আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তাররা যখন প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারে ব্যস্ত, তখন চিকিৎসকদের এবং নিজের মানসিক চাপ কমাতে বেডে শুয়ে রোগী গাইলেন গান। ‘মিলন হবে কত দিনে… আমার মনের মানুষেরই সনে…’ গান শুনতে শুনতেই একদিকে চিকিৎসকরা যেমন যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার সারলেন, তেমনি সেই গান গাইতে গাইতে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন মা। আপাতত মা ও সন্তান উভয়ই সুস্থ আছেন। শুধু মাত্র চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য কর্মীরাই নন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সেই গান ছুঁয়েছে আপামর জনতার হৃদয়।
মেডিকেল টিম এবং রোগীর মানসিক চাপ মুক্তির লক্ষ্যে এই উদ্যোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। পশ্চিমা দেশগুলিতে এমন ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু ভারতসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বিষয়টা এখনো সড়গড় নয়।
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুর হরিপুর এলাকার সংগীত শিল্পী গৌতম মন্ডল ও তার স্ত্রী চন্দ্রা পোদ্দার মন্ডল। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতের দিকে চন্দ্রাকে ভর্তি করানো হয় শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। পূর্বের চিকিৎসা সম্পর্কিত সব নথি দেখে, হাসপাতাল থেকে জানানো হয় রোগীর কমপ্লিট প্লাসেন্টা প্লিডিয়া অর্থাৎ জরায়ুর ফুল প্রসব মুখে আটকে রয়েছে। এ ধরনের অপারেশনে প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে ব্লাড-ব্যাংকবিহীন শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে অপারেশন করানো এক কথায় ছিল যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। তবে রোগীর স্বামী গৌতম মন্ডল এই হাসপাতালের চিকিৎসক মহিলা বিশেষজ্ঞ ডা. পবিত্র ব্যাপারীর একের পর এক সাফল্যের কথা জানতেন, আর সেই কারণেই তিনি অন্য কোথাও না গিয়ে এই হাসপাতালের উপরেই ভরসা রাখেন।
এরপর ডা. ব্যাপারী হাসপাতাল সুপারিন্টেন্ড ডা. তারক বর্মনের সাথে আলাপ করে, রক্তক্ষরণ কম হওয়ার ইনজেকশন দেন। পাশাপাশি প্রয়োজনে রক্ত জোগান রাখার কথা বলা হয় পরিবারের সদস্যদের।
এরপর বুধবার সফলভাবে অস্ত্রপ্রচার সম্ভব হয়। প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকের অনুরোধে নিজের গলায় লালনগীতি শোনান রোগী। শেষে চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক কন্যা সন্তান জন্ম দেয় তন্দ্রা।
রোগীর গলায় গাওয়া গান শুনে অপারেশন থিয়েটারে থাকা চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে সব সদস্যরাই অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
সফল এই অস্ত্রোপচারের পর ডা. ব্যাপারীকে ‘ঈশ্বর’ বলে আখ্যায়িত করেন নবজাতকের বাবা গৌতম মণ্ডল। তিনি বলেন, এসব বিদেশে সম্ভব হয় জানতাম, তবে আমাদের হাসপাতালে এ ধরনের ঘটনা বিরল এবং আশ্চর্যের।
যদিও ডা. ব্যাপারী অবশ্য এই সফলতার পেছনে অ্যানাস্থিসিয়ার ডক্টর টিনা মনি বিশ্বাস, গাইনি ওটি ফুল টিম, সিস্টার স্টাফ এবং মেটারনিক ওয়ার্ডের সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের মিলিত প্রচেষ্টা বলেই জানিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।