দেশে অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে এক বিশাল অভিযান শুরু হয়েছে, যা জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতিফলন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়বের সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুসারে, জুয়ার সঙ্গে জড়িত এক হাজারেরও বেশি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে একশন শুরু: সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি
প্রধান উপদেষ্টার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহকারী তার ফেসবুক পোস্টে জানান, সাইবার স্পেসে জুয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ২০ ধারা অনুসারে, অনলাইনে জুয়া পরিচালনা, প্রচার, বিজ্ঞাপন এবং অর্থ লেনদেন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
Table of Contents
এই উদ্যোগের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো নাগরিকদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জুয়া সংশ্লিষ্ট প্রতারণা ও অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে জনগণকে রক্ষা করা। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী মোবাইল ফাইন্যান্সিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও কঠোর নজরদারি আরোপ করা হয়েছে।
কারা পড়ছে সরকারের রাডারে?
সরকারি তথ্য মতে, জুয়া খেলার সঙ্গে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ১১০০ এর বেশি এজেন্ট শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন:
- মোবাইল ফাইন্যান্সিং সিস্টেম (এমএফএস) এজেন্ট
- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
- ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনকারী
- হুন্ডি ব্যবসায়ী এবং তাদের সহযোগীরা
এ সকল সংস্থা ও ব্যক্তি যদি ভবিষ্যতে এই কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করা হতে পারে।
একইসঙ্গে, জনগণকে আহ্বান জানানো হয়েছে যে, কেউ যদি অনলাইন জুয়া সংশ্লিষ্ট কোনো একাউন্ট বা আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে জানেন তাহলে [email protected] -তে যোগাযোগ করুন।
জুয়া খেলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপদ
অনলাইন জুয়া শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, এটি একটি সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে। পরিবার ভাঙন, আর্থিক দেউলিয়া, মানসিক চাপ এমনকি আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটছে এই জুয়া আসক্তির কারণে।
বাংলাদেশে অনলাইন জুয়া একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর বিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইন গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে। এর ফলে যুব সমাজকে বিপথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
আইন কী বলছে?
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ২০, ২১ এবং ২২ ধারায় অনলাইন জুয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধারাগুলোর আওতায় যে কেউ অনলাইন জুয়া খেলবে, প্রচার করবে কিংবা জুয়ার অর্থ লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তাছাড়া, ৩০ ধারা অনুযায়ী, পূর্বে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা মামলা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবেন। এটি আইন ও বিচার বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে।
জনগণের দায়িত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধি
সরকার সাধারণ জনগণকে অনুরোধ করেছে যে, কেউ যদি অনুমতি ছাড়া তার ছবি বা ভিডিও কোনো জুয়ার প্রচারে দেখতে পান তাহলে আইনের আশ্রয় নিন। মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের এ ব্যাপারে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এটি সময় এখন জেগে ওঠার—যেখানে জনগণ, সরকার ও প্রযুক্তি একযোগে কাজ করে এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
FAQs
অনলাইন জুয়া কেন নিষিদ্ধ?
অনলাইন জুয়া সামাজিক অবক্ষয়, আর্থিক ক্ষতি এবং মানসিক সমস্যার কারণ হওয়ায় এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কোন আইন অনুযায়ী অনলাইন জুয়া অপরাধ?
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ২০, ২১ এবং ২২ ধারা অনুযায়ী অনলাইন জুয়া অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
জুয়ার বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ করলে কি শাস্তি হতে পারে?
হ্যাঁ, এটি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
আমি কীভাবে অভিযোগ করতে পারি?
[email protected] এই ইমেইল ঠিকানায় জুয়া সংক্রান্ত তথ্য পাঠিয়ে অভিযোগ জানানো যায়।
পূর্বের ক্ষতিগ্রস্তরা কীভাবে ক্ষতিপূরণ পাবেন?
৩০ ধারা অনুযায়ী তারা মামলা করে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।