জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) মোটরযান নিবন্ধন, ফিটনেস সনদ ইস্যু, রুট পারমিট ও নবায়নে ঘুষসহ অন্যান্য সেবায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুমান নির্ভর, অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।
বুধবার (৬ মার্চ) রাজধানীর বনানী বিআরটিএ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, আপনি যেভাবে বলছেন এখানে ১০০ পার্সেন্টের বিষয় না। তারাই (টিআইবি) তো বলেছে ৪৬ শতাংশ। ঘুষ লেনদেন হয় না, এটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। যদি হয়ে থাকে, সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো আছে। পৃথিবীর সব দেশে যারা অনিয়ম-দুর্নীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আছে।
নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, বিআরটিএ ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করছে। কারণ, এতে বিআরটিএসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনুমাননির্ভর তথ্য যা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টিসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে এরূপ প্রতিবেদন প্রকাশে বিরত থাকার জন্য তাদেরকে অনুরোধ করা যাচ্ছে। আমরা টিআইবির কাছে এর লিখিত ব্যাখ্যা চাইবো। পাশাপাশি, টিআইবি যে গঠনমূলক-বাস্তবধর্মী সুপারিশগুলো করেছে তা আমলে নেওয়া হবে।
বিআরটিএ অনলাইন বিভিন্ন সেবার কথা তুলে সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী পরীক্ষার দিনই বায়োমেট্রিক দিয়ে দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে অনলাইনে প্রযোজ্য ফি জমা প্রদানপূর্বক আবেদন দাখিল করে ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স ওই দিনেই পেয়ে যাচ্ছে। যা ব্যবহার করে গাড়ি চালাতে পারছে। এছাড়াও অনলাইনে আবেদন দাখিলের ৭-১৫ দিনের মধ্যে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাকযোগে আবেদনকারীর ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। যেহেতু সেবা পেতে সশরীরে বিআরটিএতে আসার প্রয়োজন হয় না। সেহেতু উল্লেখিত সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি যুক্তিযুক্ত নয়।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান আরও বলেন, সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট সেবা পেতে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখিত গড় সময় ৩০ কর্মদিবসের বিষয়টি অসত্য-কল্পনাপ্রসূত।
১৫ অক্টোবর ২০২০ থেকে ফিটনেস নবায়নে অনলাইনে অ্যাপয়নমেন্ট গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, অ্যাপয়নমেন্ট অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে মোটরযান সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে হাজির করে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উপযুক্ততা সাপেক্ষে ফিটনেস সার্টিফিকেট একই দিনে প্রদান করা হয়। ফিটনেস নবায়নে মোটরযান ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানের লক্ষ্যে বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেল, মিরপুর অফিসে ১২ লেন বিশিষ্ট ভিআইসি চালু করা হয়েছে। অন্যান্য সার্কেল অফিসে ফিটনেস প্রদানের সময় সংশ্লিষ্ট মোটরযানের সচিত্র ছবি ধারণ করে ডিজিটালি আর্কাইভ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ফিটনেস নবায়নে ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যেহেতু স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে সেহেতু সংশ্লিষ্ট সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয় এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) টিআইবির পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস থেকে বছরে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা ঘুষ ও চাঁদা আদায় করা হয়। বিআরটিএ বাসের ফিটনেস ও অন্যান্য কাগজ হালনাগাদ করতে ৯০০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঘুষ নেয়। মামলা থেকে বাঁচতে বাস মালিকরা হাইওয়ে এবং ট্রাফিক পুলিশকে ৮৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঘুষ দেন। রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদা তোলা হয় ২৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। মালিক ও শ্রমিক সংগঠন ১২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে বাস থেকে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভার ইজারাদাররা পার্কিং ইজারার নামে ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা চাঁদা তোলেন। দেশের মানুষ অভ্যন্তরীণ চলাচলে মূলত নির্ভর করেন ব্যক্তি মালিকানা বাসের উপর। বড় শহরে গুলোতেও এই নির্ভরতা কম নয়। ২০২৩ সালে বিআরটিএ-এর তথ্য অনুযায়ী, এই নির্ভরতা ৯৮ ভাগের বেশি।
বিআরটিএতে দালাল নেই বললেই চলে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বলেন, টিআইবির প্রতিবেদন অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রতিবেদনে চাঁদাবাজির কথাও বলা হয়েছে। এটা তাদের একটা গোঁজামিল রিপোর্ট। সবকিছু মিলে তারা ৯০০ কোটি টাকা রাখতে হিসাব দিয়েছে। এই ৯০০ কোটি টাকার হিসাব তারা কোথায় পেলো এখানে তথ্য প্রমাণ টা কি? সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ তারা তো আমাদের কাছেও আসতে পারতো। তারা আসলে আমরা সেই ভাবে ব্যবস্থা নিতাম। এখানে আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমরা দুর্নীতিকে কখনও প্রশ্রয় দেই না দিব না। আমরা চাই হয়রানি মুক্ত কাজ হোক।
বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে দেশের শাসনভার জনগণের হাতেই তুলে দেন : প্রধানমন্ত্রী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।