স্পোর্টস ডেস্ক: আর খুব বেশি সময় বাকি নেই গুরুত্বপূর্ণ অ্যাশেজ সিরিজ শুরুর। এর ঠিক আগে সবাইকে চমকে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলেন টিম পেইন।
আজ শুক্রবার হোবার্টে এক সংবাদ সম্মেলনে এক লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে এই ঘোষণা দিয়েছেন টিম পেইন।
মূলত মাঠের বাইরের আপত্তিকর এক ঘটনার কারণে দায়িত্ব ছাড়লেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ২০১৭ সালে তাসমানিয়া ক্রিকেটের এক সাবেক নারীকর্মীকে ‘সেক্সটিং’র অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
হুট করে অ্যাশেজের আগে দিয়ে পেইনের এমন সিদ্ধান্তের ফলে নতুন অধিনায়ক খোঁজার সময়ও পাচ্ছে না অস্ট্রেলিয়া। তবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মেনে আসন্ন অ্যাশেজে দলের দায়িত্ব কাঁধে নিতে পারেন এতদিন ধরে সহ-অধিনায়ক থাকা প্যাট কামিনস।
যদি সত্যিই কামিনসকে দেওয়া হয় অধিনায়কত্ব, তাহলে ৬৫ বছরের মধ্যে প্রথম পেসার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হবেন তিনি। ক্রিকেট বোর্ডের অনুমোদন পেলে অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের ৪৭তম অধিনায়ক হবেন কামিনস।
অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর অ্যাশেজের প্রথম টেস্টেও অনিশ্চিত পেইন। সেক্ষেত্রে দুই অনভিষিক্ত অ্যালেক্স ক্যারে অথবা জশ ইংলিসের মধ্যে একজনকে দেওয়া হবে উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্ব। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়েছে ক্যারেকে।
পেইনের অধিনায়কত্ব ছাড়ার পেছনে সেক্সটিংয়ের ঘটনাটি প্রায় চার বছরের বেশি সময়ের আগের। দীর্ঘ সাত বছর পর ২০১৭ সালে টেস্ট দলে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। এর মাসখানেক আগে তাসমানিয়া ক্রিকেটের এক নারী কর্মীকে আপত্তিকর কিছু মেসেজ পাঠান তিনি।
ফক্স স্পোর্টসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সেই সেক্সটিংয়ের সময় নিজের যৌনাঙ্গের ছবি সেই নারীকর্মীকে মেসেজ দিয়েছিলেন পেইন। পাশাপাশি সেই নারীকর্মীকে উত্তেজক কিছু মেসেজ দিয়ে যৌনকর্মের আহ্বান জানান অস্ট্রেলিয়ার সদ্য সাবেক অধিনায়ক।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের জুনে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও ক্রিকেট তাসমানিয়ায় অভিযোগ করেন সেই নারী। তবে তখন করা তদন্তে পার পেয়ে যান পেইন। সেই বছরের জুনে এটি অভিযোগ করা হলেও, মার্চ থেকেই এ বিষয়ে ধারণা ছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের।
এখন নতুন করে সেই ঘটনা সামনে আসায় নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন পেইন। তবে দলের সঙ্গে থাকার কথা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে পেইনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। শিগগিরই ঘোষণা করা হবে নতুন অধিনায়কের নাম।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান রিচার্ড ফ্রেউডেন্সটেইন বলেছেন, ‘পেইনের মনে হয়েছে তার পরিবার ও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের জন্য এটিই সেরা সিদ্ধান্ত। বোর্ড এরই মধ্যে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে। এখন জাতীয় নির্বাচকরা নতুন অধিনায়ক বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করবেন।’
লিখিত বিবৃতিতে পেইন বলেছেন, ‘আজ আমি অস্ট্রেলিয়ার পুরুষ টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি। এটি সত্যিই অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত। তবে আমি, আমার পরিবার এবং ক্রিকেটের জন্য এটিই সঠিক।’
‘এই সিদ্ধান্তের ব্যাকগ্রাউন্ড চার বছর আগের সেই ঘটনা। তখন আমি এক সহকর্মীর সঙ্গে কিছু মেসেজ আদানপ্রদান করেছিলাম। তখন এ বিষয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ইন্ট্রেগিটি ইউনিটেও তদন্ত হয়। সেটিতে আমি পুরোপুরি সহযোগিতা করেছি। তদন্তে দেখা গিয়েছিল, সেই ঘটনায় বোর্ডের কোনো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি।’
‘তবু আমি সেই ঘটনাকে ঘিরে এখনও সত্যিই দুঃখিত। তখনই আমি আমার পরিবার ও স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ক্ষমা ও সমর্থনের জন্য আমি তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। আমরা ভেবেছিলাম সেই ঘটনা অতীত। তাই দলের ওপরই পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছিলাম। যেমনটা দিয়েছি গত ৩-৪ বছরে।’
‘যাই হোক, সম্প্রতি জানতে পেরেছি আমার মেসেজগুলো বাইরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় আমি বলতে চাই, ২০১৭ সালে করা আমার সেই কাজ একজন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের জন্য মোটেও সমীচীন নয়। আমি দুঃখিত, আমার পরিবার ও স্ত্রীকে দেওয়া কষ্টের জন্য। খেলাটির মর্যাদা ক্ষুণ্ন করায় দুঃখপ্রকাশ করছি।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের মার্চে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে বল টেম্পারিং কেলেংকারির পর টেস্ট অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন পেইন। তার অধীনে ২৩টি টেস্ট খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। এবার আরেকটি কেলেংকারির মধ্য দিয়েই শেষ হলো পেইনের অধিনায়কত্ব অধ্যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।