নিজস্ব প্রতিবেদক : রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি কয়েক বছর ধরে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মে জর্জরিত। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত পদত্যাগ করেছেন। তবে, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শীর্ষ কর্মকর্তারা ক্ষমতায় বহাল থাকায় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিক্ষোভে নামারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।
এই কর্মকর্তাদের মতে, দুর্নীতিবাজ ও অনভিজ্ঞ শীর্ষ নির্বাহীদেরকে তাদের পদে থাকতে দেওয়া হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে অগ্রণী ব্যাংক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনার যে অঙ্গীকার করেছে তা বাস্তবায়নে অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন গ্রুপকে অর্থ পাচারে সহায়তাকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মুরশেদুল কবীর।
ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ওয়াহিদা বেগম এবং মহাব্যবস্থাপক একেএম ফজলুল হকসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছেন এমডি। এরা বিগত সরকারের উচ্চপদস্থ সদস্যদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে অবৈধ ঋণ বরাদ্দ, সন্দেহজনক পোস্টিং এবং অন্যান্য দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এদের বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন করে কর্পোরেট গ্যারান্টির ভিত্তিতে বড় ঋণ প্রদান এবং অসাধু গ্রাহকদের জাল বন্ধকের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, আদালতের আদেশ অমান্য করায় উচ্চ আদালতের রায়ে শাস্তির মুখেও পড়েছিলেন এমডি মুরশেদুল কবীর।
মুন ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানের সাথে জড়িত একটি ঋণ মামলায় ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মুরশেদুল কবিরসহ চার কর্মকর্তাকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। যদিও একদিন পরই রায় স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্ট।
একসময়ে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা এই ব্যাংকটিকে আগের অবস্থায় নিতে বিতর্কিত নির্বাহীদের অপসারণে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, এমন আশা করেছিলেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা।
মুরশেদুল কবীরকে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয় শেখ হাসিনা সরকার। এমডি পদে তাঁর নিয়োগ পেতে সুপারিশ করেন সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।
ব্যাংকিং নৈতিকতার লঙ্ঘন করে গ্রাহকদের লেনদেনের তথ্য প্রকাশ ও ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগও রয়েছে এই ব্যাংকারের বিরুদ্ধে।
বর্তমান নেতৃত্বে সব সূচকে অবনতি:
মুরশেদুল কবীর ২০২২ সালে যখন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব নেন তখন অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। অব্যবস্থাপনার কারণে মাত্র পৌনে দুই বছরে অগ্রণীর খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ ব্যাংকটির মোট খেলাপির এক চতুর্থাংশের বেশি বেড়েছে মুরশেদুল কবীরের সময়।
ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থার জন্য এমডি ও জ্যেষ্ঠ ডিএমডি’র অদক্ষতাকে দুষছেন কর্মকর্তারা। কারণ, মুরশেদুল কবীর কখনো শাখা ব্যবস্থাপকে দায়িত্ব পালন করেন নি। যে কারণে তার সার্বিক ব্যাংকিং দক্ষতায় ঘাটতি রয়ে গেছে। পাশাপাশি ব্যাংকটির জ্যেষ্ঠ ডিএমডি ওয়াহিদা বেগম মাত্র ছয় মাস শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সুশাসন না থাকায় এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দূরদর্শীতার অভাবের সুযোগ নিয়ে ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) ওয়াহিদা বেগম ব্যাংকে প্রমোশন ও বদলী বাণিজ্য করছেন, এমন অভিযোগ কর্মকর্তাদের। সূত্র জানায়, ওয়াহিদা বেগম রুপালী ব্যাংকের ১৯৯৮ ব্যাচের কর্মকর্তা। পুরো চাকুরীজীবনে শুধুমাত্র রূপালী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখায় ৬ মাস শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন। রূপালী ব্যাংকের সাবেক এক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, ওয়াহিদা বেগম চাকুরীজীবনে কোথাও কর্মদক্ষতার ছাপ নেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুরশেদুল কবীররের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।