জুমবাংলা ডেস্ক : ব্যবসা ছোট হোক কিংবা বড়, ব্যবসা শুরু করার জন্য আইডিয়ার পাশাপাশি আরো অনেক কিছুরই প্রয়োজন পড়ে। অনেকের কাছেই অসাধারণ সব ব্যবসার আইডিয়া রয়েছে, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন করার মতো কৌশল ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা সবার থাকে না। আজকে আমরা জানবো, কীভাবে কম খরচে ও ঝামেলা ছাড়াই অনলাইনের মাধ্যমে আপনার স্বপ্নের ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা অনেক লাভজনক। কারণ ব্যবসায়ী কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই একেবারে কম বিনিয়োগে নিজের পছন্দমতো পণ্য ক্রয় করে তা অনলাইনে ইকমার্স কিংবা এফকমার্সের মাধ্যমেই বিক্রি করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে তিনজনের বেশি নেয়া উচিত নয়।
কেন অনলাইন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হবেন? অনেকেই ভেবে থাকেন, বড়সড় কোনো ব্যবসায়ী না হলে কিংবা অনলাইনে ব্যবসা করলে লাভের মুখ দেখা যায় না। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আপনি চাইলে অনলাইনেই ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার মাধ্যমে ধাপে ধাপে আপনার স্বপ্ন পূরণের পথে এগুতে পারবেন। চলুন দেখে নেয়া যাক, যেসব কারণে আপনি অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাওয়া যায়: একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাকে না, অর্থাৎ আপনার মনিব আপনি নিজেই। সেক্ষেত্রে ব্যবসা সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আপনার অন্য কারো মতামত শোনার দরকার পড়ে না। তবে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে অবশ্যই ভেবে দেখবেন, তা আপনার গ্রাহকদের জন্য উপকারী হবে কিনা।
সহজে নিয়ন্ত্রণের সুবিধা: যেহেতু আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসাটি অনলাইনে চলবে ও এতে মাত্র কয়েকজন কর্মী কাজ করবে, সেহেতু আপনি কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের মাধ্যমেই ঘরে বসে সম্পূর্ণ ব্যবসাটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
সময়স্বল্পতায় ভুগতে হয় না: আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসাটি যেকোনো জায়গা থেকে মোবাইলের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর তাই অন্য যেকোনো কাজের জন্য আপনার সময়ের অভাব হবে না। যখন দরকার রিমাইন্ডার সেট করে দিয়ে কাজ করলেই হবে। কোনো দোকান কিংবা অফিসে গিয়ে সময় ব্যয় করারও দরকার পড়বে না।
স্থানস্বল্পতায় ভুগতে হয় না: অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘরের বসেই পণ্য বিক্রি করা যায় ও সকল মালামালও ঘরেই সংরক্ষণ করে রাখা যায়। যার ফলে অতিরিক্ত কোনো দোকান কিংবা অফিস ভাড়া করার দরকার পড়ে না। যার ফলে জায়গাস্বল্পতার সমস্যা নিয়ে ভাবতে হয় না। যদিও পণ্যের উপর নির্ভর করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দোকান বা স্টকরুমের প্রয়োজন পড়ে।
অতিরিক্ত খরচের চিন্তা করতে হয় না: আমরা একটি ব্যবসা শুরু করার পূর্বে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবি। যেমন, দোকান কোথায় হবে, মাসশেষে ব্যবসা থেকে দোকানের ভাড়া দেয়া সম্ভব হবে কিনা, দোকানের জন্য কর্মচারী রাখার দরকার পড়বে কিনা, দোকানের বিদ্যুৎ বিল, অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়ার খরচ ইত্যাদি। আপনি যদি অনলাইনে আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসা চালিয়ে যান, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে এসব অতিরিক্ত খরচের চিন্তা করতে হবে না।
অনলাইন রিটেইল প্লাটফর্ম: অনলাইনে বেশ কিছু রেডিমেড অনলাইন রিটেইল স্টোর রয়েছে যেখান থেকে অনেক সহজেই আপনার পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। এরকম দুটো রেডিমেড রিটেইল স্টোর প্লাটফর্ম হচ্ছে শপিফাই ও স্টোরনেভি। এখানে আপনি নিজের ওয়েব পেইজ তৈরি করে এবং পণ্যের তথ্য ও ছবি আপলোড করে বিক্রি করতে পারবেন।
সেলফ পাবলিশিং: মূলত লেখকগণ ই-রিডার, ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনের মাধ্যমে নিজের তৈরি বইয়ের পিডিএফ ও হার্ডকপি বিক্রি করতে পারেন। এধরনের অ্যাপ দিয়ে তৈরি বই বিক্রি করে আপনি সেলফ পাবলিশিং প্লাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবসা করতে পারবেন। এরকম একটি ওয়েব অ্যাপ হচ্ছে ডিজাইনিং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন।
ব্লগিং: আপনি যদি লিখতে পছন্দ করেন, তাহলে ব্লগিংয়ের মাধ্যমেও বেশ ভালো ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে পারবেন। একটি ব্লগ তৈরি করে সেখানে আপনার লেখাগুলো প্রকাশ করতে থাকুন। ট্র্যাফিক, রিডার ও আপনার লেখার মান যত বাড়তে থাকবে, অর্থের পরিমাণও তত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। ব্লগ তৈরি করার জন্য বেশ ভালো একটি প্লাটফর্ম হচ্ছে ওয়ার্ডপ্রেস।
অনলাইন ট্রেনিং: যদি আপনি কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন ও সেই বিষয় সম্পর্কে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে অনলাইন ট্রেনিং সেন্টার চালু করতে পারেন। ভিডিও সিরিজ, ইবুক সিরিজ, ভিডিও কনফারেন্স, অডিও সিরিজ দ্বারা খুব সহজেই অনলাইনে ট্রেনিং করানো যায়। যেমন, অনলাইনে ডিজে শেখার জন্য ডিজে কোর্সেস অনলাইন ওয়েবসাইটটি ঘুরে আসতে পারেন।
ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন: যদি আপনি ওয়েব ডিজাইন ও ওয়েব ডেভেলপমেন্টে যথেষ্ট অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন ও ইউনিক কোনো আইডিয়া দ্বারা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে পারেন, তাহলে এর মাধ্যমে খুব সহজেই ব্যবসা করা সম্ভব। আপনার তৈরি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে যখন ট্র্যাফিক বাড়তে শুরু করবে, তখন আপনার ব্যবসাও ধীরে ধীরে এগুতে শুরু করবে। উদাহরণস্বরূপ, অনলাইন সফটওয়্যার সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইট ক্লকস্পট থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
অ্যাফিলিয়েট: আপনি যদি পণ্যের রিভিউ করতে পছন্দ করেন, তাহলে অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে পণ্য ক্রয় করে এবং সেই পণ্যের রিভিউ কিংবা কাভারেজ ব্যবহার করে অ্যাফিলিয়েট লিংক তৈরির মাধ্যমে ব্যবসা করতে পারবেন। পে মাই স্টুডেন্ট লোনস হচ্ছে এমন একটি ওয়েবসাইট, যেখানে তাদের সম্পূর্ণ রেভিনিউ শুধুমাত্র অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমেই তৈরি হয়।
আপনার জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসা উপযুক্ত কিনা? ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই আপনাকে একা একাই কাজ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ মতামত, কৌশন কিংবা কার্যপদ্ধতি সম্পর্কিত যেকোনো সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। যদি আপনার একা কাজ করার অভ্যাস না থাকে ও দলগতভাবে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে ক্ষুদ্র ব্যবসা আপনার জন্য উপযুক্ত নয়।
ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে আপনি বড় অংকের অর্থ উপার্জন করতে পারবেন না। কারণ কয়েকজন কর্মচারী দ্বারা পরিচালিত একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা কখনোই আর্থিক উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছুতে পারে না। তবে আপনার আইডিয়া ও স্বপ্ন যদি আপনার বর্তমান ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে বড় হয়, সেক্ষেত্রে কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসাকে বিশাল কোম্পানিতে পরিণত করতে হবে। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।