জুমবাংলা ডেস্ক: কচুরিপানায় ভরা পুকুর কিংবা জলাশয়ে ভাসমান বেড তৈরী করে তার উপর অসময়ে তরমুজ চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বরিশালের রহমতপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। গত ২ বছর ধরে বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ নিয়ে গবেষণা করে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছেন তারা। স্থলের চেয়ে পানির উপর ভাসমান বেডে পরীক্ষামূলকভাবে বিষ মুক্ত তরমুজ চাষে সাফল্য পাওয়ায় এবার এই জাতের তরমুজ চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন তারা। নতুন উদ্ভাবিত জাতের তরমুজ চাষ কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারলে বিদেশী হাইব্রিড জাতের চেয়েও বেশি ফলন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদক রাহাত খান-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
বরিশাল রহমতপুরে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে গত দুই বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে ভাসমান বেডে বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ এর রোগবালাই, পুষ্টিগুণ ও ফলন সহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করে আসছে বিজ্ঞানীরা।
স্থলে মৌসুমী তরমুজের চেয়ে অসময়ে কচুরিপানার উপর তৈরী বেডে এই জাতের তরমুজ চাষে কোন ধরনের সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। রোগ বালাইও কম। জৈব বালাইনাশকের মাধ্যমে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ তরমুজ উৎপাদন করা সম্ভব। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে অসময়ের এই জাতের তরজুম চাষের উপযুক্ত সময়। রোপণের আড়াই থেকে ৩ মাসের মধ্যে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। গবেষণায় সাফল্য পাওয়ায় এবার অসময়ে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত তরমুজ চাষে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করতে সভা-সেমিনার সহ নানা প্রচারণা চালাচ্ছে তারা।
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার জানান, ভাসমান বেডে অমৌসুমে নিরাপদ উপায়ে তরমুজ চাষের প্রযুক্তি ইতিমধ্যে উদ্ভাবন করেছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। বীজ বপন করার আড়াই থেকে ৩ মাসের মধ্যে নিরাপদ উপায়ে ফসল উৎপাদন করে ঘরে তোলা যাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে বরিশাল সহ সারা দেশে অমৌসুমে নতুন জাতের এই তরমুজ চাষ করা গেলে নিরাপদ তরমুজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি অমৌসুমের কারণে কৃষক তার উৎপাদিত তরমুজের অধিক মূল্য পাবে বলে আশা করেন এই কৃষি বিজ্ঞানী।
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ পরীক্ষামূলক চাষে ভালো ফলন হয়েছে। ভাসমান বেডে তরমুজ চাষ দেখে কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। এই তরমুজ চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে অসময়ে তরমুজ উৎপাদন করে আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হবেন কৃষকরা।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রফি উদ্দিন, দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ৫ হাজার হেক্টর ভাসমান বেডে চাষাবাদ হয়। কৃষক নতুন এই পদ্ধতি শিখে তাদের বেডে অসময়ে উন্নত জাতের তরমুজ চাষ করতে পারবে। জলাশয়গুলো ব্যবহার হবে। কচুরিপানায় ভরা জলাশয় বা পুকুর পরিণত হবে সম্পদে। আগামী দিনে অসময়ে ভাসমান বেডে তরমুজ ও সবজী চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে তারা আশা করেন।
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভাসমান কৃষি প্রকল্পের পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে তারাই প্রথম ভাসমান বেডে অসময়ে বারি জাতের তরমুজ চাষ নিয়ে গবেষণা করেছেন। ২ বছরের গবেষণায় সাফল্য পেয়েছেন তারা। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা সহ গোপালগঞ্জে জলাবদ্ধতার কারনে অনেক জমিতে চাষাবাদ হয় না। গবেষণায় সাফল্য পাওয়ায় এবার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে সাথে নিয়ে ভাসমান বেডে অমৌসুমে তরমুজ চাষ ছড়িয়ে দিতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই পদ্ধতিতে জলাবদ্ধ জমি কিংবা পুকুর-জলাশয়ে অমৌসুমী তরমুজ চাষ করলে কৃষক লাভবান হবে প্রত্যাশা তাদের।
২০২০ সালে পটুয়াখালী লেবুখালীর আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ এর জাত আবিষ্কার করেন। পরে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে ভাসমান বেডে পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য পায় প্রতিষ্ঠানটি। গবেষণায় সাফল্য পাওয়ায় ইতিমধ্যে গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া, পিরোজপুর, আগৈলঝাড়া ও বানারীপাড়ায় কৃষকের মাঠে অমৌসুমের তরমুজ চাষ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।