স্পোর্টস ডেস্ক : ক্রীড়া দুনিয়ার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ আসর ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপে ৩২ দেশ অংশ নিলেও ট্রফি জেতার সৌভাগ্য হয়েছে কেবল আট দেশের। এদিকে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেললেও ঘরে সোনার ট্রফি তোলা হয়নি পাঁচ দেশের। এদের মধ্যে আবার পোড়া কপাল তিন দেশের। যারা একাধিক ফাইনাল খেলেও ছিনিয়ে নিতে পারেনি বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ ট্রফি।
.
এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ জেতা দলগুলো হলো: ব্রাজিল, জার্মানি, ইতালি, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, উরুগুয়ে, স্পেন ও ইংল্যান্ড। ব্রাজিল সর্বাধিক পাঁচবার ফিফা বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ড গড়েছে। চারটি করে শিরোপা দখলে নিয়েছে ইতালি ও জার্মানি। তা ছাড়া দুটি করে শিরোপা জয়ের রেকর্ড আছে ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের। আর ইংল্যান্ড ও স্পেন প্রথমবার ফাইনাল খেলেই জিতে নিয়েছে বিশ্বকাপ ট্রফি। অথচ এমন কিছু দেশ আছে, যারা একাধিকবার ফাইনাল খেলার সুযোগ পেয়েও ছুঁতে পারেনি বিশ্বকাপ নামক সোনার হরিণটি। চেকোস্লোভাকিয়া, হল্যান্ড (নেদারল্যান্ডস), হাঙ্গেরি ফিফা বিশ্বকাপ ইতিহাসে যারা সবচেয়ে বড় কপাল পোড়া। এদের মধ্যে নেদারল্যান্ডস সর্বাধিক তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে।
১৯৭৪, জার্মানি ২-১ হল্যান্ড
ডাচরা প্রথমবার ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে ১৯৭৪ সালে। কোচ রাইনাস মিশেলস ও শিষ্য ইয়োহান ক্রুইফের নেতৃত্বে ডাচরা নিয়ে আসে ‘টোটাল ফুটবল’। ক্লাব পর্যায়েও তখন ডাচ ক্লাব আয়াক্স আমস্টার্ডামের স্বর্ণযুগ, সেটি এই ক্রুইফ-মিশেলসের কল্যাণেই। ১৯৭৪ বিশ্বকাপে সবার চোখে তাই ডাচরাই ছিল বিশ্বকাপের যোগ্য দাবিদার। কিন্তু ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, গার্ড মুলারদের জার্মানির বিপক্ষে সেবার ২-১ গোলে হেরে উড়তে থাকা ডাচদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
১৯৭৮, আর্জেন্টিনা ৩-১ হল্যান্ড
ডাচরা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জিততে ব্যর্থ হয় ১৯৭৮ সালে। বিতর্কিত এ বিশ্বকাপ আসরে অংশ নেননি নেদারল্যান্ডসের সে সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার ইয়োহান ক্রুইফ। যেটা তাদের অর্ধেক দুর্বল করে দেয়। এরপর মাঠ ও মাঠের অনেক বিতর্কের মাঝে সেবার স্বাগতিক আর্জেন্টিনা ৩-১ গোলের ব্যবধানে ডাচদের হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে নেয়।
২০১০, স্পেন ১-০ হল্যান্ড
প্রথমবারের মতো আফ্রিকা মহাদেশে বসেছিল বিশ্বকাপ। দক্ষিণ আফ্রিকার এই প্রতিযোগিতাটি ছিল বিশ্বকাপের ১৯তম আসর। যে আসরে আরেকবার ব্যর্থ হয় নেদারল্যান্ডস। রবিন ভ্যান পার্সি, আর্জেন রোবেনরা এবার হারেন জাভি-ইনিয়েস্তার স্পেনের বিপক্ষে। অবশ্য ম্যাচের ভাগ্য বদলে গিয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ১০৯ মিনিটে জোড়া হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন জন হেতিনগা। আর তাতে সুযোগ বুঝে ১০ জনের জালে গোল দিয়ে দেশকে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভাসান ইনিয়েস্তা।
ডাচদের পরে সর্বোচ্চ দুটি করে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেও ব্যর্থ চেকোস্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি। তারা অবশ্য আধুনিক ফুটবলে দ্যুতি ছড়াতে পারেনি। ১৯৩৪ থেকে ১৯৬২ সময়ের মধ্যে দেশদুটি দুবার করে চারবার ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনাল খেললেও শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি।
১৯৩৪, ইতালি ২-১ চেকোস্লোভাকিয়া
চেকোস্লোভাকিয়া হারার পেছনে অনেকে দায়ী করে তখনকার সময় ইতালির ফ্যাসিজমকে। ঘরের মাঠে কলঙ্কিত সেই বিশ্বকাপে চেকোস্লোভাকিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নও হয় ইতালি। অভিযোগ আছে, ওই আসরের সব কটি ম্যাচের রেফারি বাছাই করে দিত ইতালি সরকার। ফুটবল ইতিহাসে দেখা যায়, ইতালির ম্যাচের আগের দিন রেফারিদের সঙ্গে দেখা করতেন মুসোলিনি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তখনই, যখন ফাইনালের আগের দিন ওইসব রেফারিকে বাসায় ডেকে বিশেষ আপ্যায়ন করান তিনি। শুধু তাই নয়, রেফারিদের উপঢৌকনের ব্যবস্থাও করতেন মুসোলিনি।
১৯৬২, ব্রাজিল ৩-১ চেকোস্লোভাকিয়া
পেলে বিহীন ব্রাজিলকে পেয়েও সেবার বিশ্বকাপ জিততে পারেনি চেকোস্লোভাকিয়া। ১৯৬২ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত ফাইনালে ১৫ মিনিটের মাথায়ই পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল। অবশ্য ১৭ মিনিটেই আমারিলদোর গোলে সমতায় ফেরে তারা। ১-১ গোলের সমতা নিয়েই বিশ্রামে যায় উভয় দল। বিরতির পরের গল্পটা কেবলই ব্রাজিলের। ৬৯ মিনিটে জিতোর গোলে লিড নেয় সাম্বার দেশ। ৭৮ মিনিট ভাভার গোলে চেকোস্লোভাকিয়ার পরাজয়ের ষোলোকলা পূর্ণ হয়।
১৯৩৮, ইতালি ৪-২ হাঙ্গেরি
ফ্রান্সে ১৯৩৮ সালের তৃতীয় বিশ্বকাপটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে। হাঙ্গেরিকে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে ইতালি। দ্বিতীয় বিশ্বকাপের মতো এ আসরে ইতালির বিপক্ষে নানা অভিযোগ তোলা হয়।
১৯৫৪, জার্মানি ৩-২ হাঙ্গেরি
ফেরেঙ্ক পুসকাস, স্যান্দর ককসিস, ন্যান্দর হিদেকুটি, জোলতান জিবোর—এই নামগুলো দিয়ে যে দলের আক্রমণভাগ গড়া, সে দলের সঙ্গে খেলাটা কতটা কঠিন, সেটা সবাই জানে। ১৯৫৪ বিশ্বকাপে হাঙ্গেরি যখন এই খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দল বিশ্বকাপে নিয়ে এলো, তখন বেশির ভাগ মানুষই বলেছিল, পুসকাসের হাঙ্গেরি বিশ্বকাপ না জিতে পারেই না। কিন্তু ঘটল ঠিক উল্টোটা। হাঙ্গেরি ফাইনালে উঠলেও তারা পশ্চিম জার্মানির কাছে ৩-২ গোলে হেরে যায়। প্রথমে ২ গোলে এগিয়ে থেকেও ম্যাচটা হাঙ্গেরি কীভাবে হারল, সেটি আজও এক রহস্য। অথচ গ্রুপপর্বেই হাঙ্গেরি জার্মানিকে হারিয়েছিল ৮-৩ গোলে!
এই তিন দেশ ছাড়াও হতভাগার কাতারে আছে সুইডেন ও ক্রোয়েশিয়া। ১৯৫৮ সালে সুইডেন সে সময়ের অন্যতম শক্তিশালী পেলের ব্রাজিলের বিপক্ষে হেরেছিল ৫-২ গোলের ব্যবধানে। আর ক্রোশিয়া গত রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে ৪-২ গোলে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করেছে। কিলিয়ান এমবাপ্পে, গ্রিজম্যান, পগবাদের অধীন ফরাসিরা রাশিয়া বিশ্বকাপে বেশ শক্তিশালী দলই গঠন করেছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।