জুমবাংলা ডেস্ক : দীর্ঘদিন ধরে আমানতের সুদ হার কম থাকায় অনেকেই ব্যাংকবিমুখ ছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধীরে ধীরে বাড়বে আমানতের সুদ। অবশ্য বেঁধে দেওয়া আমানতের সুদ হারের সীমা আগেই তুলে নেওয়া হলেও ঋণের সুদহারের সীমা থাকায় এতদিন আমানতের সুদ বাড়াতে পারেনি ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোরবানির ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কার্যদিবস থেকেই বেড়েছে সব ধরনের ব্যাংক ঋণের সুদহার।
ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণের সুদহার বাড়লে আমানতের সুদহারকে তা আরও ঊর্ধ্বমুখী করবে। বর্তমানে আমানতের বিপরীতে গড় সুদ ৬ শতাংশের ঘরে রয়েছে। তবে তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা অনেক ব্যাংক ৮ শতাংশ সুদেও আমানত সংগ্রহ করছে।
সুদহারের বিদ্যমান সীমা তুলে দেওয়ার পেছনে মূল্যস্ফীতির উচ্চ হারের রাশ টেনে ধরাকে প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী ছয় মাসের মুদ্রানীতিতে তেমন ইঙ্গিতই দেওয়া হয়েছে। দেশের অর্থনীতিবিদরা যদিও অনেক আগ থেকেই সুদহার বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন।
প্রসঙ্গত, নতুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের মুদ্রানীতি অনুসরণ করেই ঋণের সুদহারের সীমা উঠে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফর্মুলা অনুযায়ী একেবারে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা উঠে যাচ্ছে না। সুদের হার নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘স্মার্ট’ পদ্ধতি চালু করে তা বাজারভিত্তিক করার কথা যেমন বলছে, তেমনি কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কত বেশি সুদ নিতে পারবে তা বেঁধে দিয়েছে।
নতুন সুদহার গ্রাহক পর্যায়ে বাস্তবায়নে মাস খানেক সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্ক এবং নতুন ঋণ দিতে আলোচনা ও দরকষাকষির মাধ্যমে একটা পর্যায়ে আসতে সময় লাগবে বলে তাদের ধারণা।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকগুলোর এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)-এর সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুদহার বাড়াতে গেলে কিছু গ্রাহকের পক্ষ থেকে আপত্তি আসতে পারে। ফলে এটি সমন্বয় করতে ও প্রভাব বুঝতে কিছুটা সময় লাগবে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মে মাসের স্মার্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যাংকের বড় ঋণের সর্বোচ্চ সীমা হবে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ, ছোট ঋণে তা ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং এনবিএফআইর বেলায় তা ১২ শতাংশের ঘরে থাকতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জুন মাসের ‘স্মার্ট’ সুদহার ঘোষণা করেছে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, যা জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য কার্যকর হবে। তাতে বড় ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। পুরনো ঋণের পাশাপাশি জুলাই মাসে আসা নতুন গ্রাহকের বড় ঋণের ক্ষেত্রে এই সুদ হার প্রযোজ্য হবে, যা আগামী ডিসেম্বরের আগে বদলাবে না।
একইভাবে আগামী অগাস্ট মাসে নতুন ঋণ বিতরণের সময়ে জুলাই মাসের ঘোষিত ‘স্মার্ট’ রেট প্রযোজ্য হবে। তখন সুদহার বাড়লে বা কমলে পুরোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে সুদ হারে কোনও পরিবর্তন আসবে না।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি মাসের ১ তারিখে আগের মাসের ‘স্মার্ট’ রেট ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা ওই মাসের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ছয় মাসের জন্য কার্যকর থাকবে।
বড় অঙ্কের ঋণের ক্ষেত্রে এই স্মার্ট সুদ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। আর সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ করে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে সুদ হারের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশের সীমা উঠিয়ে ‘রেফারেন্স রেট’ পদ্ধতিতে সুদহার নির্ধারণের কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ১ জুলাই থেকে তা কার্যকর হয়। এদিন থেকে ঋণ সুদহারের সঙ্গে বাড়বে আমানতের সুদহারও। বর্তমানে আমানতের বিপরীতে গড় সুদ ৬ শতাংশের ঘরে রয়েছে। তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা ব্যাংকগুলো ৮ শতাংশ সুদেও আমানত সংগ্রহ করছে। গত মে মাসের স্মার্ট সুদহার ছিল ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ।
কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহার সাধারণ ঋণের চেয়ে ১ শতাংশ কম হবে। সেক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ মার্জিন যোগ হবে। এতে এ খাতের সুদহার আগামী ছয় মাসের জন্য হবে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ।
নতুন সিদ্ধান্তে গ্রাহক পর্যায়ে বড় ঋণের চেয়ে ছোট ও মাঝারি ঋণের সুদহার বাড়বে। ব্যক্তিক্ষেত্রে গৃহঋণ (জমি-ফ্ল্যাট), ভোক্তা ঋণ (গাড়ি, আসবাব, মোটরসাইকেলসহ কিস্তিতে যেকোনও পণ্য ক্রয়ে নেওয়া ঋণ) এর সুদ ব্যয় আগের চেয়ে বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাত এবং ভোক্তা ঋণের আওতায় ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংক আরও ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ যোগ করতে পারবে। এই সুপারভিশন চার্জ বছরে সর্বোচ্চ একবার যোগ হবে। এসব খাতে ব্যাংক ঋণের সুদহার দাঁড়াবে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ।
গ্রাহকের সম্মতির ভিত্তিতে ব্যাংক স্থির বা পরিবর্তনশীল যেকোনও একটি সুদহার ঠিক করতে পারবে। অর্থাৎ ব্যাংক চাইলে সর্বোচ্চ মার্জিনের মধ্যে যেকোনও একটি অঙ্কে সুদহার নির্ধারণ করে দিতে পারে। তবে কোনও ব্যাংক ছয় মাসের আগে কোনও গ্রাহকের সুদহার বদলাতে পারবে না। সুদহার বদলের আগে গ্রাহককে অবশ্যই জানাতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।