অনিল চন্দ্র রায়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: অনেক কষ্টে মানুষের কাছে ধার-দেনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও টাকার অভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মেধাবী ছাত্র সুজিত রায়ের।
সুজিত কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী গ্রামের করুনা কান্ত রায়ের ছেলে।
সুজিত ২০১৭ সালে নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপি-এ ৪.৭৩ পয়েন্ট পেয়েছেন ও একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৯ সালে মানবিক বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়ে উর্ত্তীর্ণ হয়েছেন। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিদের কাছে ধার দেনা করে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরীক্ষায় উর্ত্তীণ না হলেও তিনি এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গনসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে ভর্তি হন। ভর্তি হওয়ার সাড়ে ৮ হাজার টাকা মানুষের কাছে অনেক কষ্টে ধার-দেনা করে জোগাড় করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার কোনও সামর্থ না থাকায় গরীব-বাবা-মা দুচিন্তায় পড়েছেন।
সুজিতের বাবা করুনা কান্ত রায় পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। মহাজনের কাছ থেকে ভাড়ায় তিনি অটোরিসশা চালান। সম্পত্তি বলতে বাড়ির তিন শতক জমিতেই মাথা গোজার দুটি ঘর। মহাজনের প্রতিদিনের টাকা মিটিয়ে যে আয় হয় তা দিয়ে পাঁচ সদস্যের মুখে দুবেলা দুমুঠো আহার তুলে দেওয়াও দুরুহ ব্যাপার। এমন পরিস্থিতিতে তার পক্ষে ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া চালানো কঠিন কাজ। সুজিত ছাড়াও এক মেয়ে ও এক ছেলের পড়ালেখার খরচ এবং সংসার চালানো তার পক্ষে অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিভাবে তিনি বড় ছেলে সুজিতের পড়াশুনা চালিয়ে যাবেন সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সুজিত রায় জুমবাংলাকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার পর আশেপাশের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। জানুয়ারির ২১ তারিখ থেকে ক্লাশ শুরু হবে। কিভাবে রাজশাহী শহরে থাকা ও পড়াশুনার খরচ জোগাবে আমার হতদরিদ্র পরিবার, সেই চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে বলে জানান তিনি।
তাকে সহায়তা ও তার বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে মোবাইল নম্বর ও বিকাশ (০১৭৫০৮৯০২৫৫) নাম্বারে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।
সুজিতের বাবা করুনা কান্ত রায় জুমবাংলাকে বলেন, আমার তেমন আয়-রোজগার নেই। অটোরিকশা চালিয়ে তিন সন্তানের পড়ালেখার খরচসহ অতিকষ্টে সংসারটা চালাচ্ছি। জানিনা কিভাবে বড় ছেলে সুজিতের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার খরচ জোগাবো।’
বাবা করুনা কান্ত রায় ছেলে সুজিতের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালাতে সমাজের দানশীল ও সুহৃদ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল হানিফ সরকার জুমবাংলাকে বলেন, সুজিত মেধাবী ছাত্র। সে আমার বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেছে। তাকে আমরা বিনা খরচে পড়ার সুযোগ দিয়েছিলাম। এখন সুজিতের উচ্চশিক্ষা গ্রহনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার দারিদ্র্য। সুজিতের লেখাপড়া চালাতে আমি সমাজের দানশীল এবং সুহৃদ মানুষদের তার পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. মাছুমা আরেফিন জুমবাংলাকে বলেন, যেহেতু সুজিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সেজন্য তার সাফল্য কামনা করছি। সুজিত ও তার পরিবার উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তার পড়াশুনা খরচ বাবদ তাকে কিছু সহায়তা করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।