জুমবাংলা ডেস্ক: আগের মতো সমৃদ্ধি নেই প্রাচীন নদী ইউফ্রেটিসের। আজ থেকে প্রায় ৬ হাজার বছর আগে এশিয়া মহাদেশের বুকে গড়ে ওঠা মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করেছে এই নদীকে। ইতিহাসের পাতায় মেসোপটেমিয়া বা ব্যাবিলনীয় বা সুমেরীয় সভ্যতার গুরুত্ব অপিরিসীম। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এই সভ্যতা এবং সেখানকার মানুষজন নিয়ে ইতিহাসবিদদের আগ্রহের শেষ নেই।
টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস, মূলত এই দুইটি নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল মেসোপটেমিয়া সভ্যতা। এই অংশের বর্তমান নাম ইরাক। ইরাকে প্রাচীন ইউফ্রেটিস নদী আজও বহমান। টাইগ্রিসের পাশাপাশি এই নদী আজও বইছে সমান তালে। আগের চেয়ে অনেক শুকিয়ে গিয়েছে ইউফ্রেটিস।
প্রাচীন এই নদীর নিচে তৈরি একটি সুড়ঙ্গ নিয়ে ইতিহাসবিদরা দীর্ঘ দিন সিদ্ধান্তহীন রয়েছেন। আদৌ নদীর নিচে কোনো সুড়ঙ্গ আছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। মেসোপটেমিয়া বা ইরাকের প্রাচীন কাহিনিতে ইউফ্রেটিস নদীর নিচে সুড়ঙ্গের কথা বলা আছে। সে সুড়ঙ্গকে কেন্দ্র করে নানা কাহিনি, লোকগাঁথাও প্রচলিত স্থানীয়দের মধ্যে।
সম্প্রতি ইউফ্রেটিসের পানির স্তর কমে আসায় নদীগর্ভে একটি সুড়ঙ্গের হদিস মিলেছে। অনেকে দাবি করছেন, এই সেই প্রাচীন কাহিনিতে বর্ণিত সুড়ঙ্গ। দেখা গেছে , নদীগর্ভে লুকিয়ে থাকা সুড়ঙ্গটি নেমে গিয়েছে অনেক গভীরে। ধাপে ধাপে সিঁড়ি কাটা রয়েছে নিচে নামার জন্য। সুড়ঙ্গের অধিকাংশই রয়েছে অক্ষত। তার কোনায় কোনায় প্রাচীনতার ছাপ স্পষ্ট।
কে বানিয়েছিলেন এই সুড়ঙ্গ? কী আছে তার অপর প্রান্তে? ইরাকের স্থানীয় ইতিহাসে তা নিয়ে কাহিনির ছড়াছড়ি। প্রাচীন কাহিনি অনুসারে ব্যাবিলনের রানি সেমিরামিস ইউফ্রেটিস নদীর বুকে একটি গোপন সুড়ঙ্গ তৈরি করেছিলেন। তিনিই এই সুড়ঙ্গ ব্যবহার করতেন।
নদীর দুই প্রান্তে অবস্থিত দুই প্রাসাদের মধ্যে নাকি সংযোগ স্থাপিত হয়েছিল এই সুড়ঙ্গের মাধ্যমে। কেউ আবার বলেন, ব্যাবিলন শহরের দুই প্রান্তকে যুক্ত করার জন্য নদীর ভেতর দিয়ে এই সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল। প্রচলিত আছে, রানি সেমিরামিস নদীর উপর দিয়ে নদী পারাপার পছন্দ করতেন না। তাই তার ইচ্ছাতেই নদীর মধ্যে দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়। পুরু ইটের তৈরি সুড়ঙ্গটির নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল ২৬০ দিন।
সুড়ঙ্গ সম্পর্কে ইরাকে প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, এই সুড়ঙ্গের ওপারে রয়েছে এক অন্য দুনিয়া। সেখানে ডুবে আছে রহস্যের খনি। প্রচলিত ধারণা, এই সুড়ঙ্গ এক অজানা দেশে পৌঁছে দেয়। সেখানে থাকেন পরী এবং দেবদূতেরা। বছরের পর বছর ধরে ইউফ্রেটিসের বুকে তারাই বিরাজ করছেন।
মুসলিমরা বিশ্বাস করে, অদূর ভবিষ্যতে ইউফ্রেটিস শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে। সেই শুকিয়ে যাওয়া নদীর বুক চিরে মাথা তুলবে সোনায় মোড়া পাহাড়। মানুষ সেই পাহাড়ের দখল নিয়ে যুদ্ধ করবে। প্রাচীন সেই ভবিষ্যদ্বাণীই কি ধীরে ধীরে ফলতে শুরু করেছে? ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতত্ত্ববিদরা দেখিয়েছেন, গত কয়েক বছরে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমেছে ইউফ্রেটিস নদীর জলস্তর। তবে কোনো পাহাড়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি এই নদীর নিচে। মেলেনি সোনাদানাও। কেবল রহস্যের দুয়ার খুলে দিয়েছে ইউফ্রেটিসের সুড়ঙ্গ।
সূত্র: আনন্দবাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।