বিনোদন ডেস্ক : আশা ভোঁসলে। ভারতের প্রবীণতম শিল্পীদের একজন। ১৯৪০ সাল থেকে তিনি ভারতীয় সিনেমার জন্য গান গেয়ে আসছেন। সম্প্রতি ৮৯ বছরে পা রাখছেন এ গুণী শিল্পী। তিনি ও তার বোন প্রয়াত লতা মঙ্গেশকর দুজনই হিন্দি সিনেমার জন্য গান গেয়ে সারা ভারতে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতে তাকে অসংখ্য বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। জন্মদিন উপলক্ষে তিনি সেসব স্মৃতিচারণ করেন।
ভারতীয় সংগীতের প্রখ্যাত সুরকার আরডি বর্মণকে বিয়ে করার আগে তিনি গণপাত্র ভোঁসলেকে বিয়ে করেছিলেন। এ সংসারে তার তিনটি সন্তান রয়েছে। সম্প্রতি আলাপচারিতায় আশা বলেন, তার প্রথম স্বামী মাসিক ১০০ রুপি উপার্জন করতেন আর তাই সন্তানদের যত্ন নেয়াসহ সবকিছু নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয় তাকে।
সলিল চৌধুরীর সঙ্গে আশা ভোঁসলের একটি আলাপচারিতা ১৯৯৩ সালে দূরদর্শন কলকাতায় সম্প্রচারিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে আশা বলেন, যখন তিনি গাইতে শুরু করেন, তখন বোম্বে থেকে দূরে থাকতেন এবং ট্রেনে করে প্রতিদিন শহরে আসতেন। ১৯৪৯ সালে যখন তার ছেলে হেমন্তের জন্ম হয়, তখন এক মাসের ছেলেকে নিজের শাশুড়ির কাছে রেখে অর্থের প্রয়োজনে শহরে গান গাইতে আসতেন। তখন কালেভদ্রে গাইতে অনুমতি পেতেন। ভোর ৫টায় উঠে তিনি রেওয়াজ করতেন।
অতীতের কথা বলতে গিয়ে আশা বলেন, কুয়ো থেকে পানি তোলা, খাবার রান্না করা, সন্তানদের লাঞ্চ প্যাক করে তাদের স্কুলে ড্রপ করা, শ্বশুর-শাশুড়ির দেখাশোনা করা সব তাকে করতে হতো। এতকিছু করে তিনি গান রেকর্ড করতেন। ৮ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি রেকর্ডিং করতেন। ঈশ্বর আমাকে অনেক শক্তি দিয়েছেন আর দিয়েছেন ইচ্ছেশক্তি। কোনো কিছুকে আমি কখনো না বলিনি। ৬-৮ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে আমি গান রেকর্ডিংয়ের কাজ করেছি।
প্রথম স্বামীর সঙ্গে ১৯৬০ সালে আশার বিচ্ছেদ হয়। তখন সিঙ্গেল মা হিসেবে তিনি তার সন্তানদের দেখভালের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। তার ক্যাবারে ধাঁচের গায়কী নিয়ে অনেক বয়স্কদের আপত্তি ছিল। লোকজন তাকে এসব গান না গাইতে বলতেন। উত্তরে তিনি তাদের বলতেন, তবে আমার কি এটা ছেড়ে দেয়া উচিত। তাহলে আমার সন্তানরা খাবে কী? তাদের দেখাশোনা করবে কে? আমি কি খুশিতে গান করি? সন্তানদের বড় করতে এটা আমার প্রয়োজন।
ভারতের বিখ্যাত গায়িকা হওয়া সত্ত্বেও তিনি চাইতেন না তার ছেলে হেমন্ত ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যোগ দিক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার সন্তানরা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আসুক আমি চাইতাম না। পরে তো আমার বড় ছেলে হেমন্ত সংগীত পরিচালক হয়। জায়গাটা এমন, কপাল ভালো হলে সবাই আপনাকে মাথায় তুলে রাখবে। কিন্তু আপনি বুঝবেন না, কখন আপনি মাটিতে পড়ে যাচ্ছেন। একদিন আপনার অনেক কাজ। কিন্তু একসময় আসবে আপনাকে আর কেউ কাজ দিচ্ছে না। ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই করে আশার বড় সন্তান হেমন্ত ২০১৫ সালে গত হয়েছেন। এর আগে ২০১২ সালে মেয়ে বর্শাও আত্মহত্যা করেন।
সূত্র: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।