বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: ৫৩ বছর বয়সী এক নারীর ত্বকে ২৩ বছর বয়সের জৌলুশ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের ধারণা শরীরের অন্যান্য কোষও তারা পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হবেন। খবর বিবিসি।
ঘটনার শুরু বেশ আগের। ১৯৯০-এর দশকে এডিনবার্গের রোজলিন ইনস্টিটিউটের গবেষকরা একটি প্রাপ্তবয়স্ক ভেড়ার স্তন গ্রন্থি থেকে নেওয়া কোষকে পরিপূর্ণ ভ্রুণে পরিণত করার মাধ্যমে ডলি নামের এক ভেড়ার ক্লোন করে সফল হন। তাদের পরিকল্পনায় ভেড়া বা মানুষের ক্লোন তৈরি ছিল না। গবেষকরা চেয়েছিলেন মানব ভ্রূণের স্টেম কোষ তৈরি করার কৌশলটি ব্যবহার করে শরীরের জীর্ণ অংশগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য পেশী, তরুণাস্থি এবং স্নায়ু কোষের মতো নির্দিষ্ট টিস্যু জন্মানো সম্ভব কি না তা দেখা।
এরপর ২০০৬ সালে এই কৌশলটি আরও সহজভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন কিয়েটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিনিয়া ইয়ামানাকা। তার আবিষ্কৃত পদ্ধতি আইপিএস অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক কোষে ৫০ দিনের জন্য রাসায়নিক যুক্ত করলে জেনেটিক পরিবর্তন হয়। তারপর প্রাপ্তবয়স্ক কোষটি স্টেম কোষে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু স্টেম এবং টিস্যুর পুনঃবৃদ্ধি অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব ছিল না বিধায় ডলি এবং আইপিএস দুটি পদ্ধতির প্রয়োগ এ পর্যন্ত বেশ সীমিত ছিল।
সাম্প্রতিকালে কেমব্রিজের বাব্রাহাম ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ওলফ রেইক ও তার দলের সদস্যরা ৫৩ বছর বয়সের ত্বকে আইপিএস পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। তবে এক্ষেত্রে ৫০ দিন পর্যন্ত রাসায়নিক প্রয়োগ না করে ১২ দিনে কমিয়ে এনেছেন। আর অবিশ্বাস্য ফলাফলে দেখেছেন, কোষগুলো স্টেম কোষে রূপান্তর না হয়ে ২৩ বছরের ত্বকের কোষের মতো সজীব আর উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
ড. দিলগীত গিল এ বিষয়ে বিবিসিকে বলেন, ‘আমার মনে আছে, যেদিন গবেষণার ফলাফল পেয়েছিলাম সেদিনকার কথা। আমি ভাবতেই পারিনি কোষগুলো যেমন হওয়ার কথা ছিল তার থেকেও ৩০ বছর কম বয়সের মতো হয়ে গিয়েছিল।’
তবে এই পদ্ধতিতে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকায় এখনই ক্লিনিকে প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত নয়। তবে একবার যেহেতু ত্বকের কোষ পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ প্রতীয়মান হয়েছে, গবেষকরা খুব শিগগিরই আরও নিরাপদ পদ্ধতির অন্বেষণ করবেন।
অধ্যাপক রেইক বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হলো, মানুষের স্বাস্থ্যের মেয়াদ বৃদ্ধি করা। জীবনকালের পরিবর্তে, যাতে লোকেরা স্বাস্থ্যকর উপায়ে বয়স্ক হতে পারে সেই পথ খুঁজে বের করা।’ তার মতে, প্রথমে বয়স্কদের শরীরের যেসব অংশ কেটে বা পুড়ে গেছে সেগুলোর দ্রুত নিরামকের উপায় হিসেবে ঔষুধ তৈরি করা যেতে পারে। যার ফলে বোঝা যাবে কোষগুলো কতটুকু সাড়া দেয় এবং আদৌ পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব কি না।
বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস রিসার্চ কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং ডলি ভেড়ার গবেষণার আংশিক অর্থদাতা অধ্যাপক মেলানি ওয়েলহাম বলেন, ‘প্রযুক্তির দীর্ঘস্থায়ী ক্লিনিকাল সুবিধাগুলো খুব বেশি দূরে নয়। যদি এই পদ্ধতি বা নতুন থেরাপিগুলো বয়সের সঙ্গে কম প্রতিক্রিয়াশীল ইমিউন কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং টিকাদান কর্মসূচিতে মানুষ আরও বেশি আগ্রহী হবে।’
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই প্রক্রিয়া শুধু চেহারা নয় পুরো শরীরে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে কি না? এটি কি যৌবন ধরে রাখার কৌশলের হাতিয়ার বা এন্টি-এইজিং পিলের মতো কাজ করবে? উত্তরে অধ্যাপক রেইক বলেন, ‘এই ধারণাটিও খুব বেশি অবাক করার মতো নয়। এই পদ্ধতি ইতোমধ্যে জেনেটিকালি পরিবর্তিত ইঁদুরের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। সেগুলোর কোষগুলোতে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার লক্ষণ বেশ সুস্পষ্ট। একটি গবেষণায় অগ্ন্যাশয়ের পুনরুজ্জীবিত হতেও দেখা গেছে, যা ডায়াবেটিস রোধেও বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
কিন্তু অন্যদিকে লন্ডনের ক্রিক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক রবিন ল্যাভেল-বেজ-এর বক্তব্য অনুসারে, অধ্যাপক রেইকের ল্যাবে কোষ পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়ার ফলাফল এবং তুলনামূলক সহজ ক্লিনিক্যাল অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক বাধা আছে। এটি কোনোভাবেই এন্টি-এইজিং পিল কিংবা অন্যান্য টিস্যু প্রতিস্থাপনের মতো মোটেই সহজ নয়।
তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত রাসায়নিকগুলো খুঁজে পাওয়া যতটা সহজ মনে হচ্ছে, সত্যিকার অর্থে ঠিক ততটাও সহজ নয়। আবার পুরো শরীরেও যে সেগুলো কাজ করবে তার নিশ্চয়তাও নেই। তাছাড়া ভিন্ন দেহে ভিন্ন অংশে এই প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হবে। তবে অন্যান্য রাসায়নিক দিয়েও এই কাজ করা যেতে পারে। যা একদিকে যেমন ভালো হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে। আর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে গেলে এটি নিয়ে আরও দীর্ঘ গবেষণার পথ পাড়ি দিতে হবে।’
তবে এই পদ্ধতি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে হাড়ক্ষয়, আলঝেইমার এবং ডায়াবেটিসের মতো বার্ধক্যজনিত রোগের চিকিৎসা আরও সহজ হবে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক ফার্ম জেনেনটেকের প্রধান হেনরিক জ্যাসপার বলেন, ‘এই আবিষ্কার সবচেয়ে বেশি উপকৃত করবে বার্ধক্যের ছাপ কমানোর ক্ষেত্রে। শুধু তাই নয়, এটি আমাদের জীবনের সমস্ত পর্যায়ে অপূরণীয় চিকিৎসা চাহিদার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাবসহ একটি নতুন থেরাপিউটিক পদ্ধতির গঠন করবে।’
অনুবাদ করেছেন আসরিফা সুলতানা রিয়া
তথ্যসূত্র:
বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান
ফোনের থেকে সস্তা Xiaomi Walkie-Talkie 3, ঘরে বসে কথা বলুন ৫০০০ কি.মি দূরে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।