জুমবাংলা ডেস্ক : জামালপুর সদর উপজেলার তুলসীপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠে দেশ স্বাধীনের পর থেকেই বসছে বিরাট আকারের ঘোড়ার হাট। সপ্তাহের বৃহস্পতিবারের এ হাটে ঘোড়া আমদানি হয় দেশি, মিশ্র ও তাজি জাতের শতাধিক ঘোড়া। ঘোড়ার পাশাপাশি এখানে কেনাবেচা হয়ে থাকে ঘোড়ার গাড়ি, লাগামসহ ঘোড়ার নানা সরঞ্জাম। ঐতিহ্যবাহী হাটটি জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে রশিদপুর ইউনিয়নে। এলাকাবাসী জানান, দেশের সর্ববৃহত্ ঘোড়ার হাট এটি।
জানা যায়, আগেকার আমলে রাজা-বাদশাদের যুদ্ধ ক্ষেত্রে ঘোড়া ব্যবহার ছাড়াও যাতায়াতের জন্য অন্যতম বাহন হিসেবে ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিক যুগে মেশিনের যানবাহন, যাতায়াতের পাকা রাস্তা হওয়ায় ঘোড়ার চাহিদা কমে গেছে।
আধুনিক বিশ্বে দ্রুতগামী মেশিনের যানবাহন থাকা সত্ত্বেও কিছুসংখ্যক মানুষ শখের বশবর্তী হয়ে এখনো ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ির প্রতি দারুণ আকর্ষণ অনুভব করে। আবার অনেকেই ‘পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য রক্ষায় ঘোড়া পালন ও ঘোড়া ব্যবহার করে থাকেন। তাই গত ৫০ বছর ধরে তুলসীপুর হাটে ঘোড়া বেচাকেনার জন্য ছুটে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা।
হাটের ইজারাদারের দাবি, দেশের সবচেয়ে পুরোনো এবং বড় এই হাট। এ হাটে শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলের মধুপুর, ধনবাড়ী, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রামের রাজীবপুর, রৌমারি, বগুড়া কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘোড়া কেনাবেচার জন্য ক্রেতা-বিক্রেতাসহ পাইকাররা ছুটে আসেন। এ হাটে বেশি পাওয়া যায় মাদি ঘোড়া, তাজিয়া, টাট্টু, খাসি, বাহাদুর, রাজা-রানি, পারলে ঠেকাও, বিজলি ও কিরণমালা।
আমরা সবাই জানি, ঘোড়ার নাম টাট্টু, তাজিয়া। তবে এর নাম যদি হয় কিরণমালা, বাহাদুর, রাজা-রানি! আপনি একটু কৌতুকবোধ করতেই পারেন। আবার ঘোড়ার নাম যদি হয়, পারলে ঠেকাও, বিজলি কিংবা খাসি, তাহলে কিছুটা তাজ্জব লাগতে পারে। কিন্তু না, এসব ঘোড়া কমপক্ষে ৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি হয়।
এসব ঘোড়ার ক্রেতা হাট থেকে ট্রায়াল দিয়ে পছন্দের ঘোড়াটি কিনে নেন। বিশেষ করে তরুণ ঘোড়সওয়াররা ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য শখের বশবর্তী হয়ে আকর্ষণীয় তাজি ঘোড়া চড়া দামে কিনে থাকেন। হাটে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় গাড়ির ঘোড়া। গাড়ির ঘোড়ার শক্তি পরীক্ষা করার জন্য রয়েছে রিমান্ডের ব্যবস্থা। রিমান্ডে যে ঘোড়া সবচেয়ে বেশি শক্তি দেখাবে, সেটি সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়। ঘোড়ার রিমান্ডের জন্য হাটের ভেতর তৈরি করা আছে কর্দমাক্ত পানির রাস্তা, বালুর রাস্তা, উঁচু-নিচু খাদ। সেই রাস্তায় ১০/১৫ জন মানুষ উঠিয়ে ঘোড়ার গাড়ি টানা হয়। শক্তি পরীক্ষার জন্য ঘোড়াকে উঁচু পাড় বেয়ে ওঠানামা করানো হয়ে থাকে। যে ঘোড়া বালু ও পানির মধ্যে গাড়ি টেনে নিতে সক্ষম হয়, সেটির শক্তি বেশি বলে বিবেচিত হয়। সেই ঘোড়া বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, তুলসীপুর কলেজ মাঠে বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলছে ঘোড়া বেচাবিক্রি। ক্রেতা-বিক্রেতার দরদামে সরগরম হাট। পুরোনো মালিকের কাছ থেকে নতুন মালিকের কাছে যেন যেতে চাইছে না ঘোড়া। অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাতবদল হচ্ছে রংবেরঙের ঘোড়াগুলো।
মুক্তাগাছা উপজেলার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ, মহিউদ্দিন বলেন, ‘ছোট থেকেই ঘোড়া পালন করে আসছি। ঘোড়া দৌড়ানো আমার শখ। অতি সম্প্রতি আমার ঘোড়াটি হঠাত্ মরে যায়। তাই আরেকটি ঘোড়া কিনতে এসেছি।’ তারা আরো বলেন, ‘এখানে বহু জাতের ঘোড়া পাওয়া যায়। তাই দেখেশুনে নিজের সাধ্যের মধ্যে ভালো ঘোড়া বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’ সরিষাবাড়ির বাসিন্দা নান্নু শেখ বলেন, ‘আমি ঘোড়া দিয়ে গাড়ি টানি। ঘোড়ার উপার্জনে আমার সংসার চলে। আমার আগের ঘোড়াটা ভালোভাবে গাড়ি টানতে পারছে না। তাই ঘোড়াটি বিক্রি করে আরো শক্তিশালী ঘোড়া কিনতে এসেছি।’ সিলেট সুনামগঞ্জ থেকে আসা মো. রমেজ আলী বলেন, ‘আমি ছয়টা ঘোড়া নিয়ে এসেছি বিক্রি করতে।’
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর উপজেলা থেকে এসেছেন সৌকত আলী বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, এখানে দাম সস্তা বলেই এসেছি। কিন্তু এখানে থাকা-খাওয়া, এমনকি পয়োনিষ্কাশনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। যদি সুব্যবস্থা করা হতো তাহলে মনে হয় আরো লোকজন সারা দেশ থেকে আসা-যাওয়া করতে পারত। তিনি আরো বলেন, হাট কমিটি থেকে যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা খুবই নগণ্য, অপ্রতুল। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দাবি—‘ঘোড়ার হাটে নিরাপত্তা প্রয়োজন। যেহেতু ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে নগদ টাকাপয়সা থাকে, তাই নিরাপত্তাহীনতায় যেন ভুগতে না হয়।
জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরান বলেন, ঘোড়ার হাটকে ঘিরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী দিনে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম গ্রহণ করে পর্যায়ক্রমে সমস্যার সমাধান করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।