জুমবাংলা ডেস্ক : মন্দিরটি হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল দীর্ঘকাল ধরে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলীন হবার পথে সিলেটের বিশ্বনাথের ৬০০ বছরের পুরোনো “রাজ-রাজেশ্বরী মন্দির”। অযত্ন-অবহেলায় মন্দিরের ভবন ও দেয়ালে গাছপালা জন্মানোর পাশাপাশি ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের চন্দ্রগ্রামে অবস্থিত অনন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি নির্মিত হয় প্রায় ছয়শত বছর পূর্বে। এর নির্মাণশৈলীর সাথে কিছুটা মিল পাওয়া যায় জৈন্তার রাজবাড়ির স্থাপনার। জৈন্তা রাজ্যের সেনাপতি থাকাকালীন সময়ে বিজয় মানিক সেনাপতি এ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল এটি। এই মন্দির নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিল চিটাগুড়, চুন-সুরকি ও পোড়ামাটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৪ শতক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে জরাজীর্ণ ও ভগ্নপ্রায় ঐতিহাসিক ‘রাজ-রাজেশ্বরী মন্দির’। পুরো মন্দিরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মধ্যযুগীয় নানা পুরাকীর্তির নিদর্শন। বর্তমানে গাছপালা আর লতাগুল্মে ছেয়ে গেছে পুরো দ্বিতল ভবনটি। ভবনের অসংখ্য স্থানে ধরেছে ফাটল। ৫ কক্ষের একটিতেও দরজা নেই। পুরো মন্দিরের দখলদারী নিয়েছে চামচিকা ও আর হরেক রকম সরীসৃপ প্রাণী। ভবনের নিচতলার ভেতরের অংশে চারটি ভাগ রয়েছে।
প্রথম ভাগের চারপাশে রয়েছে ঘূর্ণায়মান টানা জানালা। মন্দিরের পেছনের কোণায় রয়েছে একটি ছোট কামরা। তারপরেই সামনের দিক থেকে আলাদা লম্বা জানালা। এরপরেই উপরে উঠার জন্যে সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে দেখা যায়, ছাদের ঠিক মধ্যখানে দুই দরজা বিশিষ্ট একটি কামরা। এর ভেতরের ছাদপ্রান্ত ধনুকের মতো বাঁকা। ওখানেও ঝুলে আছে অসংখ্য চামচিকা। মন্দিরের প্রবেশ পথের ডান দিকে রয়েছে দূর্গা ও শিবমন্দি। পাশেই থাকা বিশাল দিঘিতে কেবল সচল রয়েছে শিবমন্দির। গাছের গোড়ায় কিছু ইটের উপস্থিতি ছাড়া দূর্গা মন্দিরের আর কোন অস্তিত্বই নেই।
মন্দিরের অতি নিকটে বংশ পরম্পরায় বসবাস করছেন বিজেন্দু সেনাপতি নারায়ণ (৮০)। তিনি বলেন, “আমার শতবর্ষী মায়ের কাছ থেকে যেভাবে এ মন্দিরের বর্ণণা শুনেছি এটি এখনও প্রায় একই ভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তবে ধ্বংসস্তুপ হলেও এটি আমাদের সম্প্রদায়ের কাছে খুবই গুরুত্ব বহন করে। তাই শত শত বছরের ধর্মীয় স্মৃতিচিহ্নটি রক্ষায় সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।”
মন্দির দেখতে আসা যুবক গোলাম মোস্তফা বলেন, “সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার করা গেলে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সকল মানুষের কাছে দর্শনীয় স্থান ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হতে পারতো এই নিদর্শনটি।”
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরপ্রশাসক সুমন চন্দ্র দাস বলেন, “স্থানীয় তহশিলদারকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইনগত কোন বাধা না থাকলে, চলতি অর্থবছরে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজ-রাজেশ্বরী মন্দির সংস্কার করা হবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।