদেনকে। বিটকয়েন নিষিদ্ধ, এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে আলজেরিয়া, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, মরক্কো, নেপাল ও মেসিডোনিয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, দেশের আইন অনুযায়ী বিটকয়েন বা অন্য কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন বা সংরক্ষণ করা বেআইনি। যেহেতু ভার্চুয়াল মুদ্রা কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ ইস্যু করে না, সেজন্য এর বিপরীতে আর্থিক দাবির কোনো স্বীকৃতিও থাকে না। ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের মাধ্যমে অর্থপাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। পাশাপাশি এ ধরনের লেনদেনের মাধ্যমে আর্থিক এবং আইনগত ঝুঁকিও রয়েছে।
বাংলাদেশে বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রার মালিকানা, সংরক্ষণ বা লেনদেন অবৈধ। তাই আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়াতে বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেন বা সহায়তা প্রদান ও এর প্রচার থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করা হচ্ছে।
সম্প্রতি দেশে অনলাইনভিত্তিক ভার্চুয়াল মুদ্রার (বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, রিপল, লিটকয়) বিনিময় বা লেনদেন হচ্ছে। এসব ভার্চুয়াল মুদ্রা কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষের ইস্যুকৃত বৈধ মুদ্রা নয়। এসব মুদ্রায় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত নয়, তাই এর বিপরীতে কোনো আর্থিক দাবির স্বীকৃতিও থাকে না। ভার্চুয়াল মুদ্রায় এসব লেনদেন অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। একইসঙ্গে বৈধ কোনো সংস্থার স্বীকৃত না হওয়ায় গ্রাহকরা ভার্চুয়াল মুদ্রার সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকিসহ নানা ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন। এমতাবস্থায় আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়াতে বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেন থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।