জুমবাংলা ডেস্ক : মৌসুমি ফল উৎপাদনে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সুখ্যাতি দীর্ঘকালের। এসব জেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ে উৎপাদিত ফল বাজারজাত করা হয় সারা দেশে। আম, কাঁঠাল ও লিচুর চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষিকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করেছে আনারস। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, দেশে উৎপাদিত আনারসের সিংহভাগই চাষ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। বছরে গড়ে দেড় লাখ টন আনারস উৎপাদন হয় পার্বত্য তিন জেলায়। কৃষক ও বাগান মালিকরা বলছেন, উৎপাদিত আনারসের ন্যায্যমূল্য ও বাজারজাতের ব্যবস্থা, সার ও কীটনাশকের মূল্য কমলে চাষীরা আরো লাভবান হবেন। পাশাপাশি নতুন করে বাগান তৈরিতে আগ্রহ বাড়বে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো ঢালু হওয়ার কারণে আনারস চাষের জন্য বেশি উপযোগী। ঢাকা-চট্টগ্রামে এসব আনারসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার এবং রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব আনারস সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্থানীয় চাষীদের অভিযোগ, তারা চাহিদা অনুযায়ী ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপিও সার কিনতে পারছেন না। আবার সার পেলেও সেটি ন্যায্যমূল্যের চেয়ে বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদনে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। বাগান বিক্রি করে বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় সার ডিলাররা জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে বোরো ধান আবাদের জন্য তারা সার বরাদ্দ পান। আনারস মৌসুমের জন্য তারা আলাদাভাবে সার বরাদ্দ পান না। ফলে চট্টগ্রাম থেকে সার কিনে এনে বিক্রি করলে দাম কিছুটা বেড়ে যায়। এজন্য কৃষি বিভাগের উদ্যোগী ভূমিকা প্রয়োজন।
পাহাড়ে মূলত দুই জাতের আনারস চাষাবাদ হয়। একটি জায়ান্ট কিউ, অন্যটি হানিকুইন। মূলত বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি ও থানচি উপজেলায় জায়ান্ট কিউ এবং রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর ও সদর উপজেলায় হানিকুইন চাষ হয়। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, মহালছড়িসহ অন্য উপজেলায় দুই জাতের আনারসই উৎপাদন করেন চাষীরা।
নানিয়ারচর উপজেলার হাতিমারা এলাকার আনারসচাষী সজীব চাকমা বলেন, আমরা প্রতি বছরই আনারস চাষ করি। মূলত অক্টোবর-নভেম্বর আনারসের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। কানিপ্রতি আট হাজার চারা লাগাতে পারি। এ বছর বাড়তি লাভের আশায় আনারস চাষ করেছি।
উপজেলা মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম বলেন, নানিয়ারচরকে একসময় বলা হতো আনারসের রাজধানী। এখন নানিয়ারচর ছাড়াও অন্যান্য উপজেলায় আনারসের চাষ হচ্ছে। নানিয়ারচরের অনেক কৃষকই আনারস চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আবার অনেকেই কৃষকের কাছ থেকে বাগান কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামের পাইকারি ফল ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করছেন।
চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গীবাজার থেকে আসা পাইকারি ফল ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, এখন যে আনারস পাওয়া যাচ্ছে এগুলো মূলত আগাম চাষের আনারস। মৌসুমের ফলন পাওয়া যায় জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিকে। আগাম আনারস হওয়ায় এখন দাম অনেকটাই বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের ফল আবাদ ও উৎপাদনের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান—এ তিন পার্বত্য জেলায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ হাজার ৬৪৭ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৮৮ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯২৪, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭৭, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ হাজার ৭৬৯ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৯, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৪ টন আনারস উৎপাদন হয়েছে।
ডিএই রাঙ্গামাটি কার্যালয়ের উপপরিচালক কৃষিবিদ তপন কুমার পাল জানান, পাহাড়ে দুই জাতের আনারস চাষাবাদ হয়। রাঙ্গামাটিতে বেশির ভাগই হানিকুইন জাতের আনারস চাষ হয়। জেলার নানিয়ারচর ও সদর উপজেলায় আনারসের আবাদ করা হয়। এক্ষেত্রে নানিয়ারচর উপজেলা এগিয়ে। অন্য উপজেলায় চাষ হলেও বেশি ফলন হয় না।
ডিএই রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম মৌসুমি ফল উৎপাদনে বরাবরই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। বাংলাদেশে যে পরিমাণ আনারস চাষ হচ্ছে, তার সিংহভাগই হয় পার্বত্য তিন জেলায়। কৃষক ও বাগান মালিকরা আনারস চাষে সুফলভোগী হওয়ার কারণে উদ্যোক্তা ও উৎপাদন দুটিই বাড়ছে। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা কৃষকদের সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিয়ে পাশে থাকছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।