জুমবাংলা ডেস্ক : দেশে প্রথমবারের মতো অফশোর ব্যাংকিং আইন করছে সরকার। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) জাতীয় সংসদে বিল পাস করা হয়েছে। তবে এ আইনের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ‘অফশোর ব্যাংকিং বিল-২০২৪’ পাসের জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাইবাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য সেলিম মাহমুদ, শফিকুল আলম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বিলে সংশোধনী প্রস্তাব করেন।
বিলের কারণ ও উদ্দেশ্যে বিস্তারিত না থাকায় বিলটির সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, অফশোর ব্যাংকিং সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। আমার মনে হয় না সরকার ও বিরোধীদলের এমপিদের আইনটি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা আছে। আইনটির সুবিধা কী আর অসুবিধা কী তা সরকারের কাছে জানতে চান তিনি।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অফশোর ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমুদ্র দূরবর্তী তীরে বাহামা দ্বীপের মতো দ্বীপে সেখানে বড় বড় চোররা, রাঘব-বোয়ালরা, রাষ্ট্র নায়কেরা, চোরকারবারিরা অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হালাল করে তারপর বিদেশে ট্রান্সফার করত। বাংলাদেশেরও কোনো কোনো ব্যক্তির নাম এসেছে পত্রিকায়। তারাও অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হালাল করেছেন, বিদেশে বাড়ি করেছেন, হোটেল করেছেন। যে সমস্ত চোররা বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে তারা যদি এ ফাঁকে কর ছাড়া টাকা ফেরত আনেন ভালো। টাকা পাচারকারীরা ফেরত আনবে বলে মনে হয় না। তিনি অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার বাড়ার আশঙ্কা করেন।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অফশোর ব্যাংকিং সম্পর্কে আমরা যেটা শুনি, বিভিন্ন জায়গায় আছে টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার করে বারমুড়া, এখানে-সেখানে রাখা হয়। এ ব্যাংকিং সম্পর্কে আমাদের নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেছে। এ আইনের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ট্যাক্স ফ্রি আসতে পারবে। তবে আইনটির তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন মাসুদ উদিন চৌধুরী।
সংশোধনী আলোচনায় হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কী অবস্থা? আমরা দেখতেছি সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের কঠিন অবস্থা। সাধারণ মানুষ যদি তাদের টাকা তুলে নেয় ব্যাংকগুলোর চালানোর গতি নেই।
তিনি বলেন, দেশীয় ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকি করবে কি না জানি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকাই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তারা নিজেরাই খোঁজ রাখে না।
বিলে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং অর্থ বহিউৎস এবং অনুমোদিত বিশেষায়িত অঞ্চলে পরিচালিত শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রাপ্ত তহবিল দিয়ে এই আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিবাসী বা ক্ষেত্রমতো বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তির সঙ্গে পরিচালিত ব্যাংকিং কার্যক্রম।
তপশিলি ব্যাংকগুলো অফশোর ব্যাংকিং করতে পারবে। এ বিষয়ে বিলে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট তপশিলি ব্যাংক পর্ষদের অনুমোদিত নীতিমালা থাকতে হবে। তপশিলি ব্যাংকের অফশোর কার্যক্রমের জন্য পৃথক হিসাবপত্র সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদনে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিট থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে তহবিল স্থানান্তর করা যাবে বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট যে কোনো অনুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব পরিচালনা করতে পারবে। অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট কর্তক আমানতকারী বা বেদৈশিক ঋণদাতাগণকে প্রদেয় সুদ বা মুনাফা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করমুক্ত থাকবে। আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের হিসাব যে কোনো প্রকাশ শুল্ক ও লেভিমুক্ত হবে।
আইন না থাকলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশে একভাবে অফশোর ব্যাংকিং চালু আছে ১৯৮৫ সাল থেকে। পরে ২০১৯ সালে অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর কয়েকটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। এখন এ বিষয়ে আইন করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।