নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত নতুন দুই জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। মঙ্গলবার (জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত জাতীয় বীজ বোর্ডের ১১১তম সভায় ধানের জাতগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ফলে ব্রি উদ্ভাবিত সর্বমোট ধানের জাতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১৫টি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় বীজ বোর্ডের ১১১তম সভায় ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ব্রি’র প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের প্রযুক্তি সম্পাদক ও প্রধান মো. রাশেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, নতুন উদ্ভাবিত জাত ব্রি ধান-১০৭, প্রিমিয়াম কোয়ালিটি সম্পন্ন উফশী বালাম জাতের বোরো ধান। এ জাতটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক ২০১৫ সালে কৃষকের মাঠ থেকে সংগ্রহ করে বিশুদ্ধ লাইন বাছাইকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়। ব্রি গাজীপুরের গবেষণা মাঠে নির্বাচিত কৌলিক সারিটি তিন বছর সফল ফলন পরীক্ষণের পর ২০১৯ সালে ব্রি’র আঞ্চলিক কার্যালয় সমূহের গবেষণা মাঠে ও ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলে কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ২০২২ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক স্থাপিত প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দলের সুপারিশের ভিত্তিতে জাতটি ছাড়করণের জন্য আবেদন করা হয়। জাতীয় বীজ বোর্ডের আজকের সভায় সারাদেশে চাষের জন্য একটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির উচ্চ ফলনশীল বালাম জাতের বোরো ধান হিসেবে লতা বালামকে ব্রি ধান-১০৭ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে।
ব্রি ধান-১০৭ এর পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০৩ সেন্টিমিটার। ব্রি ধান-১০৭ এর গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন যা ব্রি ধান ৫০ এর সমান। এর ডিগ পাতা প্রশস্ত, খাড়া ও লম্বা এবং পাতার রং সবুজ। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৮.১৯ টন, তবে এটি অনুকূল পরিবেশে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে হেক্টর প্রতি ৯.৫৭ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। পিভিটি পরীক্ষায় দশটি অঞ্চলে ব্রি ধান-১০৭ এর ফলন চেক জাত ব্রি ধান-৫০ এর চেয়ে প্রায় ১৭.৬৭% বেশি পাওয়া যায়। এ ধানের গুণগতমান ভালো অর্থাৎ চালের আকৃতি অতি লম্বা চিকন (৭.৬ মি.মি.)। এ ধানের চালে অ্যামাইলোজ এবং প্রোটিনের পরিমাণ যথাক্রমে ২৯.১% এবং ১০.০২% এবং ভাত ঝরঝরে। ব্রি ধান-১০৭ এর ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন ২৬.১ গ্রাম। এ ধানের দানার রং খড়ের মতো এবং চাল অতি চিকন ও সাদা। উচ্চ ফলনশীল, অতি চিকন চাল ও ভাত ঝরঝরে হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ এ জাতটি চাষাবাদে ব্যাপক আগ্রহী হবে বলে আশা করা যায় এবং ফলশ্রুতিতে ব্রি ধান-১০৭ চাষে বাংলাদেশের সামগ্রিক ধান উৎপাদন বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রাখবে।
নতুন অনুমোদিত ব্রি ধান-১০৮ জাতটি বোরো মৌসুমে সারাদেশে চাষের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে। এই জাতের গ্রেইন টাইপ জিরা ধানের মতো। প্রতিটি ছড়ায় অধিক সংখ্যক ধান (২৫০-২৭০ টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত।
ব্রি ধান-১০৮ এর পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০২ সেন্টিমিটার। এর ডিগ পাতা খাড়া ও গাঢ় সবুজ, একই সাথে হেলে পড়া সহিষ্ণু এবং জীবনকাল ১৪৯-১৫১ দিন। এই জাতের গ্রেইন টাইপ জিরা ধানের মতো। জাতটি কৃষকদের ভালো বাজার মূল্য পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে উদ্ভাবন করা হয়ছে। ব্রি ধান-১০৮ এ উচ্চ ফলন ও ফাইন গ্রেইন এর সমন্বয় ঘটেছে। এ জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রতিটি ছড়ায় অধিক সংখ্যক ধান (২৫০-২৭০ টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত এবং গড় ফলন ৮.৭ টন, প্রতি হেক্টর। যা ব্রি ধান-১০০ জাতের চেয়ে ১.০-১.৫ টন বেশি। ব্রি ধান-১০৮ এর ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ১৬.৩ গ্রাম, চাল মাঝারি লম্বা ও চিকন যা জিরা চালের অনুরুপ, ভাত ঝরঝরে, রং সাদা এবং আ্যমাইলোজ ও প্রোটিনের পরিমাণ ২৪.৫% এবং ৮.৮%।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।