আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ক্যামেরুনের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্গানিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে। এক এনজিও এক ঢিলে একাধিক পাখি মারতে এক সার্বিক উদ্যোগ শুরু করেছে। সেই সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন স্তরে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেও কাজ করছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া যায়।
পথের ধারে জঞ্জাল ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু উবের স্টেফি চুইগুয়ার কাছে সেটা যেন সম্পদের ভাণ্ডা। তিনি ও তার টিম ক্যামেরুনের পেনিয়া এলাকায় নিয়মিত শাকসবজির অবশিষ্ট সংগ্রহে বেরিয়ে পড়েন।
সেখানে পৌর স্তরে জঞ্জাল ব্যবস্থাপনার কোনো সুযোগ নেই। ফলে সবকিছু পথেঘাটে পড়ে থাকে। তবে ফ্যামিলি গ্রিন করপোরেশন নামের এনজিওর জন্য সেই আবর্জনা মূল্যবান সম্পদ। প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উবের বলেন, ‘আমরা বসতি এলাকার এই বর্জ্য কার্যকর উপায়ে পুনর্ব্যবহার করতে চাই। চারিদিকে এমন বর্জ্য পড়ে রয়েছে। বেশির ভাগই শাকসবজির অবশিষ্ট অংশ, যা দিয়ে আমরা অনেক মানুষের জন্য পরিবেশ বান্ধব কাঠ-কয়লা তৈরি করতে পারি। দাম কম হওয়ায় অনেক পরিবারের কাজে লাগতে পারে।’
টিমের কাছে প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম রয়েছে। তারা এক কার্গো ট্রাইক ব্যবহার করে বর্জ্য শাকসবজি ব্যাগ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডে নিয়ে যান। তারা মাসে কয়েক শ’ কিলোগ্রাম বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করেন। সবার আগে বর্জ্য আলাদা করতে হয়। কলা, ভুট্টার ডাঁটা, নারকেল ও বাঁশের ডালপালা অর্গানিক চারকোল তৈরির জন্য কাজে লাগানো যায়।
কাঠ-কয়লার মতো এই উপাদানকেও সবার আগে পোড়াতে হয়। তবে এই টিম কার্বন নির্গমনের মাত্রা যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করে। তারপর শাকসবজির পোড়া বর্জ্য অন্যান্য অর্গানিক বর্জ্যের সঙ্গে মেশানো হয়। কাসাভা গাছের আঠালো পদার্থ দিয়ে সেই মিশ্রণ আরও পাকাপোক্ত করা হয়।
এখানকার সবগুলো যন্ত্র এনজিও তৈরি করেছে। কিন্তু সব কাজ মোটেই স্বয়ংক্রিয় করে তোলা হয়নি। চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে হাতে করে কাঠ-কয়লার রূপ দেওয়া হয় ও সেই ইট রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। উবের বলেন, ‘এটা একটা পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর জ্বালানি, যা থেকে ধোঁয়া বার হয় না। এমনকি বাসায় গ্যাসের মতো ব্যবহার করা যায়। এটা বিউটেন গ্যাসের বিকল্প হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে সমাজে বর্জ্যের সমস্যা সমাধানেও সাহায্য করে। তাছাড়া বন নিধনের বিরুদ্ধে সংগ্রামেও এর অবদান রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সমস্যাও এভাবে মোকাবিলা করা যায়।
এনজিওটি স্থানীয় চাষিদের জন্য প্রথম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করেছে। এখন সম্প্রসারণ ঘটিয়ে গোটা দেশে বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্যও গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে।
পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উবেরের পেশা হয়ে উঠেছে। পেট্রোলিয়াম শিল্প তাকে উপেক্ষা করায় তিনি এই পথ বেছে নিয়েছিলেন। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে উবের বলেন, ‘আমি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার। ২০১৬ সালে উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর তেল শিল্পে কাজ পাওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল। তাই কয়েকজন বন্ধু ও সহপাঠীর সঙ্গে মিলে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্পের উন্নতির লক্ষ্যে একটি সংগঠন গড়ে তোলার আইডিয়া মাথায় এলো।’
গ্রিন এনার্জির সঙ্গে এনজিওটি সম্প্রতি অর্গানিক সারও তৈরি করতে শুরু করেছে। তারা খুব সহজ অথচ অত্যন্ত কার্যকর এক প্রক্রিয়া কাজে লাগাচ্ছে।
কচি সবুজ পাতা পানিতে ভিজিয়ে তার সঙ্গে শাকসবজির অবশিষ্ট অংশ ও গোবরের মতো অন্যান্য অর্গানিক বর্জ্য মিশিয়ে সার তৈরি করা হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেই সার প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে।
এই এনজিও চাষি ও স্কুলগুলোর মাধ্যমে সামাজিক কাজেও জড়িয়ে পড়েছে। চাষিদের অর্গানিক সার ব্যবহার করতে রাজি করানো, এমনকি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তাদের শামিল করার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। উবের স্টেফি চুইগুয়া বলেন, ‘আমরা অনেক স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বর্জ্য টেকসই করার ব্যবস্থাপনা দেখিয়েছি। অল্প বয়সী ছাত্রছাত্রীরা ভবিষ্যতের ভিত্তি। স্কুলের পাট শেষ করার পর তাদের এই ক্ষেত্রে অবদানের লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত করতে হবে।’
এই এনজিও ক্যামেরুনে পথিকৃতের কাজ করছে। তাদের আইডিয়া আরও জনপ্রিয় হলে দেশের তরুণ প্রজন্মের উপকার হবে। পরিবেশও তার সুফল পাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।