জুমবাংলা ডেস্ক : মানুষের মধ্যে মৃত্যু, পৃথিবীতে মানবজাতির অস্তিত্ব, ধরনীর শেষ প্রলয়ের দিন, মহাবিশ্ব ও সময়ের ব্যাপ্তি এসব অজানা-অস্পষ্ট বিষয় নিয়ে অদম্য আগ্রহ রয়েছে। এমন আগ্রহকে পুঁজি করে শত শত বছর ধরে ফায়দা লুটেছেন অনেকে। এদের কেউ কেউ ধর্মের মোড়কে, আধ্যাত্মিকতার ছলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন ‘পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে’, ‘এই সালের এত তারিখে, ডুমস ডে/ কেয়ামত/ অ্যাপোক্যালিপ্স ঘনিয়ে এসেছে’, ‘মানবজাতি পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যাবে ঠিক এত তারিখে’, ‘গোটা পৃথিবী তছনছ হয়ে যাবে’। শত শত বছর আগে থেকেই বলা হচ্ছে পৃথিবী খুব দ্রুতই ধ্বংস হয়ে যাবে, তবে এমন তাড়না সৃষ্টিকারী ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রামাণিত হয়েছে।
প্রাচীনকাল থেকেই কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী শিগগিরই পৃথিবীর ‘শেষ হয়ে যাবে’ বলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রলয়ঙ্ককরী দুর্যোগ, মহামারি, যুদ্ধ-সংঘাত এবং অন্যান্য সামাজিক অস্থিরতা মানুষকে এই ধরনের গুজবে বিশ্বাস করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তবে দেখা গেছে সেই তারিখ পার হয়ে পৃথিবী ঠিকই বহাল তবিয়তে নিজস্ব কক্ষপথে ঘণ্টায় প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার গতিতে পরাক্রমশালী সূর্যকে ঘিরে নিজস্ব কক্ষপথে আবর্তিত হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, এটি আরও ৫০০ কোটি বছর অনেকটা একইভাবে আবর্তিত হতে পারে। নিচে কয়েকটি অপপ্রচারের উদাহরণ দেখে নেয়া যাক যেগুলো বানোয়াট ছিল।
প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ-ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণী: প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ বাইবেল, কুরআন এবং হিন্দুধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থে ‘শেষ দিন’ বা পৃথিবীর ধ্বংস নিয়ে চরম ভয়ার্ত ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। পৃথিবী এবং মহাবিশ্ব একদিন ধ্বংস হবে। এটা নিয়ে জ্যেতির্বিজ্ঞানীসহ কোন ধর্মীয় গুরুর মধ্যে বিতর্ক বা সামান্যতম দ্বিধা বা সন্দেহ নেই। কোন মানুষের মধ্যেই এই নিয়ে অবিশ্বাস নেই। তবে বার বারই দেখা গেছে একাধিক গোষ্ঠী দ্রুতই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। খ্রিস্টধর্মের বাইবেলে ‘রেভেলেশন’ অংশে বলা হয়েছে ‘অ্যাপোক্যালিপ্স’ বা পৃথিবীর শেষ সময়ের কথা, যেটি নিয়ে অনেক মানুষ বিশ্বাস করত যে এটি যেকোনো সময় হতে পারে।
৬৬৬ সালের ভবিষ্যদ্বাণী: খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডারের ৬৬৬ সালটিকে বিশেষভাবে ‘অ্যাপোক্যালিপ্টিক ইয়ার বা ধ্বংসের বছর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ৬৬৬ সংখ্যা খ্রিস্টধর্মে ‘অ্যান্টি-ক্রাইস্ট’ বা ‘শয়তান’ এর প্রতীক বলে মনে করা হতো। সেই সময়ে অনেকেই মনে করেছিলেন সেই বছরই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তবে স্বাভাবিকভাবেই বছরটি পার হয়ে গেলেও পৃথিবী স্বাবলিলভাবে টিকে আছে ১৪ শত বছরের বেশি।
মধ্যযুগে ভয়াবহ প্লেগ মহামারি: ১৩৪৭ থেকে ১৩৫১ সাল পর্যন্ত মাত্র চার বছরব্যাপী ইউরোপে প্লেগ মহামারি বা ‘ব্ল্যাক ডেথ’ চলাকালে সাড়ে ৭ কোটি থেকে ১০ কোটির বেশি মানুষ প্রাণ হারান। সেই সময় বেঁচে যাওয়া অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে মানবজাতিসহ পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে এবং এটি মানুষের সীমাহীন পাপের ফলে সৃষ্টিকর্তার ক্রোধের প্রকাশ। অনেক ধর্মীয় গোষ্ঠী সেই সময় এটিকে পৃথিবী ধ্বংসের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বলে প্রচার করেছিলেন। তবে সেই সময়কার বেঁচে যাওয়া মানুষদের জীবন সংগ্রামের ফলেই সেই ক্রান্তিকাল পার হয়ে এখন পৃথিবীর জনসংখ্যা ছয় থেকে সাতগুণ বেড়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ব্ল্যাক ডেথের প্রাদুর্ভাবের মূল কারণ ছিল ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস নামের প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া যা মূলত ইঁদুর ও মাছির মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছিল। এটি শুধু ইউরোপে নয়, এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার কিছু অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। এটিকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী মহামারির একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৬৬৬ সালের গুজব: ১৬৬৬ সালের শুরুতে লন্ডনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডকে ঘিরে খ্রিস্টধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন সেটিই পৃথিবীর ধ্বংসের বছর হতে পারে। ওই সময় বহু মানুষ ভেবেছিল এটাই হয়তো শেষ বছর, কিন্তু সেই বছরও পার হয়ে যায় এবং পৃথিবী টিকে আছে।
মিলেরাইট আন্দোলন: ১৯ শতকের প্রথম দিকে আমেরিকার ধর্মীয় নেতা উইলিয়াম মিলার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ১৮৪৪ সালে ঠিকই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তার কট্টর অনুসারীরা এ বিষয়ে এতটাই বিশ্বাসী ছিলেন যে, তারা তাদের সব সম্পত্তি বিক্রি করে অপেক্ষা করছিলেন সেই দিনটির জন্য। এই ঘটনাটি ইতিহাসে ‘গ্রেট ডিসঅ্যাপয়েন্টমেন্ট’ নামে পরিচিত। সেই সময়ও কোনো ধরনের ‘মহাপ্রলয়’ বা ‘ডুমস ডে’ হয়নি।
উল্কাপাত নিয়ে আতঙ্ক: ১৯১০ সালে হ্যালির ধূমকেতু পৃথিবীর পাশ ঘেঁষে অতিক্রম করবে বলে জানা যায়। অনেকেই ভেবেছিল এর ভয়াবহ বিষাক্ত গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকেও বিষাক্ত করে তুলবে এবং পৃথিবীসহ মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। এর ফলে আতঙ্কিত মানুষ বাঁচার জন্য বিশেষ ‘কমেট প্রটেকশন মাস্ক’ কিনতে শুরু করেন এবং অনেকেই জীবন-মরণ আতঙ্কে ভুগেছিল। তবে ধূমকেতুটি কোন রকমের নেতিবাচক প্রভাব ছাড়াই পৃথিবীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যায়।
মায়ান ক্যালেন্ডার এবং ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর: ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর তারিখে পৃথিবী ধ্বংসের একটি বহুল আলোচিত ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। মায়ান ক্যালেন্ডারের চক্র সেইদিন শেষ হওয়ার কথা ছিল এবং এটিকে পৃথিবী ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে গুজব ছড়ান অনেক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বেচে দিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেন। এমনকি বিশ্বের লাখো তরুণ-তরুণী শেষ মুহূর্তে গণবিয়ের আয়োজন করেন। পরে সত্য প্রকাশ পায় যে, মায়ান ক্যালেন্ডারের সেই চক্রের শেষ হয়ে যাওয়ার মানে পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়া নয়, বরং নতুন আরেকটি চক্রের শুভসূচনা মাত্র।
হারল্ড ক্যাম্পিং ও ২০১১ সালের ‘র্যাপচার’: আমেরিকার খ্রিস্টধর্মীয় প্রচারক হারল্ড ক্যাম্পিং ২০১১ সালের ২১ মে তারিখে ‘র্যাপচার’ (মসিহ-এর আগমন ও পৃথিবীর শেষ সময়) ঘটবে বলে ঘোষণা দেন। তার প্রচারণা এতটাই বিশ্বাসযোগ্য ও প্রভাবশালী ছিল যে, অনেক মানুষ ভয় পেয়ে তাদের সম্পত্তি বেচে দেন এবং কেউ কেউ নিজেদেরকে শেষ যাত্রার জন্য প্রস্তুত করতে শুদ্ধ আচরণ করতে শুরু করেন। যদিও সেইদিন কোনো ধরনের অঘটই ঘটেনি। শুধুমাত্র ভবিষ্যদ্বাণীর ফলে আতঙ্কিত মানুষের আতঙ্কই উবে যায়।
ওয়াই-টু-কে আতঙ্ক এবং ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি: ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে ওয়াই-টু-কে বা ‘মিলেনিয়াম বাগ’ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল যে, কম্পিউটারের তারিখ-প্রণালী সমস্যার কারণে বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়বে এবং এতে গোটা বিশ্বে লেনদেনসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট তীব্রতর হবে। বহু মানুষ ২০০০ সাল শুরুর আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস-খাদ্য ও ওষুধ কিনে বাসায় মজুদ করে রেখেছিলেন। তবে সেদিনও কোনো অঘটন ঘটেনি। তবে ওই আতঙ্কের রেশ বিশ্ববাসীকে ছাপিয়ে গিয়েছিল।
নিবিরু গ্রহের মিথ: নিবিরু নামে একটি কাল্পনিক গ্রহের কথা ঢালাওভাবে প্রচার করা হয় যা যেকোন সময় পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষ হবে এবং পৃথিবী মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে। বিভিন্ন সময় এই গ্রহের সংঘর্ষের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে এবং এতে মানুষ আতঙ্কিত হয়েছে। এ ধারণাটি কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়াই শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে ছড়ানো হয়।
নস্ট্রাদামুসের ভবিষ্যদ্বাণী: প্রখ্যাত ভবিষ্যদ্বক্তা বা ওরাকল নস্ট্রাদামুস তার কবিতায় শিগগিরই পৃথিবীর ধ্বংস নিয়ে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। তবে তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো খুব অস্পষ্ট এবং তাদের বার্তা নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে, তবুও বেশ কিছু মানুষ বিভিন্ন বছরকে শেষের বছর বলে প্রচার করেছেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল।
পৃথিবী ও মানবজাতি ধ্বংসের তারিখ নিয়ে এমন ভীতি এবং আতঙ্ক বেশ অনেকবার ছড়ানো হয়েছে। বানোয়াট এবং গুজব হওয়া সত্ত্বেও এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী প্রায়শই বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে যায়। অধিকাংশ ধর্মের জন্ম গত ১০ হাজার বছরের মধ্যে হয়েছে। এরপর শত শত বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উৎস থেকে কিছু ‘বিশেষ তারিখ’ ঘোষিত হয়েছিল, যেগুলোতে বলা হয়েছে পৃথিবী পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। এসব তারিখের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকলেও গণ-ভীতির কারণে অনেক মানুষ এতে প্রবলভাবে বিশ্বাস করেছেন। এমনকি এসব আতঙ্কের কারণে গণবিবাহ, সম্পদ বিক্রি, বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়া, ধর্মীয় গোষ্ঠীতে যোগদানসহ নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সাধারণ মানুষ।
এসব গুজবে পাত্তা না দিয়ে দেখে নেয়া যাক পৃথিবীর আয়ুষ্কাল আনুমানিক কোটি বছর। জেনে নেয়া যাক পৃথিবী এখন কী তার মধ্যবয়সে অবস্থান করছে নাকি শেষের বেলায় পৌঁছে গেছে।
পৃথিবীর সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল: পৃথিবীর আয়ুষ্কাল বা স্থায়িত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীদের যেসব ধারণা রয়েছে তার অধিকাংশই কিছু ভৌত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের তথ্যের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে আমাদের সৌরজগতের প্রাণকেন্দ্র সূর্যের আয়ুষ্কাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ সূর্যের জীবনচক্রের ওপরই পৃথিবীর অস্তিত্ব পুরোপুরি নির্ভরশীল।
মহাকাশে সূর্য একটি উল্লেখযোগ্য ধরণের নক্ষত্র যাকে মেইন সিকুয়েন্স স্টার বলা হয়ে থাকে। এই ধরনের নক্ষত্রের আয়ুষ্কাল আনুমানিক ১০ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি বছর। সূর্য এই সুদীর্ঘ জীবদ্দশায় প্রায় অর্ধেক বা ৪৬০ কোটি (৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন) বছর পার করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, সূর্যের আয়ুষ্কাল আরও প্রায় ৫ বিলিয়নের (৫০০ কোটি) বেশি বছর বাকি আছে। সেই হিসেবে সৌরজগতের অন্যতম গ্রহ হিসেবে ধরে নেয়া যায় এই ৫০০ কোটি পৃথিবীও টিকে থাকবে।
তবে ধারণা করা হয় যে, আর ১-২ বিলিয়ন (১০০-২০০ কোটি) বছর পর সূর্যের তেজস্ত্রিয়তা ও উত্তাপ-উজ্জ্বলতা ব্যাপকমাত্রায় বাড়তে থাকবে। তখন পৃথিবীর তাপমাত্রা এমনভাবে বেড়ে যাবে যে, এটি উদ্ভিদ ও মানুষসহ অন্যান্য প্রাণির জন্য একেবারে অনুপযোগী ও অবাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। তীব্র উত্তাপে জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলেই বাষ্পীভূত হয়ে যাবে এবং সাগর ও নদী প্রায় শুকিয়ে যাবে। এরপরের ৪ বিলিয়ন (৪০০ কোটি) বছর, সূর্য ‘লাল দানব বা রেড জায়ান্ট’-এর পর্যায়ে চলে যাবে, যার ফলে পৃথিবীও হয়তো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
এই সব বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, পৃথিবী এখন মধ্যবয়স পার করছে। যদিও জীবনধারণের উপযোগী সময় হয়তো আরও ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) বছরের মতো থাকতে পারে, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে জীবনধারণ কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তবে পৃথিবীতে মানবজাতির অস্তিত্ব আর কত কোটি বছর থাকবে তা পরিবেশগত পরিবর্তনের ওপরেও নির্ভর করে, যা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ-যুদ্ধের কারণে পরিবর্তিত হতে পারে।
ভবিষ্যদ্বাণীর নেপথ্যে কী স্বার্থ: ‘শিগগিরই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, ‘এটাই শেষ দিন’ এমন সব ভবিষ্যদ্বাণীর পেছনে সাধারণত কয়েকটি উদ্দেশ্য থাকে। কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী মনোযোগ আকর্ষণ করতে, আর কিছু মানুষ বিশ্ববাসীর আতঙ্ক ও ভয়কে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধির অপচেষ্টা করেন। কিছু ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব বিশ্বাস ও পরিচিতিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে এমন প্রচারণার আশ্রয় নেন। সেই সঙ্গে কিছু ব্যক্তি ও সংস্থা ভবিষ্যদ্বাণীর ভয়াবহতাকে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জনের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে।
পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ধারণা প্রায় সব ধর্মের মানুষের বিশ্বাসের মূলভিত্তি। ধর্মীয় ভাব-ধারনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে এই তত্ত্ব। বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, একটি চূড়ান্ত সময় বা ‘ডুমস ডে’ আসবে, যেদিন পৃথিবী এবং এর মধ্যকার জীবন্ত সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তখন মানবজাতির ভালো এবং মন্দ কাজের হিসাব-নিকাশ হবে। এটি নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে মানুষের এই সরল বিশ্বাসকে নিয়ে যারা শত শত বছর ধরে ফায়দা লুটেছেন তাদের নিয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি। এই বিশ্বাসকে সুচারুভাবে প্রচার করার পেছনে ঐতিহাসিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক কারণও রয়েছে।
ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর মাধ্যমে অনেকে সাধারণ মানুষের গভীরে সহজে এক ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পায়তারা করে। ‘কেয়ামত’ বা ‘ডুমস ডে’ এর মতো ধারণা মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। এটি প্রায়ই একটি চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশসহ পরকালীন জীবনের ধারণার সঙ্গে জড়িত, যা মানুষকে বর্তমান জীবনে সৎ, ন্যায়পরায়ণ, এবং দায়িত্বশীল আচরণ করতে উৎসাহিত করে। কিয়ামতের এই ধারণা ও ভীতি মানুষের মনকে জাগ্রত করে তুলতে সহায়ক হতে পারে, বিশেষ করে পথভ্রষ্টদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে।
বিশেষ কিছু ধর্মীয় নেতা বা গোষ্ঠী সাধারণ মানুষের আচরণ ও মনোভাব নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই ধারণাগুলোকে ব্যবহার করতে চান। এক ধরনের সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বা শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ‘শেষ দিন বা কেয়ামতের’ ভয় কাজ করে। এটি মানুষকে তাদের ধর্মীয় বিধি-নিষেধ মেনে চলার তাগিদ দেয়।
অনেক ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতারা বাস্তবিকভাবেই এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে মানুষকে তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন করতে চান। তারা মনে করতে পারেন যে, মানুষ যখন তার মৃত্যুর কথা ভাবে বা পৃথিবীর ধ্বংসের কথা ভাববে, তখন সে নিজের আচরণ পরিবর্তন ও সংশোধনের পথে হাঁটবে।
এদিকে, কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠী সত্যিই মানুষকে অযথা ভয় দেখিয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার অপচেষ্টা করেন। সাধারণ মানুষের মনোযোগ পেতে এবং তাদের সমর্থন পাওয়ার জন্য এটি কখনো কখনো একটি কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভবিষ্যতের অনেক ঘটনা পূর্বানুমান করা প্রায় অসম্ভব, তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট তারিখের ওপর নির্ভর করে না। পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবর্তন, ধ্বংস বা মহাজাগতিক ঘটনার কারণে নির্দিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। যেমন প্রলয়ংকরী দুর্যোগ কিংবা পৃথিবী গ্রহাণুর আঘাতের মতো মহাদুর্যোগের একটি সম্ভাব্য তালিকা থাকে, তবে এগুলোর তারিখ সুনির্দিষ্ট করে বলা প্রায় অসম্ভব।
এমন ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বারবার ভুল প্রমাণিত হলেও মানুষজাতি আতঙ্ক ও কৌতূহল থেকে এসব বিষয়ে আকৃষ্ট হয় এবং বোকা বনে যায়।
প্রথমবারের মত 5 স্মার্টফোন নিয়ে আসছে Snapdragon 8 Gen 4 চিপসেট
পৃথিবীতে আধুনিক মানুষের যাত্রা: পৃথিবীতে আধুনিক মানুষের (হোমো স্যাপিয়েন্স) বসবাস এক থেকে তিন লাখ বছর আগে শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। জীবাশ্ম এবং ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে, আধুনিক মানুষের যাত্রা শুরু হয় আফ্রিকায় প্রায় দুই লাখ বছর আগে। এরপর ধীরে ধীরে এই আধুনিক মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং বসতি শুরু করে। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের ইতিহাস প্রায় সাড়ে তিন থেকে ৪ বিলিয়ন (৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি) বছর আগের। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাণের অস্তিত্বের নিদর্শন ছিল মাইক্রোঅর্গানিজম বা এককোষী ব্যাকটেরিয়া। এসব সমুদ্রের গভীরে বা উষ্ণ জলধারার আশপাশে জন্ম নিতো। তাই পৃথিবী ধ্বংসের ঘটনাকে প্রবলভাবে বিশ্বাস করলেও এই নিয়ে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর অপপ্রচার এবং গুজবকে উড়িয়ে দিতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।