জুমবাংলা ডেস্ক : ‘অচেনা’ প্রাণীর হামলায় আতঙ্কে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের সাত গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। এখন পর্যন্ত ১২ জনকে আক্রমণ করেছে গায়েবি এই প্রাণী। এতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে গ্রামের ছোট-বড় সবাই লাঠি হাতে চলাফেরা করছে।
তবে প্রাণীসম্পদ বিভাগ বলছে, এগুলো শেয়াল বা কুকুর। কারণ গ্রামবাসী যে কয়েকটি প্রাণীকে পিটিয়ে মেরেছে সেগুলো শেয়াল বলেই শনাক্ত করা হয়েছে। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়েই পাগল জন্তুগুলো এ ধরণের আচরণ করছে। তবে তারপরও পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
এলাকা ঘুরে জানা গেছে, প্রায় দুমাস ধরে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও প্রশাসন তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে গুজব ও অলৌকিক গল্প মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মানুষ। তারা লাটিসোটা নিয়ে দিনে রাতে পাহাড়া বসিয়েছেন। এমন কি দিনের বেলাও সবাই বের হন লাঠি হাতে।
তালুকজামিরা সংললগ্ন আকবরের মোড়ে চা খেতে আসা কৃষষক মইদুল ইসলাম জানান, মাঠে মাঠে ধান থাকায় জন্তুটির উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে না। অসতর্ক মানুষ হঠাৎ করেই আক্রমনের শিকার হচ্ছেন। তবে দুপুরেই বেশি ঘটনা ঘটছে।
শামসু মিয়া নামে এক ব্যক্তি নিজের ভাষায় দাবি করলেন, ‘হামি এংকা জন্তু এ্যর আগে দেখম নাই। শিয়াল হলে চিননু হয়! এটা আসে, কামড়ায়, ফির গায়েব হয়!’
স্থানীয়রা জানান, প্রায় একমাস আগে হরিণাথপুর গ্রামের কৃষক ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম ফেরদৌস সরকার রুকু (৫৫) মাঠে ঘাস কাটতে গেলে হঠাৎ করে তার ওপরে লাফিয়ে পড়ে জন্তুটি। তার ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, এ সময় তিনি হাতে থাকা কাস্তে দিয়ে একের পর এক আঘাত করেও রক্ষা পাননি সেটি মরিয়া হয়ে পাল্টা কামড়াতে থাকে। পরে তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে প্রাণিটি পালিয়ে যায়।
প্রাণিটি তার নাক ও শরীরের মাঝের অংশ ছিঁড়ে নেয়। এরপর তাকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে সেলাই শেষে জলাতঙ্ক ও টিটেনাস টিকা দিয়ে বাড়িতে আনা হয়। এরপর তার অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হলে ১৭ অক্টোবর তাকে প্রচন্ড জ্বর নিয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরদিন সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ ছাড়া প্রাণিটির আক্রমণে আরো ১২জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেঁওয়াবাড়ির শেফালী বেগম (৩০) ও মুক্তা বেগম (২৮), আফছার আলী (৩৫), হামিদ মিয়া (৪০), স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মো. রাব্বী শেখ (১০), হরিনাথপুরের আমিরুল ইসলাম (৩১), সুমি বেগম (৪০), মনজিলা বেগম (৫০) নাম পাওয়া গেছে। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হলে তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি যান।
নাকাইহাট কলেজের গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য মো. আবদুল মতিন বলেন, হরিনাথপুরে গণপিটুনীতে যে প্রাণী মরেছে সেটি অবশ্যই শেয়াল। পাগল হয়েই শেয়ালগুলো মানুষকে কামড়াতে আসে। এখানে অদ্ভুত বা অলৌকিক কিছু নেই।
গাইবান্ধা সরকারি কলেজের ‘টিন ফর এনার্জি অ্যন্ড ইনভারমেনটার রিসার্চ-টিন’ সংগঠনের কর্মীরা শনিবার দিনভর এলাকাগুলোতে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। সংগঠনের সভাপতি জিসান মাহমুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে এগুলো শেয়াল বলেই মনে হচ্ছে। এর মধ্যে অদ্ভুত কিছু নেই। তবে এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অবিলম্বে তা নিরসন করা দরকার।
গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রাণী বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক খলিলুর রহমান বলেন, আতঙ্কিত মানুষ এখন তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ওই প্রাণী নিধন করবেন এটা স্বাভাবিক। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে রোগগ্রস্ত হিংস্র শেয়াল বা অন্য বন্য প্রাণী বাদে নির্বিচারে যাতে অন্যদের পিটিয়ে মারা না হয়।
পলাশবাড়ি উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বললেন, এ পর্যন্ত মানুষের হাতে যে কয়েকটি প্রাণী মারা হয়েছে সবগুলো শেয়াল।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. মাসুদার রহমান বলেন, আবাস ও খাদ্য সংকটের কারণে শেয়াল কুকুরগুলো সর্বত্র বিচরণ করছে। পলাশবাড়িতে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে মানুষের ওপরে আক্রমনকারী প্রাণীগুলো শেয়াল। জলাতঙ্কের বাহক হয়ে এরা অন্যকে কামড় দিচ্ছে। ফলে অন্যগুলোও আক্রান্ত হচ্ছে। পাগল শেয়াল চেনার উপায় এগুলো লক্ষহীণভাবে একই দিকে দৌড়ায়। সামনে কিছু পড়লে আক্রমন চালায়।
পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, আক্রান্তদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। রবিবার রাজশাহী থেকে বনবিভাগের একটি দল ঘটনা পর্যবেক্ষনে ওই সব এলাকায় যাবেন। তারা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
![](https://inews.zoombangla.com/wp-content/uploads/2024/03/34-5.jpg)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।