জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্ব অর্থনীতিতে বেশ কিছু মুদ্রা রয়েছে, যেগুলো ইউএস ডলারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। কারণ ইউএস ডলারের বিপরীতে সেই মুদ্রাগুলোর দাম বেশি। ইউএস ডলারসহ বেশি শক্তিশালী এমন ১০টি মুদ্রার কথা এখানে তুলে ধরা হলো।
তবে এর আগে আমাদের বুঝতে হবে, কীভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রার দাম নির্ধারিত হয়।
মুদ্রার দাম যেভাবে ঠিক হয়
বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচা হয় জোড়ায় জোড়ায়। আপনি টাকার বিনিময়ে ডলার কিনবেন বা ডলারের বিনিময়ে টাকা। এর ফলে যেকোনো মুদ্রার দামই আরেক মুদ্রার সাপেক্ষে নির্ধারিত হয় এবং এই দামকে বলা হয় বিনিময় হার।
সবদেশে বেশির ভাগ মুদ্রাই ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ সিস্টেমে বিনিময় হয়। অর্থাৎ চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে সেগুলোর মূল্য নির্ধারিত হয়। ফিক্সড এক্সচেঞ্জ সিস্টেমে সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার বিনিময় হারের একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়। এর জন্য সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার বিনিময় হার নির্দিষ্ট রাখতে নিজস্ব মুদ্রা কেনাবেচা করে। যেন মুদ্রার বিনিময় হার একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে তা নিশ্চিত করা যায়।
অর্থাৎ মুদ্রার বিনিময় হার অর্থনৈতিক সূচক, ভূরাজনৈতিক ঘটনা, মুদ্রানীতি, মুদ্রার সরবরাহ ও চাহিদাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
সবচেয়ে শক্তিশালী ১০ মুদ্রা:
১. কুয়েতি দিনার (কেডব্লিউডি): কুয়েতি দিনার হলো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা। বর্তমান বাজারে ১ কুয়েতি দিনারের বিপরীতে ৩.২৬ ইউএস ডলার পাওয়া যায়। কুয়েত সৌদি আরব ও ইরাকের মধ্যবর্তী পারস্য উপসাগরে অবস্থিত। দেশটি বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানীয় তেল রপ্তানিকারক হিসেবে পরিচিত।
কুয়েত ১৯৬০-এর দশকে দিনার চালু করে। মুদ্রাটি প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ পাউন্ডের সাথে বাঁধা ছিল। অর্থাৎ কুয়েতি দিনার এবং ব্রিটিশ পাউন্ডের মধ্যে বিনিময় হার একটি নির্দিষ্ট হারে নির্ধারিত ছিল। এখন কুয়েতি দিনার ব্রিটিশ পাউন্ডের মতো একটি মুদ্রার পরিবর্তে আরও বেশ কয়েকটি মুদ্রার সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট হারে বিনিময় করা হয়।
২. বাহরাইন দিনার (বিএইচডি): বাহরাইন দিনার হলো বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী মুদ্রা। বর্তমান বাজারে ১ বাহরাইন দিনারের বিপরীতে ২.৬৫ ইউএস ডলার পাওয়া যায়।
বাহরাইন সৌদি আরবের পূর্ব উপকূলে পারস্য উপসাগরের একটি দ্বীপরাষ্ট্র। কুয়েতের মতো দেশটি তেল ও গ্যাস রপ্তানি থেকে তার সম্পদের বেশির ভাগ আয় করে। ১৯৬৫ সালে বাহরাইন দিনার প্রচলিত হয় এবং তা ডলারের সঙ্গে পেগ করা হয়।
৩. ওমানি রিয়াল (ওএমআর): ওমানি রিয়াল এখন বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী মুদ্রা। বর্তমান বাজারে ১ ওমানি রিয়ালের বিপরীতে ২.৬০ ইউএস ডলার পাওয়া যায়।
ওমান আরব উপদ্বীপের পূর্ব প্রান্তে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেনের মধ্যে অবস্থিত। ধনী প্রতিবেশীদের মতো ওমানও তেল-গ্যাসের একটি প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। সত্তরের দশকে ওমানি রিয়াল চালু হয়েছিল এবং তা ডলারের সঙ্গে পেগ করা হয়।
৪. জর্ডানিয়ান দিনার (জেওডি): জর্ডানিয়ান দিনার হলো বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী মুদ্রা। বর্তমান বাজারে ১ জর্ডানিয়ান দিনারের বিপরীতে ২.৪১ ইউএস ডলার পাওয়া যায়।
জর্ডান মধ্যপ্রাচ্যের একটি স্থলবেষ্টিত দেশ যা এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় তেল ও গ্যাস রপ্তানির ওপর কম নির্ভরশীল। দেশটি মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের সঙ্গে লড়াই করেছে। ১৯৫০ সালে জর্ডানিয়ান দিনারের প্রচলন শুরু হয় এবং ডলারের সঙ্গে পেগ করা হয়।
৫. ব্রিটিশ পাউন্ড (জিবিপি): ব্রিটিশ পাউন্ড বিশ্বের পঞ্চম শক্তিশালী মুদ্রা। বর্তমান বাজারে ১ ব্রিটিশ পাউন্ডের বিপরীতে ১.২২ ইউএস ডলার পাওয়া যায়।
ব্রিটিশ পাউন্ড চতুর্দশ শতকে চালু হয় এবং ১৯৭১ সালে মুদ্রাটি ডেসিমেলাইজড হয়। তখন পাউন্ড, শিলিং ও পেন্সের পুরোনো পদ্ধতি বাদ দিয়ে পাউন্ড ও পেন্সের বর্তমান দশমিক পদ্ধতি চালু হয়। এই মুদ্রা অন্য কোনো মুদ্রার সঙ্গে বাঁধা নেই।
৬. কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ ডলার (কেওয়াইডি): কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের ডলার বিশ্বের শক্তিশালী মুদ্রাগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতিটি কেম্যান ডলারের বিপরীতে ১.২০ ইউএস ডলার পাওয়া যায়। সত্তরের দশকে কেম্যান ডলার চালু হয়েছিল এবং তা ডলারের সঙ্গে বাঁধা আছে।
৭. জিব্রাল্টার পাউন্ড: বিশ্বের শক্তিশালী মুদ্রাগুলোর মধ্যে কেম্যান ডলারের সঙ্গে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতিটি জিব্রাল্টার পাউন্ডের বিপরীতে ১.২২ ইউএস ডলার পাওয়া যায়।
জিব্রাল্টার স্পেনের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এবং আনুষ্ঠানিকভাবে এটি একটি ব্রিটিশ অঞ্চল। ১৯২০-এর দশকে জিব্রাল্টার পাউন্ড চালু হয়েছিল এবং এটি ব্রিটিশ পাউন্ডের সঙ্গে পেগ করা হয়।
৮. সুইস ফ্রাংক: বিশ্বের শক্তিশালী মুদ্রাগুলোর মধ্যে অষ্টম স্থানে রয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতিটি ফ্রাংকের বিপরীতে ১.০৮ ইউএস ডলার পাওয়া যায়। সুইস ফ্রাংক হলো সুইজারল্যান্ড ও তার ক্ষুদ্র প্রতিবেশী লিচেনস্টাইনের সরকারি আইনি দরপত্র।
সুইজারল্যান্ডের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে মুদ্রাটিকে একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে দেখা হয়। ১৮৫০ সালে সুইস ফ্রাংক চালু করা হয়েছিল এবং পরে ফ্রি-ফ্লোটে যাওয়ার আগে এই মুদ্রা ইউরোর সঙ্গে বাঁধা আছে।
৯. ইউরো: হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠনকারী ২৭টি দেশের মধ্যে ২০টির সরকারি মুদ্রা। ২০০২ সালের ইউরোর কয়েন ও ব্যাংক নোট চালু হয়। মুদ্রাটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রার মধ্যে সুইস ফ্রাংকের পাশাপাশি অষ্টম স্থানে রয়েছে। এখন প্রতিটি ইউরোর বিপরীতে ১.০৮ ইউএস ডলার পাওয়া যায়। এটি অন্য কোনো মুদ্রার সঙ্গে বাঁধা নেই।
১০. মার্কিন ডলার: হলো বিশ্বের ১০তম শক্তিশালী মুদ্রা। বিশ্বে অন্য সব মুদ্রার দাম ইউএস ডলারের চেয়ে কম। সতেরো শতকে এই মুদ্রা চালু হয়। বর্তমানে মুদ্রাটি বিশ্বের বৃহত্তম রিজার্ভ কারেন্সি।
অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে সবচেয়ে বেশি মজুত করা মুদ্রা হলো ইউএস ডলার। তেল, স্বর্ণ, রুপা ও তামাসহ অনেক পণ্যের মূল্য নির্ধারণের জন্য এই মুদ্রা ব্যবহৃত হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।