আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অস্ট্রেলিয়ার প্রখ্যাত সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক চেং লেই ২০০৩ সালে যখন চীনে ইংরেজি ভাষার চ্যানেল সিসিটিভিতে কাজ করতে শুরু করেন তখন বেশিরভাগই ছিলেন তার মতো বিদেশ থেকে আসা।
চীনের রাষ্ট্রীয় ইংরেজি সংবাদ মাধ্যমের প্রধান মুখ হিসাবে কাজ করেছেন চেঙ্গ লেই। কঠোর নিয়ন্ত্রণে লেখা ‘চীনের গল্প’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করতেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানটি বেশ জনপ্রিয় ছিল। লাখ লাখ দর্শক ছিল অনুষ্ঠানটির।
পরবর্তীতে তিনি সিএনবিসির চীনের সংবাদদাতা হিসাবে নয় বছর কাজ করেন। এরপরে সিসিটিভি’র ইংরেজি নতুন নাম সিজিটিএন চ্যানেলে ২০১৩ সাল থেকে কাজ শুরু করেন।
কিন্তু গত মাস থেকে হঠাৎ করেই চেঙ্গ লেই মিডিয়া থেকে হারিয়ে যান। বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার সবরকম যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এমনকী সিজিটিএন ওয়েবসাইট থেকে তার প্রোফাইল এবং ইন্টারভিউগুলোও সরিয়ে ফেলা হয়।
সোমবার অস্ট্রেলিয়ার সরকার জানায়, ৪৫ বছর বয়সী ওই সাংবাদিককে আটক করেছে চীনের কর্তৃপক্ষ। তাকে অজ্ঞাত একটি স্থানে নজরবন্দি করে রাখার খবরও জানানো হয়। তবে কী কারণে তাকে আটক করা হয়েছে তা জানাতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ান সরকার।
ভিডিও লিংকের মাধ্যমে গত সপ্তাহে চেঙ্গের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান কূটনীতিকরা।
চেঙ্গের আটকের বিষয়ে সোমবার চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হুয়া চুনিং সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে পারছেন না, তবে চীন আইন অনুযায়ীই সব কিছু করছে।
অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ও একজন গণমাধ্যমকর্মীকে এভাবে আটকের ঘটনায় অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া ও চীনের মধ্যকার কূটনৈতিক উত্তেজনার কারণে এই আটকের ঘটনা ঘটতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের একজন উপস্থাপক হিসাবে চেঙ্গ লেই সীমানা বুঝে চলায় অভ্যস্ত ছিলেন। ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করার সময় তিনি বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির প্রধানদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। কিন্তু সেই সময়েও তিনি অনেক সময় রাজনীতি এড়িয়ে চলতেন। তবে চীনের বড় বড় অনেক অনুষ্ঠানও তিনি কাভার করেছেন।
কিন্তু যেখানে চীনের বিরুদ্ধে তার কোন কর্মকাণ্ডের তথ্য জানা যাচ্ছে না, সেখানে তাকে এভাবে আটক করার বিষয়টি বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের হতবাক করে দিয়েছে। এদিকে চীনের আইনি ব্যবস্থা নিয়েও অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ ওই দেশে অভিযোগ ছাড়াই একজনকে অনেক মাস আটকে রাখা যায়।
চীনে জন্ম হলেও ১০ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে চলে যান চেঙ্গ লেই। তার বাবা সেই সময় ডক্টরেট ডিগ্রি নিতে অস্ট্রেলিয়ায় যান। চেঙ্গ লেই সেখানেই অস্ট্রেলিয়ান ভাষা শেখেন। এখনও তার পিতা-মাতা এবং দুই সন্তান অস্ট্রেলিয়াতেই বসবাস করে। মেলবোর্নে অর্থনৈতিক খাতের চাকরিতে বিরক্ত হয়ে ২০০০ সালে তিনি চীনে চলে আসেন। চীন ও ইংরেজির দক্ষতা এবং দুই দেশের সংস্কৃতি জানার বিষয়টিকে তিনি কাজে লাগাতে চাইছিলেন।
চ্যাঙ্গ লির দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং চীনে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত গিওফ রাবি বলেন, চেঙ্গ লেই খুবই অভিজ্ঞ একজন সাংবাদিক। তার প্রতিবেদনগুলো খুবই বস্তুনিষ্ঠ। রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের ভেতরে থেকেই যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ হিসাবে চেঙ্গ লেই কাজ করেছেন। গিওফ রাবি আরও বলেন, একজন পেশাদার এবং স্মার্ট ব্যক্তি হিসাবে চেঙ্গ লেই খুব ভালো ভাবেই বুঝতেন যে তিনি কোথায় কাজ করছেন। এ ব্যাপারে তিনি খুব সতর্ক থাকতেন।
গিওফ রাফির ভাষায়, এটা বোঝা বেশ কঠিন ঠিক কি কারণে চেঙ্গ লেই এরকম একটি সমস্যায় পড়েছেন।
এদিকে, বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বে চীন যতটা নিজের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে, ততই চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠছে। এর আগে ২০১৮ সালে নিরাপত্তাজনিত কারণে ফাইভ জি নেটওয়ার্কের কাজে অংশ নেয়া থেকে চীনের প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধ করে অস্ট্রেলিয়ার ডানপন্থী সরকার।
এই বছর সেই উত্তেজনা আরো বাড়ে। গত এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাস মহামারির উৎপত্তি খোঁজার আহবান জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া- যা চীনকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে বলে বেইজিং মনে করে।
বাণিজ্য দিয়ে তার পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার অভিযোগ ওঠের চীনের বিরুদ্ধে। দেশটি অস্ট্রেলিয়ার গরু, ওয়াইন এবং বার্লি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বছর থেকে দ্বিপাক্ষিক সব বৈঠক থেকে অস্ট্রেলিয়াকে বাইরে রাখা হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক এই দ্বন্দ্বের সঙ্গে চেঙ্গ লেইকে আটকের কোন সম্পর্ক আছে বলে মানতে চান না অস্ট্রেয়িলার কর্মকর্তারা। অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেঙ্গকে চীন ‘গুটি’ হিসাবে ব্যবহার করছে বলেও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিসে পেইনি মনে করেন না।
তিনি বলেছেন, ‘আমি এটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করতে চাই না। এটা একেবারেই অনুমান নির্ভর একটা ব্যাপার হবে। আমাদের এখন কাজ হলো, তার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করা।’ সূত্র : বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।