ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি কুকুরের জাত-সরাইল গ্রেহাউন্ড। সরাইল হাউন্ড বা বেঙ্গল হাউন্ড নামেও পরিচিত এই কুকুর একসময় শিকার, নিরাপত্তা এবং আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে সমাদৃত ছিল। শক্তিশালী পাঁজর, লম্বা দেহ, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর দৌড়ের গতির জন্য পরিচিত এই কুকুর আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।
সরাইল গ্রেহাউন্ডের শরীর লম্বাটে, পাঁজর মজবুত এবং চোখ তীক্ষ্ণ। উচ্চ গতিতে দৌড়ানোর ক্ষমতা এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যা তাদের শিকারের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী করে তুলে। অতীতে শিকার থেকে শুরু করে নিরাপত্তা রক্ষায় এদের ব্যবহারের ইতিহাস রয়েছে।
শুধু শিকার বা পাহারাদারই নয়, সরাইল হাউন্ড ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সমাজে একসময় এই কুকুর পোষা মর্যাদার নিদর্শন হিসেবে গণ্য হতো। মহান মুক্তিযুদ্ধেও এই জাতটির ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর পোষা সরাইল গ্রেহাউন্ড “ফিল্ড মার্শাল” একাধিকবার তার মনিবের জীবন রক্ষা করেছিল বলে জানা যায়।
শিকারের অবিশ্বাস্য দক্ষতা থাকার কারণে এই কুকুর গার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেনাবাহিনী এবং পুলিশে। দীর্ঘ কয়েক বছর আগে স্থান পেয়েছে র্যাব ডগ স্কোয়াডে।
আজ সেই ঐতিহ্যের কুকুর প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। পরিবর্তিত জীবনধারা, শিকারের প্রয়োজন কমে যাওয়া এবং আধুনিক প্রজাতির কুকুর পালনের প্রবণতা বৃদ্ধির কারণে সরাইল গ্রেহাউন্ডের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে সরাইল অঞ্চলের হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারেই এদের দেখা মেলে।
স্থানীয়দের দাবি, এই কুকুর জাতকে রক্ষা না করলে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি অংশ হারিয়ে যাবে। প্রজনন কর্মসূচি, সরকারি সহায়তা এবং সচেতনতা বাড়াতে পারলেই সরাইল গ্রেহাউন্ডকে আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।