বাংলাদেশে অবৈধ মোবাইল ফোনের ব্যাপক প্রবাহ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার কার্যকরী পদক্ষেপের ঘোষণা এলেও পরিস্থিতি বদলানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন সচেতন মহল বলছেন, অবৈধ মোবাইল ফোনের ব্যবহার দেশে ব্যাপক আকারে আসক্তি তৈরি করছে, যা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। অথচ, বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠিত সংস্থা তাদের নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়ে মোবাইল তৈরি করেও সঠিক মার্কেট ও সুযোগ পাচ্ছে না, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশীয় উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
অবৈধ মোবাইল ফোন বাজার: সমস্যার গভীরতা
বাংলাদেশের আইন প্রণেতা, বিশ্লেষক এবং মিডিয়া রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ অবৈধ মোবাইল ফোন দেশে প্রবেশ করছে। এসব ফোনের মাধ্যমে ৮০০ থেকে ১২০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। এনবিআরের উপাত্ত মতে, এই চোরাই ফোনগুলোর অধিকাংশের আইএমইআই নম্বর নেই বা জাল, যা দেশের সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুতর হুমকি। ২০২৩ সালে চালু হওয়া NIRMS (আইএমইআই রেজিস্ট্রেশন) সিস্টেম যদিও প্রবর্তন করা হয়েছে, প্রশাসনিক স্তরের নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এটি কার্যকর হচ্ছে না।
Table of Contents
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বাজারে অবৈধ মোবাইল ফোনের আসল কারণগুলোর একটি হলো দেশের প্রভাবশালী মহল। সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অংশ এই অবৈধ ফোন ব্যবহার করছে, যা সরকারের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করছে। সরকারপক্ষের মধ্যে নীতিগত দ্বন্দ্বও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
সরকারের অপর্যাপ্ত কার্যক্রম
সরকারি সূত্র বলছে, প্রতিবছর প্রায় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ। কর্মকর্তাদের মধ্যে, যারা নিজেই অবৈধ ফোন ব্যবহার করছেন, তারা কখনোই চোরাচালানের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী নয়। দেশের অসাধু কর্মকর্তা এবং সিন্ডিকেটের মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, যা মোবাইল ফোনের বাজারে অবৈধ প্রবাহকে আরও বৃদ্ধি করছে।
সরকারিত নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা হচ্ছে শুল্ক ও ভ্যাটের সুবিধা। কিন্তু এ সুবিধা শুধুমাত্র আমদানিকারকদের জন্য প্রদান করা হচ্ছে, দেশের দক্ষ উৎপাদকদের জন্য নয়। এই পরিস্থিতি আমাদের দেশীয় শিল্পকে চাপে রাখছে এবং অপরিকল্পিত বৈদেশিক নির্ভরতার সৃষ্টি করছে।
ভারত থেকে প্রবাহিত অবৈধ ফোন
শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও অবৈধ মোবাইল ফোনের প্রবাহ বেড়ে চলেছে। ভারতীয় বাজারের অধিকাংশ মোবাইল উৎপাদনের জন্য সহায়ক নীতির অন্তরালে বাংলাদেশের শিল্পকে চাপের মুখে রাখা হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, সরকারের মনোভাব এবং নীতির দ্বন্দ্ব দেশের স্থানীয় মোবাইল উৎপাদকদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠছে।
চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
কাস্টমস, বিটিআরসি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, এই সংকট মোকাবেলার জন্য যদি নীতি-নির্ধারকরা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন, তবে অবৈধ মোবাইল বাজার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। কিছু অসাধু কর্মকর্তা সরকারী সংস্থার মধ্যেই কাজ করছেন যারা অবৈধভাবে মোবাইল ফোনের চোরাকারবারে যুক্ত।
এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন এই সংকটের সমাধান হচ্ছে না? একজন স্থানীয় মোবাইল উৎপাদনের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বলেন, “অবৈধ ফোনের বাজারে ছড়িয়ে পড়া আমাদের সত্যি বিপর্যস্ত করছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজনীয় সক্রিয়তা দেখতে চাই।”
বাংলাদেশের বাজারের প্রভাবশালী মহলের সদস্যদের সাহায্যে অবৈধ মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারের উচিত অবৈধ ফোন ব্যবহারে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া সহ দেশীয় শিল্পের উন্নয়নেও সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার।
শীঘ্রই যদি এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে বাংলাদেশের মোবাইল শিল্পের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে উঠতে পারে।
মূলাবিষয়বস্তু:
- দেশে প্রতি বছরে ৩০-৪০ লাখ অবৈধ ফোন প্রবাহিত হচ্ছে।
- রাজস্ব ফাঁকি ৮০০-১২০০ কোটি টাকা।
- ক্ষমতাসীন মহলের অসহযোগিতা।
- ভারত থেকে অবৈধ মোবাইল ফোনের প্রবাহ বাড়ছে।
- স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য শুল্ক ও ভ্যাটের সুবিধা।
FAQs
1. বাংলাদেশে অবৈধ মোবাইল ফোন কেন সমস্যার সৃষ্টি করছে?
অবৈধ মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের রাজস্ব হারাচ্ছে এবং স্থানীয় উৎপাদকদের বাজারে প্রবেশ সমস্যায় পড়ছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
2. কত অবৈধ মোবাইল ফোন প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়?
প্রতিবছর বাংলাদেশে আনুমানিক ৩০-৪০ লাখ অবৈধ মোবাইল ফোন প্রবাহিত হয়।
3. অবৈধ মোবাইল ফোনগুলোর আইএমইআই নম্বর কেন জাল হয়?
অবৈধ ফোনের আইএমইআই নম্বর জাল করার কারণ হলো তাদের নিবন্ধন নেই এবং সেগুলি বাজারে সহজেই প্রবাহিত হচ্ছে।
4. NIRMS সিস্টেম কার্যকর হচ্ছে না কেন?
NIRMS সিস্টেমের কার্যকরী প্রতিষ্ঠা সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের অভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকে এখনও অবৈধ মোবাইল ব্যবহার করতে চাইছেন।
5. সরকারের উচিত কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা?
সরকারকে অবৈধ মোবাইল ফোনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দেশীয় উৎপাদনকে সমর্থন করতে হবে।
6. অবৈধ মোবাইল ফোনের বাজার থেকে দেশের লাভ কী?
অবৈধ মোবাইল ফোনের বাজার থেকে বিদেশি সংস্থাগুলো লাভবান হচ্ছে, কিন্তু এতে দেশের তরুণ প্রজন্ম ও শিল্পের উন্নতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।