জুমবাংলা ডেস্ক: অবশেষে পুলিশে চাকরী পাচ্ছেন খুলনার সেই ‘ভূমিহীন’ মেয়ে মিম। সাধারণ নারী কোটায় মেধা তালিকায় প্রথম হয়েও জমি না থাকায় পুলিশে চাকরি পাচ্ছিলেন না খুলনার মিম আক্তার। তবে সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে পুলিশ কনস্টেবল পদে ট্রেনিংয়ের জন্য ডাকা হয়েছে মিমকে।
শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর খুলনা টেক্সটাইল মিল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মিকাইল প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের নোটিশপত্রটি মিমের হাতে তুলে দেন।
এর আগে শনিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে মিমকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো, পুলিশ ভেরিফিকেশনে স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় মেধা তালিকায় প্রথম হলেও চাকরিটি তাকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলো মিমের পরিবার।
ঘটনাটি নিয়ে ওইদিনই সংবাদ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে। দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন মিম। মিমকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করে পুলিশ বিভাগ। পাশে দাঁড়ান খুলনা জেলা প্রশাসকও।
মিম আক্তার খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ৩ নম্বর আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোডে ডাক্তার বাবর আলীর বাড়ির ভাড়াটিয়া। ১৯৮৮ সাল থেকে এই রোডের আশপাশে বিভিন্ন স্থানে ভাড়াটিয়া হিসেবে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন মিমের বাবা রবিউল ইসলাম। খুলনার বয়রা ক্রস রোডে ছোট্ট একটি ভাড়াটে দোকান নিয়ে লেপতোশকের ব্যবসা করেন তিনি। দোকানটির নাম বেডিং হাউজ।
মিমের বাবা মো. রবিউল ইসলাম জানান, দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে খুলনাতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছি। মিমের জন্মও খুলনাতে। জন্ম সনদে ঠিকানা দেয়া হয়েছে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নাম। এখানে আমাদের কোনো জমি নেই। স্থায়ী জমি না থাকায় মিমের চাকরিটা হচ্ছিলো না। তবে সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতায় সবার মুখে মুখে আলোচনা হওয়ার পর চাকরিটা পেয়েছে মিম। শুক্রবার সন্ধ্যার পর টেক্সটাইল মিল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মিকাইল আমাকে ও মিমকে ডেকে একটি নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশে মিমকে পুলিশ ট্রেনিংয়ের জন্য ডাকা হয়েছে। জেলা প্রশাসক স্যার ঘর দেবেন বলেও জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি খুব গরীব মানুষ। যারা সহযোগিতা করেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
মিম আক্তার চাকরিটা ফিরে পেয়ে আনন্দে আপ্লুত। মিম বলেন, চাকরি ফিরে পেয়ে আমার ভালো লাগছে। আমি বুঝেছি গরীবের কষ্টটা কেমন? পুলিশের দায়িত্ব পালনকালে যদি কখনো অসহায় মানুষ সামনে আসে তবে তার প্রতি আমার সহমর্মিতা অবশ্যই থাকবে। তাদের পাশে দাঁড়াবো। যারা আমার বিপদের দিনে পাশে দাঁড়িয়েছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
খুলনা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর আহম্মেদ জানান, পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সাধারণ নারী কোটায় মেধা তালিকায় প্রথম হয় মিম আক্তার। তবে পুলিশ ফেরিফিকেশনে স্থায়ী ঠিকানা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। আমরা ঘটনাটি পুলিশ হেড কোয়ার্টারকে জানাই। অবশেষে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশনায় মিমের আবেদন আমরা গ্রহণ করেছি। ট্রেনিংয়ের জন্য মিমকে ডাকা হয়েছে। ট্রেনিং শেষে মিম চূড়ান্ত নিয়োগপত্র পাবেন।
স্থায়ী ঠিকানার যে সমস্যা ছিলো সেটার সমাধান কীভাবে করলেন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে জানতে হবে। আমরা শুধু নির্দেশনা পালন করেছি।
উল্লেখ্য, মিমের বাবা রবিউল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থানার বড়বাড়িয়া গ্রামে। বাবা আব্দুল লতিফ শেখ এখনো জীবিত রয়েছেন। ভিটেবাড়ির জমিটুকুও মিমের দাদা আব্দুল লতিফের নামে রয়েছে। অভাব অনটনের দায়ে পরিবার নিয়ে গত ৩২ বছর খুলনা শহরে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন মিমের বাবা আব্দুল লতিফ।
মিমকে দেয়া নোটিশে দেখা যায়, মিমকে আগামী ২৯ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় খুলনার পুরাতন পুলিশ লাইন্সের রিজার্ভ অফিস এবং পরের দিন (৩০ ডিসেম্বর) রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
শিক্ষকের অস্বাভাবিক মৃত্যু: কুয়েটে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৯ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।