জুমবাংলা ডেস্ক : মো. আবুল কাশেম ওরফে জীবন ব্যাপারী। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর বাসিন্দা। এক সময় বাংলা সিনেমায় (চলচ্চিত্রে) অভিনয় করেছেন। অধিকাংশ সিনেমায় তার ভূমিকা ছিল পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। কখনো পুলিশ পরিদর্শক ভূমিকায়। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন জীবন। সেখান থেকে পুলিশ সদস্যদের কাজ-কর্ম, আচরণ, গতিবিধি ইত্যাদি অনুসরণ করে সেটাকে পরবর্তী সময়ে কাজে লাগিয়ে হয়ে যান বাস্তব জীবনের ভুয়া ডিবি পুলিশ। চলচ্চিত্রে পার্শ্ব ভূমিকায় অভিনয় করে যে টাকা কামাতেন তাতে পোষাতো না প্রতারক জীবনের।
এক সময় জড়িয়ে পড়েন অন্ধকার জগতের বাসিন্দাদের সঙ্গে। সম্প্রতি ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মো. বারেক ও মো. স্বপন আকন্দের সঙ্গে জীবন ব্যাপারীও গ্রেপ্তার হন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চক্রের মূল হোতা মোহাম্মদ বারেকের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার চর মহেশখালী এবং অন্য সদস্য স্বপন আকন্দের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর উত্তর ভাদুরায়। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ছিনতাইয়ের কাজে যুক্ত ছিল। প্রায় দশ বছর আগে জেলখানাতেই তাদের পরস্পরের পরিচয় এবং বন্ধুত্ব হয়।
২০০০ সালের পর থেকে তারা ৮ থেকে ১০ বার গ্রেপ্তার হয়েছে। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে আবার বেরিয়ে গেছে। জেলখানা ছিল তাদের অপরাধ বিদ্যার অন্যতম বিদ্যাপীঠ বা মহাবিদ্যালয়। কিছু দিন জেলে থেকে জামিনে বেরিয়ে পুনরায় ছিনতাইয়ের কাজে জড়ায়। এক সময় তারা ছিনতাইয়ের কাজ ছেড়ে ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কাজ শুরু করে। থানায় পুলিশি রিমান্ডে ও জেলখানায় পুলিশ তাদের সঙ্গে যেমন যেমন আচরণ করতেন তারা সেই অভিজ্ঞতাকে পরবর্তীতে কাজে লাগায়। ডিবি পরিচয়ে ছিনতাইকালে দেশীয় পিস্তল, কার্তুজ, ডিবি লেখা জ্যাকেট ও বেতার যন্ত্র ওয়াকিটকি (ওয়্যারলেস সেট) ব্যবহার করতো। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার, মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়াসহ যাবতীয় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তারা যুক্ত ছিল। সর্বশেষ গত ৬ই সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে নগদ ১৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে রিকশাযোগে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তারকৃতরা তাকে ডিবি পরিচয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সঙ্গে থাকা নগদ টাকা কেড়ে নিয়ে রাস্তায় ফেলে যায়।
গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, তাদের মধ্যে মূল নেতৃত্বদানকারী হচ্ছেন, শরীয়তপুরের মোহাম্মদ বারেক। ১৯৯৮ সালের প্রথম দিকে দীর্ঘ সময় সে রাজধানীর বনানী, পল্টন এবং আরামবাগের বিভিন্ন রেস্তরাঁয় কাজ করতো। এক সময় সেখান থেকে আরামবাগ ক্লাবে জুয়া, হাউজি খেলায় জড়িয়ে পড়ে। এভাবেই তার অন্ধকার জগতের যাত্রা শুরু। তার রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। যেহেতু অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা পাওয়া যায় তাই তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা ডিবি পরিচয়ে ছিনতাই-ডাকাতি করে আসছিল। এখন পর্যন্ত ক্যান্টনমেন্ট, ওয়ারি থানাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে বারেকের বিরুদ্ধে এজাহার ছাড়াই প্রায় ১৬ থেকে ১৭টি মামলা হয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে বাইনেমে (সরাসরি তার নামে মামলা) সে ডিবিতে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়। বারেকের স্ত্রী তার অপরাধ সম্পর্কে জানতে পেরে এক সময় তাকে ডিভোর্স দিয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে যান।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এই অপরাধী চক্রের মূল টার্গেট হচ্ছে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী, মানিচেঞ্জ দোকান, নগদ টাকা বহনকারী ব্যক্তিরা। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ইতিমধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে। প্রথমে চক্রের একজন সদস্য ব্যাংকের আশেপাশে এবং ব্যাংকের ভেতরে গিয়ে গ্রহীতার টাকার পরিমাণ দেখে মোবাইল ফোনে দলের অন্য সদস্যদের জানায়। এরপর টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিকে অনুসরণ করে সুবিধাজনক স্থানে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। গ্রহীতার সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে সড়কের পাশে হাত-পা বেঁধে ফেলে রেখে যায়। সম্প্রতি ডিবির (ডেমরার জোনাল টিম) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুুকুলের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুুকুল বলেন, বারেকের বিরুদ্ধে ১৭টি, কাশেমের বিরুদ্ধে ৭টি এবং স্বপনের বিরুদ্ধে ৯টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এখন পর্যন্ত প্রায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকা ছিনতাই করেছে তারা। অভিযুক্তরা ২০০৪ সাল থেকে পেশাদার ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়। তাদের অপরাধের স্কুলিং বা হাতেখড়ি মূলত জেলখানা থেকে শুরু।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।