সৈয়দ বোরহান কবীরঃ প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। দুই মেয়াদে হোয়াইট হাউসে রাজত্ব করার পর এখন তিনি অবসরে। এ অখ- অবসরে গত বছর ‘এ প্রমিজড ল্যান্ড’ শিরোনামে একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ লিখেছেন। ৭৫০ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থে বারাক ওবামা তাঁর বেড়ে ওঠা, রাজনীতি, প্রেসিডেন্ট হিসেবে অবিশ্বাস্যভাবে মনোনয়ন এবং প্রেসিডেন্ট থাকাকালে চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ডেমোক্র্যাট দলের জনপ্রিয় প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ওই মনোনয়ন প্রাপ্তি প্রসংগে ওবামা লিখেছেন, ‘তুমি যদি লক্ষ্য স্থির কর তুমি কী চাও; তোমার যদি নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং মনঃসংযোগ থাকে তাহলে কোনো কিছুই তোমাকে হারাতে পারবে না। মানুষই অপরাজেয় হতে পারে তার কাজে এবং নিষ্ঠায়।’
এ প্রমিজড ল্যান্ডে বারাক ওবামার কথাগুলো বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বারবার সামনে চলে আসে। যখনই বাংলাদেশে সংকট ঘনীভূত হয়, শঙ্কা আর অনিশ্চয়তার মেঘ জমা হয় তখনই একজন মানুষ অদম্য দৃঢ়তা, কঠোর নিষ্ঠায় শঙ্কার মেঘ সরিয়ে দেন। যখনই মনে হয় সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে, দুঃসময়ের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে আমরা চোখ বন্ধ করি তখনই একজন ত্রাণকর্তা নিপুণ দক্ষতায় দুঃসময়ের দুঃস্বপ্ন দূর করেন। সেই মানুষটির নাম শেখ হাসিনা। একজন প্রধানমন্ত্রী কিংবা একজন রাজনৈতিক নেতার চেয়েও তাঁর বড় পরিচয় তিনি একজন যোদ্ধা, একজন অভিভাবক, একজন ক্রাইসিস ম্যানেজার। তিনি হার মানতে জানেন না। বাংলাদেশে এখন প্রায় সব মানুষই স্বীকার করবেন, হার না মানার নামই শেখ হাসিনা। করোনার টিকা প্রসঙ্গ দিয়েই শুরু করা যাক। বিশ্বে প্রথম যে দেশগুলো করোনা মোকাবিলার জন্য গণটিকা কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর এটা যে বাংলাদেশ পেরেছিল, তার কারণ শেখ হাসিনা। তিনি টিকার দাম কত দেখেননি, কত দ্রুত সব মানুষকে টিকা দেওয়া যায় সে পরিকল্পনা করেছেন।
বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর নতুন সংকট দেখা দিল। বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা নির্বাচন করেছিল। এ টিকা উপমহাদেশে উৎপাদনের দায়িত্ব পেয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। প্রধানমন্ত্রীর একক উদ্যোগ ও আগ্রহে সেরামের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় গণটিকা উৎসব। এর মধ্যে সমস্যায় পড়ে সেরাম ইনস্টিটিউট। কভিড টিকার কাঁচামাল তারা কেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। নিজেদের দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেরামকে কাঁচামাল রপ্তানি স্থগিত করে। সেরামের উৎপাদনে ছন্দপতন ঘটে। ভারত সরকারও নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। নিজের দেশের চাহিদা মেটানোর তাগিদ থেকে টিকা রপ্তানি সাময়িক স্থগিত করে। ভারতের এ সিদ্ধান্ত ভুল না সঠিক সে বিতর্ক এখানে আমি আনতে চাই না। ভারত বিমাতাসুলভ স্বার্থপরের মতো কেন আচরণ করল, সে প্রশ্নের উত্তরও আমি এ লেখায় খোঁজার চেষ্টা করব না। বাস্তবতা হলো, ভারত টিকা রপ্তানি স্থগিত করেছে। এর অনিবার্য নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। বাংলাদেশে গণটিকা কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এটি যখন ঘটল তখন আমরা দেখলাম সমস্যার সমাধান খোঁজার চেয়ে সমালোচনার ঝড়।
সরকারি দলের মন্ত্রী থেকে বিরোধী দল সবাই এক কাতারে দাঁড়াল। যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম থেকে টিকা আমদানির দায়িত্ব পেয়েছে তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও ভারতকে এক হাত নিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো আরও এক কাঠি সরস। সবাই আর্তনাদ আর আহাজারি শুরু করল। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও তাদের পুরনো বৃত্ত থেকে বেরোতে পারল না। বিএনপি মহাসচিব এমনভাবে কথাবার্তা বলা শুরু করলেন যে টিকার অভাবে দেশে মহামারী হবে। বিএনপি নেতার মধ্যে চাপা উল্লাস গোপন থাকেনি। ভারতবিরোধিতার এমন মোক্ষম সুযোগ তিনি হাতছাড়া করলেন না। সঙ্গে সরকারকে ধুয়ে দিলেন। তিনিও বললেন না সমাধান কী। বিএনপি কখনো সমাধানের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। সংকটেই তাদের স্ফীতি। ভারতের টিকা রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত এক অনভিপ্রেত বাস্তবতা। সবার উৎকণ্ঠাভরা বক্তব্যের সঙ্গে যুক্ত হলো গণমাধ্যমে টিকার সংখ্যাতত্ত্ব প্রকাশ। মানুষের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হলো, অস্বস্তি থেকে অস্থিরতা ডালপালা মেলতে শুরু করল। কী হবে? ভারত কেন এটা করল? ভারতকে বিশ্বাস করা যায় না কেন তার ফিরিস্তি দেওয়া শুরু করলেন গুণীজনেরা। সবাই বাংলাদেশের টিকা কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন (নাকি আনন্দিত)। বাংলাদেশ কি তাহলে হেরে গেল? বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে পন্ডিতরা টকশোয় যেভাবে টিকাহীন বাংলাদেশের রূপকল্প আঁকলেন তাতে ভয়ে শিউরে উঠল আমাদের মতো নগণ্য মানুষ। গুরুগম্ভীর আলোচনায় বলা হলো, ‘টিকা একমুখী টিকানীতি বাংলাদেশের ভুল কৌশল।’ কিন্তু একজন মানুষ এসব সমালোচনায় শঙ্কিত হলেন না।
তিনি শেষ পর্যন্ত লড়াই করেন। তিনি জানেন, বাংলাদেশ কখনো টিকার একক উৎসের ওপর নির্ভরশীল ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সমান্তরাল যোগাযোগ ছিল। শেখ হাসিনার উদ্যোগে ও নির্দেশে দ্রুত রাশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হলো। প্রধানমন্ত্রী চীনের সঙ্গেও যোগাযোগের নির্দেশ দিলেন। অনেকেই জানেন না টিকার বিকল্প উৎস চূড়ান্ত করতে শেখ হাসিনা কত নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। ম্যাজিকের মতো রাশিয়ার স্পুটনিক টিকা বাংলাদেশে আসার পথ উন্মুক্ত হলো। বলে রাখা ভালো, চিকিৎসাবিষয়ক সবচেয়ে মর্যাদাশীল গবেষণা সাময়িকী ল্যাসেন্টের এক নিবন্ধে স্পুটনিক-ভির ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। নিরপেক্ষ বিজ্ঞানীরা বলছেন, যতগুলো টিকা বিশ্বে এসেছে তার মধ্যে স্পুটনিক সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। বিশ্বে বিভিন্ন রোগের টিকা আবিষ্কারে বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের কীর্তি একটু খতিয়ে দেখা যাক। পোলিও, হামসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের ৭০ ভাগ টিকা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন একক অথবা যৌথভাবে আবিষ্কার করেছে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, চটজলদি কীভাবে রাশিয়ার টিকা আমদানির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হলো। এখানেই শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা। এখানেই তিনি অনন্য। প্রধানমন্ত্রী যে টিকা নিয়ে এক উৎসনীতি নেননি এটি তার প্রমাণ।
রাশিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকার দীর্ঘদিন ধরেই একটি নিবিড় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের কারণেই রাশিয়ার সহযোগিতায় রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কাজ চলছে। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির একনিষ্ঠ অনুসারী। ‘কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’। শেখ হাসিনা এ কূটনৈতিক দর্শন কেবল বিশ্বাস করেন না এর বাস্তবায়নও করেন। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রের সহযোগিতার কথা যখন বলি তখন বারবার ভারতের নাম উচ্চারণ করি। নিঃসন্দেহে ভারত ’৭১-এর প্রধান মিত্র। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতা ছাড়া কি আমাদের এ বিজয় এত দ্রুত হতো? জাতিসংঘে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা আমরা উপেক্ষা করব কীভাবে? ’৭১-এর বন্ধুরাই প্রকৃত বন্ধু এ সত্য শেখ হাসিনার চেয়ে কে বেশি উপলব্ধি করেন। চলতি মাসেই রাশিয়ার টিকা বাংলাদেশে আসবে। চীনের টিকাও এখন পাইপলাইনে। শুধু রাশিয়া নয়, চীনের টিকার ব্যাপারেও নিজস্ব উদ্যোগে খোঁজখবর রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী। চীনের সঙ্গে সবচেয়ে ভালো অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে শেখ হাসিনার শাসনামলেই। বাংলাদেশই বোধহয় বিশ্বে বিরল এক দেশ যারা ভারত ও চীনের সঙ্গে সমান্তরাল সম্পর্ক রেখেছে। এটাই হলো শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা। টিকা নিয়ে যারা টিপ্পনী কাটলেন তাদের কী হবে? তারা হয়তো একটি কথা নিজের অজান্তেই উচ্চারণ করবেন, শেখ হাসিনা হারতে জানেন না। তিনি অপরাজিতা।
বাংলাদেশে অনেকে বলেন, ধর্মান্ধ মৌলবাদ করোনার চেয়েও ভয়ংকর। মাস্ক পরলে, স্বাস্থ্যবিধি মানলে করোনা থেকে বাঁচা যায়। বিল গেটস আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘আগামী বছর হয়তো বিশ্ব স্বাভাবিক হবে।’ করোনা প্রতিরোধে টিকা এসেছে। সামনে হয়তো খাবার ওষুধও আসবে। তাই করোনার ব্যাধি সাময়িক। কিন্তু উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদের ব্যাধির কোনো চিকিৎসা নেই। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। আর এ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভিন্ন সময় মৌলবাদী গোষ্ঠী বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে। কখনো তারা এসেছে জামায়াতের নামে, কখনো হেফাজতের নামে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের দাপট নিঃশেষিত হয়েছে। এখন তারা পরগাছার মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গায়ে লেপ্টে অস্তিত্বের শেষ চেষ্টা করছে। জামায়াত যখন দেউলিয়া ঠিক তখনই হেফাজতের অভ্যুদয়। যারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়। যারা বাংলাদেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার মডেল রেখে উল্লসিত হয় জামায়াত তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় স্বাধীন দেশে বেড়ে উঠেছিল। ’৭৫-এর পর এরাই জামায়াতকে পুনর্বাসিত করেছিল। জামায়াতের মৃত্যুঘণ্টা যখন বাজে তখন এসব পাকিস্তানপন্থির ল্যাবরেটরিতেই ভূমিষ্ঠ হয় হেফাজত। যে উদ্দেশ্যে ৩০ লাখ শহীদের বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতক, ফ্যাসিস্ট জামায়াতকে পুনর্জন্ম দেওয়া হয়েছিল; ঠিক একই উদ্দেশ্যে হেফাজতকে তৈরি করা হয়। জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা যেমন শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, কোমলমতি অবুঝ কিশোরদের আত্মঘাতী বানায় ঠিক একই ফর্মুলায় হেফাজত মাদরাসার এতিম বাচ্চাদের ব্যবহার করে। নিঃস্ব, নিরীহ শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করে হেফাজত হয়ে উঠেছিল দানব। ২০১৩-এর পর থেকে আস্তে আস্তে হেফাজতের শক্তি বাড়তে থাকে। এর মধ্যেই সরকারের সঙ্গে হেফাজতের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে গুঞ্জন হয়। কওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি দেয় সরকার। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা কথা উঠেছিল। অনেকে বলার চেষ্টা করেন সরকারের আদরেই হেফাজত হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, ‘সরকার দুধ-কলা দিয়ে সাপ পুষেছে’। এ বছর মার্চে হেফাজত তার আসল রূপ দেখায়। হেফাজতের বীভৎস, দানব রূপের একঝলক দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। আবার দেশের মানুষ আর্তনাদ করে ওঠে।
যেন ‘মুক্তিযুদ্ধ হায় বৃথা যায় বিরানায়’। সর্বত্র একই আলোচনা- এখন কী হবে? হেফাজত কি বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানাবে? সরকার কি পারবে হেফাজতকে দমন করতে? নাকি সরকার হেফাজতের ভয়ে তাদের সব অপরাধ উপেক্ষা করবে। আবার যেন অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশ। খাদের কিনারে প্রিয় মাতৃভূমি। হেফাজতের তান্ডবে ল-ভ- আমাদের অর্জন। আবারও সব সমালোচনার তীর সরকারের দিকে। কিন্তু বাংলাদেশে একজন কান্ডারি আছেন। একজন প্রাজ্ঞ অভিভাবক আছেন। শেখ হাসিনা। তিনি যা বিশ্বাস করেন তা বলেন। যা বলেন তা করেন। নির্ভয়ে, দৃঢ়তার সঙ্গে। হেফাজতের বিরুদ্ধে এখন চলমান যে অভিযান তা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য। কীভাবে একটি সংগঠিত শক্তির এত বড় বড় নেতা আত্মসমর্পণ করল। গ্রেফতারের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত হানার বদলে তারা কেন তাদের কমিটি বিলোপ করল।
কেন তারা লেজ গুটিয়ে পালাল। কেন এতিম মাদরাসা শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলো না। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সততা ও মানবিকতার বিশ্লেষণ করতে হবে। কওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি প্রদান শেখ হাসিনা হেফাজতের ভয়ে করেননি। মানবতার জন্য করেছেন। হতদরিদ্র ভবিষ্যৎহীন মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য করেছেন। এখানেই তাঁর বিচক্ষণতা। শেখ হাসিনা মতলববাজ ধর্মব্যবসায়ীদের হাত থেকে মাদরাসার এতিমদের আলাদা করেছেন। তাদের জন্য সম্ভাবনাময় এক ভবিষ্যতের দরজা উন্মোচন করেছেন। তাই এ শিক্ষার্থীরা এখন তাদের স্বার্থপর লোভী শিক্ষকদের লাঠিয়াল হতে চায় না। দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারে এই মাদরাসা শিক্ষার্থীর সিংহভাগের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এভাবেই শেখ হাসিনা মৌলবাদী, নব্য রাজাকারদের বিষদাঁত ভেঙে দিলেন। রচনা করলেন হার না মানার আরেক উপাখ্যান।
আগামী ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক পূর্ণ হবে। এ চার দশকে তিনি সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য, ভাতের জন্য, অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতার জন্য। সংগ্রামের গতিপথ ছিল প্রতিকূল, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। তিনি কখনো এগিয়েছেন, কখনো পিছিয়েছেন। তাঁর পেছানো ছিল আরও কঠিন লড়াইয়ের জন্য বিজয় অর্জনের কৌশল। কখনো মনে হয়েছে শেখ হাসিনা কি ভুল করছেন? তিনি কি হেরে যাচ্ছেন? কিন্তু সময়ই বলে দিয়েছে তিনি অপরাজিতা। শেখ হাসিনাই তো সেই নেতা যিনি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে এক শান্তিপূর্ণ গণজাগরণে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা হলেন সেই রাজনীতিবিদ যিনি ১৯৯১-এর নির্বাচনে পরাজিত হয়েও জনগণের জন্য সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। বিএনপিকে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে যেতে বাধ্য করেছেন।
গ্রেনেড হামলা থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচেও যিনি মানুষের অধিকারের দাবিতে অটল থেকেছেন তাঁর নাম শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা হলেন সেই সাহসী মানুষ যিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দৃঢ়তা দেখিয়েছেন।
শেখ হাসিনা হলেন সেই সৎ রাষ্ট্রনায়ক যিনি বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা অভিযোগের জবাব দিয়েছেন নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করে। বারবার শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন তাঁর লক্ষ্যস্থির-মানুষের কল্যাণ। তাঁর নিষ্ঠা, একাগ্রতা আর মনঃসংযোগের সবটুকু এ দেশের জন্য, জনগণের জন্য। যেমনটি বারাক ওবামা তাঁর ‘এ প্রমিজড ল্যান্ডে’ বলেছেন। শেখ হাসিনা এক অসাধারণ যুদ্ধে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য এক মাতৃভূমি বিনির্মাণ করেছেন। এজন্যই শেখ হাসিনা অপরাজিতা।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।
ইমেইল : [email protected]
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।