জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকার ৯৭১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অগ্নি নিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ৯৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে মাত্র ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অগ্নি নিরাপত্তার দিক সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তৈরি এক তালিকা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ২০১৭ সালে ৯৮৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে এই তালিকা প্রস্তুত করে ফায়ার সার্ভিস।
তালিকাটিতে ঢাকা শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্নি নিরাপত্তার দিক থেকে তিনটি ভাগে ভাগ করে। এগুলো হচ্ছে- খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং সন্তোষজনক। পরিদর্শন করা ৯৮৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৩টি প্রতিষ্ঠান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, ৮৭৮টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৮টি প্রতিষ্ঠান সন্তোষজন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
কী আছে ফায়ার সার্ভিসের তালিকায়?
তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকাকে মোট ১১টি ভাগে ভাগ করে আলাদা ১১টি দল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে তালিকা প্রস্তুত করে। এর মধ্যে অনেক নামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো এলাকাভেদে নয় বরং সারা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এমনকি গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকাতেও এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এরমধ্যে বারিধারা ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে মাত্র ৪টি, ঝুঁকিপূর্ণ ৯১টি ও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সিদ্দিক বাজার, সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় সন্তোষজনক অবস্থায় ২টি ও ঝুঁকিপূর্ণ ৫৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এছাড়া মিরপুর ও ভাষানটেক ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় সন্তোষজনক অবস্থায় ৩টি ও ঝুঁকিপূর্ণ ১০৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ডেমরা ও পোস্তগোলা ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সন্তোষজনক অবস্থায় নেই। ওই এলাকার ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় ৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
উত্তরা ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় ১৩টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও ১০৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় সন্তোষজনক অবস্থায় ৯টি ও ঝুঁকিপূর্ণ ২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সাভার ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় ৩০টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় ৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
খিলগাঁও ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় ১২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
পুরান ঢাকা ফায়ার স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় ৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন শেষে অগ্নি নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়টি জানানোও হয়। তাগাদা দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ফায়ার সার্ভিসের এ সতর্কতাকে কানে তোলেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা তালহা বিন জসীম জানান, তালিকাটি ২০১৭ সালের। সম্প্রতি বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর এটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, তবে আমাদের কাছে থাকা সাম্প্রতিক তালিকা অনুযায়ী, ঢাকার ১ হাজার ১০৬টি বিপণিবিতান, ৮০১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৩৪৫টি হাসপাতাল এবং ৩২৫টি আবাসিক ভবন অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চলে, মানুষ কেনাকাটা করেন, খেতে যান, বসবাস করেন- অথচ তারা হয়ত জানেনই না, এসব ভবন অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের (অপারেশনস ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, আমরা ভবনের মালিককে নোটিশ দিতে পারি। এ ছাড়া আর কিছু করার নেই। আমাদের আইনের মধ্যে যা যা করা সম্ভব, তা-ই করছি।
তার ভাষ্য, ২০১৪ সালের ফায়ার বিধিমালা স্থগিত থাকায় এসব ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা কাজে আসে না। আর ফায়ার সার্ভিসের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনাও কঠিন। এছাড়া আইনগত ক্ষমতা না থাকায় কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সিলগালা করাও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে কোনো ভবনে অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ বলে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া ছাড়া আসলে কিছুই করার থাকে না ফায়ার সার্ভিসের।
গাজায় সংঘাত অবসানে সম্ভাব্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।