জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের সীমানা পেরোলেই ফ্ল্যাট, জমি, আসবাব, ব্যাংক ব্যাল্যান্সসহ যাবতীয় সম্পদের তথ্য আয়কর রিটার্নের সম্পদ বিবরণীতে জানানো বাধ্যতামূলক করে ‘আয়কর বিল-২০২৩’ সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। আয়কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা কমানোর পাশাপাশি বিলে করদাতাদের রিটার্ন জমা আগের তুলনায় সহজ করার প্রস্তাব রয়েছে এতে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত ‘আয়কর বিল-২০২৩’ তোলেন। পরে ৫ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
প্রস্তাবিত আইনে করবর্ষের শেষ তারিখে ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদ থাকলে, বছরের কোনো সময়ে চিকিৎসা বা ধর্মীয় উদ্দেশ্য ব্যতীত ব্যক্তিগতভাবে বিদেশ ভ্রমণ করলে সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়া (রিটার্ন) বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে।
বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তবে তার বিরোধিতা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
ফখরুল ইমাম নতুন আয়কর আইনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন পাসের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এতে বিদেশে অর্থপাচার বৃদ্ধির পাশাপাশি খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। নতুন আয়কর কার্যকর হলে একই ঘটনা বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।
এরপর অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, আয়কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এই বিলটি আনা হয়েছে। বিলটি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। এরপরও সংসদীয় কমিটি ও সংসদে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। বিলটি পাসের আগে সংযোজন ও বিয়োজনের মাধ্যমে যুগোপযোগী করা যাবে।
বিলে বলা হয়েছে দেশের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্যাক্স রিটার্নসহ তাদের সম্পদ ও দায়ের বিবরণী দাখিল করতে হবে। করদাতাদের ট্যাক্স রিটার্নে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে তাদের সম্পদ ও দায় উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো করদাতা যদি তার রিটার্নে বিদেশে থাকা সম্পদ প্রদর্শন না করেন, আর সেই সম্পদের খোঁজ যদি কর কর্মকর্তারা পান এবং ওই সম্পদ অর্জনের উৎস ও অন্যান্য বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারেন তবে কর কর্মকর্তারা জরিমানা করতে পারবেন। বিদেশে থাকা সম্পত্তির ন্যায্য বাজারমূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা আদায়ও করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিলে আরো বলা হয়েছে, দেশে অবস্থানরত বিদেশীদের বাংলাদেশে তাদের সম্পদ ও দায় ট্যাক্স রিটার্নে দেখাতে হবে। স্বামী বা স্ত্রী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের যদি টিন নম্বর না থাকে, সেক্ষেত্রে পরিবারের করদাতাকে তাদের সম্পদ ও দায়ের বিবরণী দাখিল করতে হবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন আয়কর আইন ১৯২২ সালের আয়কর আইন সংশোধন করে প্রণয়ন করা বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর স্থলাভিষিক্ত হবে। প্রস্তাবিত আইনে হিসাব পদ্ধতি, অবমূল্যায়ন ও মর্টাইজেশন বিধিমালা, মূলধন লাভ সম্পর্কিত বিধান, অদৃশ্য সম্পদ থেকে আয়, স্থানান্তর মূল্য ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ব্যবসায় পুনর্গঠন-মার্জার, ডিমার্জারকে ট্যাক্স নিউট্রাল করে আইনি বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাক্ষমতা যথাসম্ভব হ্রাস করার বিধান সন্নিবেশ করা হয়েছে। ব্যবসা ও বিনিয়োগ সহজীকরণের লক্ষ্যে বিধানাবলীর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক উত্তমচর্চাকে প্রস্তাবিত আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কর পরিপালন সহজীকরণে স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল, রিটার্ন প্রসেস ও রিটার্ন অডিট সংক্রান্ত বিধানাবলীর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতকরণপূর্বক পদ্ধতি অনুসৃতব্য করা হয়েছে। তাই প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে আয়কর, অগ্রিম আয়কর, উৎসে কর, ন্যূনতম কর, সারচার্জ ও অন্য কোনো প্রকারের কর আরোপ, আদায়, সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা সহজীকরণসহ আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে মর্মে আশা করা যায়।
আয়কর, অগ্রিম আয়কর, উৎসে কর, ন্যূনতম কর, সারচার্জ ও অন্য কোনো প্রকারের কর আরোপ, আদায়, সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা সহজীকরণসহ আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
আইনটির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে-বিদ্যমান আইনে ইংরেজিতে প্রণীত বিধানসমূহের বিষয়বস্তু সহজ সরল বাংলা ভাষায় রূপান্তর করা হয়েছে। আইনের যথাযথ ও সুস্পষ্ট প্রয়োগের স্বার্থে যথাসম্ভব ক্ষুদ্ৰ ক্ষুদ্ৰ বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। একই বিষয় সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো একই অধ্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে করে করদাতাদের পুরো আইনের বিভিন্ন জায়গায় পরিভ্রমণের প্রয়োজন হবে না।
প্রস্তাবিত আইনে হিসাবরক্ষণের পদ্ধতি, অবচয় ও অ্যামরটাইজেশনের নিয়মাবলী, মূলধনি লাভ সংক্রান্ত বিধান, স্পর্শাতীত পরিসম্পদ হতে আয়, ট্রান্সফার প্রাইসিং, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিধানাবলী ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যবসায় পুনর্গঠন-মার্জার, ডিমার্জারকে ট্যাক্স নিউট্রাল করে আইনি বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশে স্টার্টআপ প্রতিবেশ আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে স্টার্টআপ সান্ডবক্সের প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যবসা ও বিনিয়োগ সহজীকরণের লক্ষ্যে বিধানাবলীর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান অধ্যাদেশ এর অধীন উৎসে কর কর্তন সম্পর্কিত ২১টি রিটার্ন ও বিবরণী দাখিলের পরিবর্তে প্রস্তাবিত আইনে মাত্র ১২টি রিটার্ন দাখিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক উত্তমচর্চাকে প্রস্তাবিত আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কর পরিপালন সহজীকরণে স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল, রিটার্ন প্রসেস ও রিটার্ন অডিট সংক্রান্ত বিধানাবলীর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতকরণপূর্বক পদ্ধতি অনুসৃতব্য করা হয়েছে।
বিভিন্ন প্রকারের সমঝোতা ও বন্দোবস্তের মাধ্যমে কর পরিশোধ পরিহার নিরোধে আরনিংস স্ট্রাপিং রুলসহ সাধারণ ও বিশেষ কর বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।