জুমবাংলা ডেস্ক: ফেনী: মো. আবদুল হান্নান ওরফে এমএ হান্নান। একজন আপাদমস্তক স্বেচ্ছাসেবক। বিপদকালে মানুষকে রক্ত দিয়ে সহায়তা করেই ব্যয় করেন দিনের অধিকাংশ সময়। বাকি সময় থাকেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ওই মাধ্যমকে কাজে লাগিয়েই করছেন জীবিকার নির্বাহ। প্রতিমাসে আয় করছেন অর্ধ লক্ষাধিক টাকা। বাংলানিউজের প্রতিবেদক সোলায়মান হাজারী ডালিম-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
আমের মৌসুমে রাজশাহী- চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম, শীত মৌসুমে খেজুরের রসসহ বিভিন্ন মৌসুমি পণ্য বিক্রি করে ইতোমধ্যেই ফেনীতে আলোচিত হয়েছেন। চলতি ইলিশ মৌসুমে চাঁদপুর থেকে ইলিশ এনে অনলাইনে ইলিশ বিক্রি করে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তরুণ অনলাইন উদ্যোক্তা।
আলাপের এক ফাঁকে হান্নান জানান, চলতি ইলিশ মৌসুমে আড়াই মাসে ১৫ লক্ষাধিক টাকার ইলিশ মাছ ও ডিম বিক্রি করেছেন তিনি। ইলিশির রাজধানী চাঁদপুরের মাছ ঘাট থেকে প্রতিদিনই মেঘনা ও সাগরিকা ট্রেনে ফেনী চলে আসে মাছ। এরপর আরও কয়েকজন তরুণ নিয়ে নিজ হাতেই পৌঁছে দেন ক্রেতাদের ঘরে। গুনে-মানে ঠিক থাকায় ক্রেতারও একবার কিনে বার বার অর্ডার করেন।
তরুণ ওই উদ্যোক্তা জানান, বাজারে আরও নানা ধরনের ইলিশ পাওয়া যায়। কোনোটি সাগরের আবার কোনোটি ইলিশ বলে বিক্রি করলেও আদতে ইলিশই না। বাজারে ইলিশের সঙ্গে তার ইলিশের মানে রয়েছে বিস্তর ফারাক। আর সে কারণেই দাম একটু বেশি। ক্রেতারা খেয়ে মজা পাওয়ার কারণে একটু দাম বেশি দিয়ে হলেও আবার নিয়ে থাকেন।
হান্নান জানান, সেসব সময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তার ক্রেতাদের এ গ্রেডের মাছ খাওয়াতে। সে ১ কেজির ইলিশ ১৪শ থেকে ১৫শ, দেড় কেজির ইলিশ ১৭শ থেকে ১৮শ, দুই কেজির ইলিশ ২২শ থেকে ২৪শ ও আড়াই কেজির ইলিশ কেজি প্রতি ২৫শ থেকে ২৬শ টাকায় বিক্রি করেন। বাজার পরিস্থিতি, চাহিদা ও যোগানের ওপর ভিত্তি করে দামের তারতম্য হয়ে থাকে।
হান্নান জানান, চলতি মৌসুমে ১৫ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করবেন তিনি। সব খরচ বাদ দিয়ে ৯০ থেকে ১ লাখ টাকা তার লাভের খাতায় যোগ হবে তার। প্রতিকেজি ইলিশ চাঁদুপর থেকে ফেনী নিয়ে আসতে পরিবহন খরচ হয় ২০ থেকে ৩০ টাকা। একদম বাসায় পৌঁছে দিয়ে এক কেজি ইলিশ থেকে ১শ থেকে দেড়শো টাকা লাভ থাকে তার। ইলিশের ডিম প্রতিকেজি বিক্রি হয় ২১শ থেকে ২৩শ টাকা। ডিমে অল্প লাভ হলেও মানুষ ইলিশের ডিম পছন্দ করে। সে কারণে ইলিশের ডিমও সরবরাহ করার চেষ্টা থাকে।
এ অনলাইন উদ্যোক্তা বলেন, অনেক সময় লাখ, লাখ টাকা লগ্নি করেও অনেকে ব্যবসা করতে পারেন না। বিদেশ গিয়েও অনেকে ব্যর্থ হন। শ্রম, মেধা ও পেশাদারিত্ব দিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগিয়েই আয় করছি। বিনিয়োগ খুব বেশি না হলেও আয় ভালো। চ্যালেঞ্জ অনেক আছে সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।
হান্নান আরও বলেন, আরও অনেকে অনলাইনে প্ল্যাটফর্ম কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে আসছেন-এটা ইতিবাচক। কিন্তু অনেকেই মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। সাগরের মাছ চাঁদপুরের মেঘনার বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। দামও নিচ্ছেন কম। এ ধরনের অপেশাদার আচরণের কারণে এখানে টিকে থাকা কিছুটা ঝুঁকির।
হান্নানকে ইলিশ সরবরাহকারী চাঁদপুরের স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, হ্যালো কলের স্বত্বাধিকারী হান্নানের জন্য আমরা চাঁদপুরের মেঘনা নদীর ‘এ’ গ্রেডের ইলিশ সংগ্রহ করে পাঠিয়ে থাকি। সে কারণেই এসব ইলিশের দাম একটু বেশি।
ডিম সরবরাহকারী রোকেয়া বলেন, বড় ইলিশের থেকে ডিম সংগ্রহ করে সেই ডিম পাঠানো হয়। গুণে-মানে ইলিশের এই ডিম অনন্য। একবার খেলে মানুষ আবার খেতে চাইবে এ ডিম।
আবব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক ক্রেতা হান্নানের ইলিশের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ-মায়ের জন্য ইলিশ কিনেছিলাম, অনেক পছন্দ হয়েছে। একবার ভালো লাগায় ২য় বার নিয়েছি।
মুহিবুল্লাহ নামের আরেকজন লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, মাছ একদম খাঁটি পেলাম।
তরুণ অনলাইন উদ্যোক্তা মো. আবদুল হান্নান (এমএ হান্নান) তার পেজবুক পেজ ‘হ্যালো কল’ https://www.facebook.com/hellocall00 ও তার ব্যক্তিগত আইডি এম এ হান্নান https://www.facebook.com/profile.php?id=100011386881927 থেকে অনলাইনের এই বিকিকিনি পরিচালনা করে থাকেন। শহরের ফেনী আলিয়া মাদ্রাসা মার্কেটের তিনতলায় তার একটি বিক্রি ও প্রদর্শনী কেন্দ্রও রয়েছে।
অনলাইনের অনেক ক্রেতা এখানে এসে নিজেদের পণ্য নিয়ে যান। ইলিশ ছাড়াও মৌসুমি পণ্য, মধু, ঘি, তাঁতের পণ্য, রসুনের আঁচার, জুতা, ঘানি ভাঙা সরিষার তৈল, ব্যাগ, শার্ট, টি-শার্টসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন তিনি।
তরুণ ওই উদ্যোক্তা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যদি যথাযথভাবে সময় দেওয়া যায় এবং সে আলোকে পেশারিত্বের সঙ্গে কাজ করা হয় তাহলে প্রতি মাসে লাখ টাকাও আয় করা যায়। আমি নিজেও প্রতিমাসে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা আয় করছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।