মার্ভেল স্টুডিওর সুপার হিরো অ্যান্ট-ম্যানের কথা মনে আছে? চাইলেই অতিপারমাণবিক পর্যায়ে ছোট করে ফেলা যায় যেকোনো কিছু। আবারও কোনোকিছু অতিকায় করে ফেলাও মুহূর্তের ব্যাপার। কমিক বা চলচ্চিত্রে গল্পের প্রয়োজনে কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়। তাই, বিজ্ঞান পুরোপুরি অনুসরণ করা হয় না। অ্যান্ট-ম্যান নিয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখার দিকে আমরা যাবো না। শুধু জানার চেষ্টা করবো, বাস্তব দুনিয়ায় মানুষ নিজে যদি ইচ্ছে মতো ছোট বা বড় হতে পারতো তাহলে কী হতো? পারমাণবিক পর্যায়ে যদি আমরা নিজেদের ছোট করে ফেলতে পারতাম তাহলেই বা কী হতো?
মহাবিশ্বে আকার অনুযায়ী পরিবেশ পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়। ঝুঁকি ও সম্ভাবনাও হয় ভিন্ন। ধরা যাক, আপনি কোনোভাবে নিজের আকার ১ মিলিমিটারে নামিয়ে আনলেন। ব্যাঙের ডিম মোটামুটি এই আকারের হয়। এই পর্যায়ে শিকারিদের সংখ্যা নেহাত কম হয়। এখানে টিকে থাকাও তাই কঠিন।
প্রাণিকোষের আকার প্রায় ১০ মাইক্রোমিটারের মতো। বলা প্রয়োজন, এক মাইক্রোমিটার এক মিলিমিটারের ১ হাজার ভাগের একভাগ দৈর্ঘ্য। এক মাইক্রোমিটারের ১ হাজার ভাগের একভাগকে বলে ন্যানোমিটার। আর এই ন্যানোমিটারের ১০ ভাগের একভাগ দৈর্ঘ্যকে বলা হয় ১ অ্যাংস্ট্রম।
পরমাণুর ব্যাসার্ধ এই এককে মাপা হয়। হাইড্রোজেন পরমাণুর ব্যাসার্ধ প্রায় ০.৫৩ অ্যাংস্ট্রম। বুঝতেই পারছেন, পারমাণবিক পর্যায়ে ছোট হতে হলে মানুষের আঁকার হতে হবে ১ অ্যাংস্ট্রমেরও কম। পুরো মানবদেহ সংকুচিত করে এই আকারে নিয়ে আসা সম্ভব কিনা তা বিতর্কের বিষয়। কিন্তু যদি সম্ভব হয়, তাহলে ঘটনাটা কী ঘটবে? পারমাণবিক জগতের ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটা কেমন হবে? ওই অবস্থায় কি জীবিত থাকা সম্ভব?
পরমাণু কতোটা ছোট তা বোঝার চেষ্টা করা যাক আগে। একশ কোটি পরমাণুকে যদি এক জায়গায় জড়ো করতে পারেন, তাহলে সেটা একটি টেনিস বলের সমান। উল্টোভাবে বললে একটি টেনিস বলের সমান আকারের বস্তুতে প্রায় একশ কোটি পরমাণু থাকে।
পারমাণবিক আকারে যেতে প্রথমেই সমস্যায় পড়তে হবে ভর নিয়ে। ভর অপরিবর্তিত রেখে আকার ছোট করার অর্থ হলো ঘনত্ব বেড়ে যাওয়া। ফলে, পিঁপড়ার সমান আকারের কোনো মানুষের পায়ের নিচের চাপ স্বাভাবিক আকারের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার গুণ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ, পিঁপড়া আকারের কোনো মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপের ওজন হবে প্রায় ৭০ কেজি।
আকার সংকুচিত হলে দেহের প্রায় প্রতিটি জৈবিক কর্মকাণ্ডে এর প্রভাব পড়বে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, আপনি যদি নিজেকে ১ ইঞ্চি আকারের সংকুচিত করেন, তাহলে দেহের উপরিভাগ বা ত্বকের ক্ষেত্রফলও কমবে সেই হারে। ত্বকের মাধ্যমে দেহের অতিরিক্ত তাপ বের করে দিই আমরা। ক্ষেত্রফল কমে গেলে তাপ বের হওয়ার জায়গা যাবে কমে। ফলে অতিরিক্ত তাপ বের হওয়ার পরিমাণও কমে যাবে। হিসেব অনুযায়ী, মানবদেহ ১ ইঞ্চি সংকুচিত হলে ত্বক প্রায় ৫ হাজার ভাগ ছোট হয়ে যাবে।
শুধু ত্বক নয়, ফুসফুসের আকারও কমে যাবে প্রায় ৫ হাজার ভাগ। তবে, এ অবস্থায় শ্বাস নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত অক্সিজেন বাতাস থেকে আলাদা করে নিতে কোনো অসুবিধা হবে না।
তবে, এই আকারের শরীরের শক্তি ধরে রাখতে কিন্তু কম জ্বালানি বা খাদ্য হলে চলবে না। শরীরের ওজন যেহেতু সমান থাকবে, এই শক্তি যোগানোর জন্য স্বাভাবিক মানুষের মতোই খাবার খেতে হবে। কারণ দেহে তাপ উৎপাদনের হার এর ভরের সমানুপাতিক। আর এই তাপ উৎপাদনের একমাত্র উপায় হলো শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়া ভীষণভাবে বাড়িয়ে ফেলা অথবা সমপরিমাণ শক্তির যোগান বাইরে থেকে অন্য কোনোভাবে দেওয়া।
আর এ সবকিছু কিন্তু শুধু ১ ইঞ্চি আকারে সংকুচিত হওয়া মানুষের জন্য প্রযোজ্য। পারমাণবিক পর্যায়ে যাওয়ার পথে আরও নানা ঘটনা আপনার অপেক্ষায় আছে।
সংকুচিত হওয়ার সময় প্রথমে চারপাশের সবকিছু আপনার কাছে আরও বড় থেকে বড় হতে থাকবে। এরপর হঠাৎ করেই নেমে আসবে অন্ধকার। কারণ বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের আকার যদি স্বাভাবিক আকারের ১০ হাজার ভাগের একভাগে নামিয়ে আনা যায় তাহলে চোখের লেন্স দৃশ্যমান আলোতে কাজ করা বন্ধ করে দিবে। আলো প্রবেশ করার মতো পর্যাপ্ত ছিদ্র থাকবে না চক্ষুলেন্সে।
নিজের আকার অ্যাংস্ট্রম পর্যায়ে নিয়ে গেলে অক্সিজেন অণু আপনার কাছে দেখতে হিমালয় পর্বতের মতো মনে হবে। অর্থাৎ বেঁচে থাকার মতো প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাওয়ার কোনো সুযোগ আর থাকবে না। শুধু অক্সিজেন নয়, আশেপাশের সকল পরমাণু আপনার সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। দেখতে পারবেন ইলেকট্রনের রহস্যময় মেঘ। পরমাণুর অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম।
অ্যাংস্ট্রম পর্যায়ে মানবদেহ সংকুচিত করার ক্ষেত্রে একটি মৌলিক সমস্যা আছে। মহাকাশে আমরা যে পরিমাণ নক্ষত্রের দেখা পাই, তার চেয়ে বেশি সংখ্যক অণু-পরমাণু আছে আমাদের দেহে। এ সমস্ত পরমাণুকে সংকুচিত করে এক পরমাণুর চেয়েও ছোট করলে বস্তুর আগের বৈশিষ্ট্য আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। অর্থাৎ মানুষের কোনো অস্তিত্ব সে পর্যায়ে থাকার সম্ভাবনা নেই। এসব পরমাণু তখন হয়তো পরিণত হবে ব্ল্যাকহোল কিংবা নিউট্রন স্টারের মতো বস্তুতে।
সত্যি কথা বলতে কি, আমরা যে আকারে আছি তাতেই জীবনযাপন করা বেশি সহজ। এখানে নেই কোনো দৈত্যাকার অণুর চাপ। প্রতিদিন তাড়া করে না কোনো দানবীয় প্রাণীর হিংস্র থাবা। এই আকার নিয়েই আমরা পৃথিবীর সব রঙ সৌন্দর্য্য উপভোগ করছি। পরমাণুর ভেতরটা কেমন তার ছবি এঁকে ফেলেছি। পৃথিবী ছাড়িয়ে উঁকি দিচ্ছি মহাকাশের গভীরে। একদিন এই আমরাই হয়তো মহাবিশ্বের জটিলতম রহস্যের সমাধান করে ফেলবো। আর এসবের জন্য আকারে ছোট বা বড় হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।