Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম এবং ‘ট্রিলিয়ন ডলার’ অর্থনীতির স্বপ্ন
    অর্থনীতি-ব্যবসা মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার

    অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম এবং ‘ট্রিলিয়ন ডলার’ অর্থনীতির স্বপ্ন

    Saiful IslamDecember 16, 202310 Mins Read
    Advertisement

    ড. আতিউর রহমান : অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একেবারেই কেন্দ্রে ছিল। তাই তো ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মুক্ত স্বদেশে পা রেখেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘… আমি জানতাম বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে, খেয়ে পরে সুখে থাকবে, এটাই ছিল আমার সাধনা।’ ওই ভাষণেই তিনি আরো বলেছিলেন, ‘যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে—পূর্ণ হবে না। … বাংলাদেশকে সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবাস্তব রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকালেই সেটিকে একটি ‘ভ্রান্ত প্রত্যুষ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। আর তাই সহনেতাদের নিয়ে বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে ভাষা আন্দোলনসহ ইস্যুভিত্তিক অধিকারের সংগ্রাম করেছেন, পরবর্তীতে সংসদীয় রাজনীতির মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়েছেন এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে, রাজনৈতিক পদ্ধতিতে সমাধানের সব পথ রুদ্ধ হওয়ার পর, সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের সময় অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে যথাযথ মনোনিবেশ করেছিল বঙ্গবন্ধুর সরকার। স্বপ্ন ছিল তার ‘সোনার বাংলা’ অর্জনের।

    বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই এগোচ্ছিল। মাত্র ৮ বিলিয়ন (মতান্তরে ৬ বিলিয়ন) ডলারের অর্থনীতি তার আমলেই ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। সেই অর্থনীতির আকার আজ ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছরে আমাদের মাথাপিছু জিডিপি (কারেন্ট ইউএস ডলারে) ১৮৬ শতাংশ বেড়ে ৯৯ ডলার থেকে ২৬০ ডলারে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে হারানোর পরই এ অভিযাত্রায় ছেদ পড়ে। ১৩ বছর পর তার রেখে যাওয়া মাথাপিছু জিডিপির সমান করতে পেরেছিল পঁচাত্তর-উত্তর বাংলাদেশ। তাছাড়া তাকে হারানোর পরের ২২ বছরে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে মাত্র ৫২ শতাংশ। ১৯৯০-এর পর দেশে গণতান্ত্রিক শাসন একটি মাত্রায় ফেরার পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অভিযাত্রাটি কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পায়। মাঝে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বাধীন সরকার শাসনভার গ্রহণ করায় প্রকৃত অর্থেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন শুরু হলেও সে যাত্রা আবার থেমে যায় ২০০১-এ। বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সব বিচারেই একটি নাটকীয় উল্লম্ফন শুরু হয় ২০০৮-এর পর যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা দ্বিতীয়বারের মতো দেশের শাসনভার কাঁধে নেন।

    সাম্প্রতিক সময়ে সামষ্টিক অর্থনীতিতে খানিকটা চ্যালেঞ্জ দেখা দিলেও এ কথা নিশ্চয় জোর দিয়ে বলা যায় যে গত এক যুগ দারিদ্র্য নিরসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে। বিবিএসের সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০২২ এ সময়কালে এ দেশের দারিদ্র্য হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। অতিদারিদ্র্যের হার ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। মাথাপিছু আয়ও এ সময়ের ব্যবধানে ব্যাপক হারে বেড়েছে বলে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। ৬৯৯ ডলার থেকে প্রায় চার গুণ বেড়ে ২ হাজার ৬৮৮ ডলার হয়েছে (বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে)। ২০১০ সালে দেশের একটি গড় পরিবার মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা ব্যয় করত আর ২০২২ সালে এর পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করার পরও এ সময়ে একটি পরিবারের গড় ভোগের প্রকৃত পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

    অবশ্যই অর্থনৈতিক সক্ষমতা সব পরিবারের সমানভাবে বাড়েনি। কারণ আয় ও ব্যয়বৈষম্যের সূচকের মান এ সময়ে সামান্য হলেও বেড়েছে। তবুও বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ বলছে, বাংলাদেশের এ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনুসরণীয় মাত্রায় অন্তর্ভুক্তিমূলক থেকেছে (অর্থাৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির সুফল সমাজের সব শ্রেণীই ভোগ করছে একটি গ্রহণযোগ্য মাত্রায়)। বিভিন্ন মানব উন্নয়ন সূচকে আমাদের সাফল্যগুলোই এর বড় প্রমাণ। যেমন এ দেশের নাগরিকদের গড় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ২০০৫ সালে ৬৫ দশমিক ২ বছর ছিল। ২০২৩ সালে এসে বেড়ে তা হয়েছে ৭৩ বছর। একই সময়ের ব্যবধানে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৫১ থেকে কমে হয়েছে ২২। মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ৩৭৬ থেকে কমে ১২৩ হয়েছে। এ দুই হার উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় হারের প্রায় অর্ধেক। এ সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ উপভোগ করা পরিবারের অনুপাত ৪২ দশমিক ৪৯ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় শতভাগ (৯৯ দশমিক ১৪ শতাংশ) হয়েছে। বিদ্যুৎ সভ্যতার প্রতীক। সামাজিক-সাংস্কৃতিক সুযোগ ছাড়াও বিদ্যুৎ দিয়ে দোকানপাট, হাটবাজার, পথঘাট আলোকিত থাকায় মানুষের আয়-রোজগারের সুযোগও বাড়ে। এসবই প্রমাণ করে যে গত ১৪-১৫ বছর সময়কালে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষের জীবনমানে দৃষ্টান্তমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।

    উল্লিখিত সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপক কাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়ে আরো পরিণত হয়েছে। যেমন জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ২০১০ সালে ২২ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ৩৭ শতাংশ হয়েছে। অর্থনীতির এ অগ্রগতির সঙ্গে সংগতি রেখেই জিডিপিতে কৃষির অংশ কমে এসেছে। কিন্তু মোট কৃষি উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে কৃষিপ্রযুক্তিতে সরকারি ও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের কল্যাণে। এর ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে একদিকে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে, অন্যদিকে বর্ধিষ্ণু শিল্প খাতের চাহিদামতো কাঁচামালের একটি অংশ অন্তত সরবরাহ করা গেছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই। একদিকে কৃষি এ দেশের অর্থনীতির রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে, অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় আমাদের অর্থনীতির নাটকীয় উল্লম্ফনের রসদ জুগিয়ে গেছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সময়কালে আমরা মোট ২৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছি (বর্তমানে বছরে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসছে)। অন্যদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে টানা দ্বিতীয়বারের মতো আমাদের বার্ষিক রফতানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে। চলতি বছর শেষে রফতানি আয় ৫৭ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। সাম্প্রতিক ১৪-১৫ বছরে আরেকটি বড় ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে। প্রধানত ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে সবার দোরগোড়ায় সুলভ আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে একটি ‘নীরব বিপ্লব’ ঘটানো সম্ভব হয়েছে দেশের আর্থিক সেবা খাতে। এতে সব নাগরিকের অর্থনৈতিক সুরক্ষা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশজুড়ে ছোটখাটো উদ্যোক্তাদের বিরাট বিস্ফোরণ ঘটেছে।

    সন্দেহ নেই যে গত ১৪-১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্জনগুলো প্রশংসনীয়। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে সামনের দিনে আরো বড় অর্জনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। কেননা আমাদের জনশক্তি তুলনামূলক তরুণ। মেডিয়ান বয়স ২৬ দশমিক ৭ বছর (ভারতের ২৮ দশমিক ১ ও চীনের ৩৭ দশমিক ৪ বছর)। আমাদের জনশক্তির ১১ শতাংশের বিশ্ববিদ্যলয়ের ডিগ্রি রয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে এ অনুপাত প্রায় তিন গুণ বেড়ে ৩২ শতাংশ হবে। ফলে উচ্চ শিক্ষিত ওই জনগোষ্ঠী তখন দেশে-বিদেশে কাজ করে আরো বেশি আয় করতে পারবে।

    গত ৮-১০ বছরে যে ব্যাপকভিত্তিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন এ দেশে ঘটে গেছে সেটিও আগামীতে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বিশেষ অবদান রাখবে। ২০২১ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা আরো ৫৭ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব হবে। বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর প্রায় সবই শেষ হয়ে যাবে ২০২৬ সালের মধ্যে। এ প্রকল্পগুলোর প্রতিটিই জিডিপিতে বার্ষিক ১ শতাংশের মতো করে যুক্ত করবে। দিন শেষে প্রবৃদ্ধির হার নিশ্চয় বাড়বে।

    সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ‘ডাবল ডিজিট’ প্রবৃদ্ধির বাস্তব ভিত্তি তৈরি হয়ে গেছে। এখন আমাদের নজর রাখতে হবে এ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার মতো বহুমুখী টেকসই অর্থায়ন কৌশলগুলো কতটা দক্ষতার সঙ্গে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারি। যেমন আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যতম সূচক রিজার্ভকে অবশ্যই ৫০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে আগামী দুই বছরের মধ্যে টেনে তুলতে হবে। একই সঙ্গে রিজার্ভে সুস্থিতি এলে ‘সভরেন ওয়েলথ ফান্ড’ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। সবুজ অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক বন্ড চালুর নীতি ‍উদ্যোগও নিতে হবে।

    বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে প্রধানত ভোগের ওপর ভর করে (জিডিপির ৭০ শতাংশই ভোগ)। আগামীতে জনশক্তির আয় বৃ্দ্ধির সুবাদে এ ভোগ আরো বলশালী হবে। বিবিএস এবং বিশ্বব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করে সিএএল রিসার্চ দেখিয়েছে যে ২০২৬ সালের মধ্যে আমাদের মোট ভোগ আরো ১২ শতাংশ বাড়বে। জানা যাচ্ছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম কনজিউমার অর্থনীতিতে পরিণত হবে এবং তখন সোয়া তিন কোটি নাগরিক থাকবে ‘মিডল অ্যান্ড আফ্লুয়েন্ট ক্লাস’ (অর্থাৎ মধ্যম থেকে উচ্চ আয় শ্রেণী)-এর কাতারে। যাদের বার্ষিক গড় আয় হবে ৫ হাজার ডলারের বেশি। এত বড় ভোক্তার সমাবেশ নিশ্চিতভাবেই দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। এক্ষেত্রে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এসইজেড) শক্তিশালী নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। এসব অঞ্চলের বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক একক সেবা কেন্দ্র, সম্মুখ ও পশ্চাৎমুখী সংযোগ অবকাঠামো এবং দক্ষ কর্মী সরবরাহের সুযোগগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে।

    আরএমজি রফতানিতে বাংলাদেশ আরো অন্তত এক-দেড় দশক শক্তিশালী জায়গাতেই থাকবে বলে আশা করা যায়। পাশাপাশি আরো নতুন নতুন রফতানি খাত বাংলাদেশে চাঙ্গা হয়ে ওঠার কারণে আগামীতে আমাদের রফতানি ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়বে। ২০১০ সাল থেকে আমাদের আইসিটি শিল্প খাত বছরে ৪০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। ২০২৬ সালের মধ্যে আইসিটি খাত আড়াই গুণ বেড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এ সময়ে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের সম্মিলিত বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ১৫ শতাংশ। আর ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের জন্য এ অনুপাত হবে আরো বেশি (১৯ শতাংশ)। এসব খাতে প্রয়োজনীয় নীতি সমর্থন দেয়া গেলে নিশ্চয় রফতানি খাতকে বহুমুখী করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি আমদানি বিকল্প শিল্পের দিকেও সমান নজর দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

    বাংলাদেশের গত ১৪-১৫ বছরের অর্জনগুলো সন্তুষ্ট হওয়ার মতো। সামনের ১৪-১৫ বছরে আরো বড় অর্জন করা সম্ভব—এ কথাও সত্য। তবুও মনে রাখা চাই যে এ সম্ভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে বড় বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষত প্রথমে করোনা মহামারী এবং পরে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে আগে থেকে হাজির থাকা চ্যালেঞ্জগুলো আরো কঠিন হয়েছে এবং নতুন নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে চলতি ও আর্থিক হিসাবের ভারসাম্য টানাপড়েন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্ষয়ে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফনের মতো চ্যালেঞ্জগুলোকে বাজারবান্ধব নীতি কৌশলে বাগে আনার কঠিন কাজগুলো এখনো নীতিনির্ধারকদের পুরোপুরি আয়ত্তে আসেনি। পাশাপাশি এখনো বাংলাদেশের তিন কোটির বেশি নাগরিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের এ যাবৎকালের বিনিয়োগ দারিদ্র্য নিরসনে বেশ সহায়ক হয়েছে। কিন্তু আগামীতে নিম্ন-মধ্যম আয়ের ও উন্নয়নশীল দেশের বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নতুন ধরনের সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে এগোতে হবে। তবে কেবল সামাজিক নিরাপত্তা দিয়ে সামাজিক পিরামিডের পাটাতনের মানুষের টেকসই সুরক্ষা হবে না। তাদের জন্য বাড়তি কাজের সুযোগও সৃষ্টি করতে হবে। আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে আমরা প্রতি বছর মাত্র দুই লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি। অথচ শ্রমশক্তিতে প্রতি বছর ২০ লাখ নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে। আগামী দিনের শ্রমশক্তিকে যথাযথভাবে গড়ে তুলতে তাই কারিগরি শিক্ষার হারে ব্যাপক অগ্রগতি দরকার।

    প্রয়োজনীয় কাজের সুযোগ তৈরিতে দেশের এমএসএমই খাত বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। এখনই জিডিপির ৩০ শতাংশ আসছে এ খাত থেকে, আর এখানে নিয়োজিত আছে শ্রমশক্তির ৩০ শতাংশ। এমএসএমই খাতের প্রত্যাশিত বিকাশের জন্য অর্থায়নে বাধা, অবকাঠামোগত কমতি এবং প্রযুক্তির অভাবের মতো চ্যালেঞ্জগুলো কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা চাই। বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার সঙ্গে সংগতি রেখে কাজের সুযোগ বাড়াতে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতিও নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিটাইজেশন এবং নিয়মকানুন সহজীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ প্রশংসনীয় মাত্রায় উন্নত করা গেছে (২০০৯ সালে ব্যবসা নিবন্ধন করতে ৫৬ দিনের বেশি লাগত, ২০২০ সালে এসে লাগছে মাত্র দুইদিন)। তবে আরো উন্নতি করার সুযোগ এখনো রয়েছে। পাশাপাশি পুরো অর্থনীতিতেই যে ব্যাপকভিত্তিক অনানুষ্ঠানিকতা রয়েছে (প্রায় ৮০ শতাংশ) তাও বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে বড় বাধা।

    প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাবের কারণে গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২১-এর প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তাই অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে যথাযথ সংবেদনশীলতা দেখাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি সংবেদনশীল উন্নয়নে আমাদের যে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগাতেই হবে (যেমন সৌরশক্তিনির্ভর সেচের মাধ্যমে প্রতি বছর কৃষি সেচের জন্য ৮১ লাখ লিটার ডিজেল পোড়ানো থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারি)। আশার কথা, জলবায়ুবান্ধব সবুজ উন্নয়নে বাংলাদেশ এরই মধ্যে বাজেটের সবুজায়নের কাজটি ভালোভাবেই শুরু করেছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সবুজ উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত। এরই মধ্যে তারা ৮ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তার অঙ্গীকার করেছে। তাছাড়া আমাদের আরএমজি খাতসহ ব্যক্তি খাতও সবুজ বিনিয়োগে খুবই উৎসাহী। ২০৮টি লিড সার্টিফায়েড সবুজ আরএমজি কারখানা চালু করা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশে। বিশ্বে ২০টি সবুজতম কারখানার ১৮টিই এখন বাংলাদেশে।

    সবশেষে বলব, সুশাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাকে প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এগোতে হবে। সম্প্রতি বিওয়াইএলসি দেশব্যাপী তরুণদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখেছে যে ৮০ শতাংশ তরুণই দুর্নীতিকে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে বড় বাধা বলে মনে করে। কর্মসংস্থানের অভাবকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে ৬৭ শতাংশ তরুণ। কাজেই আগামী প্রজন্মকে স্বদেশ বিষয়ে আশাবাদী রাখতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো বিষয়গুলোকে যথাযথ নীতি-অগ্রাধিকার দিতেই হবে।

    মোটামুটি ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারলেই ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে। আর ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করলে সেখানে পৌঁছানো যাবে ২০৩০ সালেই। মাঝামাঝি প্রবৃদ্ধি নিয়ে হয়তো ২০৩৫ সালেই আমরা ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হতে পারি। তবে এজন্য সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে যেমন আশাবাদী উদ্যোগ দরকার, তেমনি দরকার যথাযথ সংবেদনশীলতা দেখিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মানসিকতাও। আসুন বিজয়ের আবাহনে আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সন্ধানে অঙ্গীকারবদ্ধ হই।

    ড. আতিউর রহমান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    অর্থনীতি-ব্যবসা অর্থনীতির অর্থনৈতিক এবং ট্রিলিয়ন ডলার মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার মুক্তির সংগ্রাম স্বপ্ন
    Related Posts

    কুয়াকাটায় জেলের জালে ধরা পড়ল বিরল প্রজাতির ‘গিনি অ্যাঞ্জেলফিশ’

    September 9, 2025
    ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

    মন্ত্রীদের জন্য ৬০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব বাতিল: ড. সালেহউদ্দিন

    September 9, 2025
    Gold

    স্বর্ণ, টাকা বা জমির পরিবর্তে আগামী ১০ বছরে সবচেয়ে মূল্যবান হবে যে জিনিস

    September 9, 2025
    সর্বশেষ খবর
    NYT Connections Hints Today: Puzzles Stumping Players on September 9

    NYT Connections Hints Today: Puzzles Stumping Players on September 9

    Supreme Court Allows Immigration Operations to Resume in Los Angeles

    Supreme Court Allows Immigration Operations to Resume in Los Angeles

    Body found inside Tesla belonging to singer D4vd

    Body Found Inside Tesla Belonging to Singer D4vd at Hollywood Tow Yard, LAPD Confirms

    Free Fire Faded Wheel Event Reveals Surprise Skin

    Free Fire Faded Wheel Event Reveals Surprise Skin

    Who Is Akshay Jagadeesh? Neuroscientist Joins OpenAI Research Team

    Who Is Akshay Jagadeesh? Neuroscientist Joins OpenAI Research Team

    Honkai Star Rail 3.7 Drip Marketing Confirms Cyrene Release

    Honkai Star Rail 3.7 Drip Marketing Confirms Cyrene Release

    কুয়াকাটায় জেলের জালে ধরা পড়ল বিরল প্রজাতির ‘গিনি অ্যাঞ্জেলফিশ’

    iPhone 17 Pro Rumors Hint at Bold Colors, Major Camera Upgrades

    iPhone 17 Pro Rumors Hint at Bold Colors, Major Camera Upgrades

    EA FC 26 Fastest Players Revealed: Mbappé Tops Speed Charts

    EA FC 26 Fastest Players Revealed: Mbappé Tops Speed Charts

    Haru Urara horse cause of death

    Haru Urara Horse Death: Beloved Racehorse Haru Urara’s Cause of Death Revealed as Colic

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    • Feed
    • Banglanews
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.