জুমবাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) হলে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন বড় ভাই আবরার ফাহাদ। সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। গত ৩০ জুন ফল প্রকাশের পর এখানে ভর্তি হবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন তিনি।
বুধবার ২টা ২১ মিনিটে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির সিদ্ধান্তের কথা জানান ফাইয়াজ।
জুনিয়র আবরার লেখেন, ‘পরিবারের মতামতের ভিত্তিতে আমি বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেহেতু আপনারা অনেকেই নিজেদের মতামত জানিয়েছিলেন, তাই এই ব্যাপারটা আপনাদের জানানো।’
বুয়েটে স্নাতক ভর্তির ফলাফলে আবরার ফাইয়াজ ৪৫০তম হয়ে যন্ত্রকৌশল বিভাগে চান্স পেয়েছেন। এ ছাড়া তিনি এমআইএসটি, আইইউটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন। কোথায় ভর্তি হবেন দ্বিধায় থাকলেও সবশেষে নিজের ইচ্ছেতেই বুয়েটে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ফাইয়াজ ফেসবুকে বলেন, ‘সত্যি বলতে বাসার কেউই সরাসরি আইইউটি অথবা বুয়েট এমন কিছু বলেনি। প্রায় সবাই বলেছে যেখানে আমার ইচ্ছা, সেখানেই ভর্তি হতে। তাই বলা যায়, আমার ইচ্ছা অনুসারেই এখানে ভর্তি হতে চাওয়া।’
‘তবে আইইউটি পরিবেশ আর প্রশাসন সবকিছুই খুবই ভালো লেগেছে আমাদের। বিশেষ করে আইইউটি কর্তৃপক্ষ খুবই হেল্পফুল পেয়েছি। বুয়েট যেখানে পুরোই বিপরীত বলা যায়।’
বুয়েট আর আইইউটিতে সুযোগ পাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে তিনি আর ভাবেননি বলে জানান। ‘কারণ সেখানে পরিবেশ খুবই নোংরা এবং রাজনীতি সবচেয়ে বেশি। আমার ভাইয়ার ইচ্ছা ছিল এখানে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বুয়েটে হয়ে যাওয়ায় এখানে পড়িনি।’
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নিহত হন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ।
তাই সেখানে ভর্তি হলে সেখানকার নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে চিন্তিত নন বলেও উল্লেখ করেন ফেসবুকে। ফাইয়াজ বলেন, ‘একটা বিষয় আসলে পরিষ্কার করার দরকার, সবাই প্রথম থেকেই যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন বুয়েটে গেলে নিরাপত্তার ব্যাপারে, এটা আসলে আমি কখনই ভাবিনি।
সুযোগ পেলে শেরেবাংলা হলে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আবার ভাইয়ার কথা মনে পড়বে, এ জন্য মানসিকভাবে ভেঙে পড়ব, এ রকম কিছু নিয়েও চিন্তিত ছিলাম না আসলে। আমার ইচ্ছা আছে ভাইয়ার শেরেবাংলা হলেও সিট পেলে থাকব।’
ফাইয়াজ ফেসবুকে আরও বলেন, ‘আপনারা অনেকেই আমাকে নিজের ছোট ভাই ভেবে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। অনেকেই অনেক কিছু বোঝানোর জন্য নিজেদের মূল্যবান সময় ব্যয় করেছেন। আমি সত্যিই আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
‘আর কিছু মানুষের ধন্যবাদ একটু বেশিই প্রাপ্য। তারা হলেন আমার শিক্ষকরা। সত্যি বলতে, গত প্রায় ২ বছর ৯ মাসে আমি যেখানেই এক দিন হলেও পড়েছি, প্রত্যেকেই নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে আমাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়ে গেছে। আমি আসলে অবাক হয়ে গেছি বেশ কিছু ক্ষেত্রে যে আমাদের প্রথমবার দেখা হয়েছে কিন্তু তাদের ব্যবহারে মনে হয়েছে যেন আমরা কত পরিচিত। আর পড়ালেখার বিষয়ে তাদের অবদান তো ছিলই। এমনকি সাবজেক্ট পছন্দের ক্ষেত্রেও তারা অনেক সাহায্য করেছেন। আল্লাহ তাদের প্রত্যেককেই ভালো, সুস্থ রাখুক এটাই চাই সব সময়। দোয়া করবেন যেন আল্লাহ আমাকে সঠিক পথ দেখান সব সময়।’
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর ছোট ছেলে ফাইয়াজকে ঢাকা কলেজ থেকে এনে তার মা কুষ্টিয়া কলেজে ভর্তি করেন। ফাইয়াজকে তিনি নিজের কাছেই রেখে দিতে চেয়েছিলেন।
আবরারের বাবা-মা ও ছোট ভাই কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডে বাস করেন।
বাবা চাতালে, মা কাজ করেন অন্যের বাড়িতে, ছেলে পেলেন বুয়েটে সুযোগ
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.