জুমবাংলা ডেস্ক : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অস্ত্রগুলো থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এখনো তিন হাজার ৮৬০টি অস্ত্র জমা পড়েনি। যার মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি প্রভাবশালী অনেক আমলাও অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছিলেন।
তারাও সেগুলো থানায় জমা দেননি। খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. শহিদুজ্জামান অস্ত্র নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১৫ বছরে সারা দেশে ১৭ হাজার ২০০ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
তাদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার সময় দায়সারা গোয়েন্দা তদন্ত হয়েছে বলে অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে তারা নিয়েছেন সাত হাজার ৫৫১টি লাইসেন্স। বিএনপির নেতাকর্মীরা নিয়েছেন দুই হাজার ৫৯০টি। এ ছাড়া জাতীয় পার্টিসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যবসায়ীও অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছিলেন।
সেই লাইসেন্সগুলো স্থগিত করে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অস্ত্রগুলো থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা পড়েছে ১৩ হাজার ৩৪০টি। তিন হাজার ৮৬০টি অস্ত্র জমা পড়েনি।
অস্ত্র জমা না দেওয়া বড় অংশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। যেসব আওয়ামী লীগ নেতা অস্ত্র জমা দেননি : প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল-আলম হানিফ এবং তাঁর চাচাতো ভাই কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান অস্ত্র জমা দেননি।
টাঙ্গাইল-২ আসনের সাবেক এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির এবং তাঁর ভাই শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনির তাঁদের চারটি অস্ত্র জমা দেননি। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের লাইসেন্স করা দুটি অস্ত্রের একটিও জমা হয়নি। ফেনীর সাবেক এমপি নিজাম উদ্দীন হাজারী এবং তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগমও অস্ত্র জমা দেননি। নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে আটটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। একটিও জমা হয়নি থানায়। সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, তাঁর স্ত্রী তারাব পৌরসভার সাবেক মেয়র হাছিনা গাজী, বড় ছেলে গাজী গোলাম মূর্তজা এবং ছোট ছেলে গাজী গোলাম আসরিয়াও অস্ত্র জমা দেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর ও ঢাকা বিভাগে, সাত হাজার ৫৫১টি। দ্বিতীয় খুলনা বিভাগে, দুই হাজার ৩০০টি। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে এক হাজার ৯০০টি এবং সিলেট বিভাগে এক হাজার ১৫০টি লাইসেন্স দেওয়া হয়।
বাকি বিভাগগুলোতে দেওয়া হয় আরো পাঁচ হাজার অস্ত্রের লাইসেন্স। সবচেয়ে কম অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় ময়মনসিংহ বিভাগে। এর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। নির্দিষ্ট সময়ে জমা না দেওয়ায় অবৈধ বিবেচনায় সেগুলো উদ্ধারে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে যৌথ বাহিনী সারা দেশে অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৩১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭৪ জনকে।’ তিনি জানান, প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জমা না দেওয়া বৈধ অস্ত্র এখন অবৈধ।
হত্যা মামলার আসামিরাও পেয়েছেন লাইসেন্স : টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান ওরফে মিরন, টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান ওরফে রানা, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি ও জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাকন অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।