আব্দুল মান্নান: জাপানের হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটির অ্যাম্বাসেডর হিসেবে আগামী তিন বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম।
তিনি বাংলাদেশ ও বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমি (টিডব্লিউএএস)’র ফেলো এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
আজ বুধবার এক বার্তায় অ্যাম্বাসেডর নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন জাপানের হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্ট হাওকিন কায়োহিরো।
প্রেরিত বার্তায় বলা হয়, পহেলা জুলাই ২০২২ হতে ৩১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত সময়ের জন্য মো. তোফাজ্জল ইসলাম হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড.মো.তোফাজ্জল ইসলাম জানান, ‘ধন্যবাদ জানাই হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটিকে আমাকে তাদের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়টি তার এলামনাইদের মধ্যে শিক্ষা, গবেষণা এবং শিল্পে অত্যন্ত প্রভাবশালী অবস্থানে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সর্বমোট ৩০ জনকে অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। তাদের মধ্যে আমি একজন হতে পেরে গর্ববোধ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যারা অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তারা উক্ত ইউনিভার্সিটির জ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক আলো নিজ দেশ এবং বিভিন্ন অঞ্চলে ছডিয়ে দেয়া এবং এলামনাই এসোসিয়েশন গঠন, তা সক্রিয়করন এবং উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে নিজ দেশ বা অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংযোগ স্হাপনে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে থাকেন।’
অধ্যাপক ড.মো. তোফাজ্জল ইসলাম বাংলাদেশে আধুনিক বায়োটেকনোলজির প্রয়োগে কৃষিতে একটি নতুন বিপ্লব সাধনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২০১৬ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৮ জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ঘটে যাওয়া গমের মহামারীর সংকটকালে তিনিই প্রথম রোগজীবাণু ছত্রাকটির জীবনরহস্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে গমের শত্রু চিহ্নিত করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ওই যুগান্তকারী গবেষণায় তিনি চারটি মহাদেশের ৩১ জন বিজ্ঞানীকে সম্পৃক্ত করে একটি জাতীয় সমস্যার সমাধান করেন। তার এ আবিষ্কারের ফলে রোগটির মোকাবেলা করার জন্য কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ দেওয়ায় পরবর্তী বছর গম ফসলের ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব হয়।
বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি গমের ব্লাস্ট রোগটি মোকাবেলায় তিনি জিন এডিটিং, ন্যানো টেকনোলজি, প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াসহ আধুনিক বায়োটেকনোলজি প্রয়োগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেন। সম্প্রতি তিনি গমের ব্লাস্ট রোগ দ্রুত শনাক্তকরণের একটি সহজ জীবপ্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন। যা বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের গম আমদানি-রপ্তানিতে (সঙ্গনিরোধে) গবেষণায় এবং কৃষকের মাঠে ব্যাপক ব্যবহার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া তিনি ধান, গম এবং স্ট্রবেরিতে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে সাশ্রয়ী প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া প্রযুক্তি আবিষ্কার করে কৃষিক্ষেত্রে নতুন বিপ্লব ঘটান। ভেষজ উদ্ভিদ এবং অণুজীব থেকে এ পর্যন্ত তিনি ৫০টির অধিক রোগজীবাণু প্রতিরোধী নতুন প্রাকৃতিক যৌগ বা এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেন। তার গুরুত্বপূর্ণ এসকল গবেষণাকর্মের জন্য তিনি সম্প্রতি স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের প্লস বায়োলজিতে প্রকাশিত বিজ্ঞানীদের ডাটাবেস সম্পর্কিত এক প্রবন্ধে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দুই শতাংশ বিজ্ঞানীদের একজন এবং বাংলাদেশে জীবপ্রযুক্তি, কৌলিতত্ত্ব এবং অণুপ্রাণ বিজ্ঞানে দেশের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
অধ্যাপনা এবং গবেষণায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক তোফাজ্জল ২০১৬ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হন।
মৌলিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ দেশে-বিদেশে তিনি অনেক পুরষ্কার, গোল্ড মেডেল এবং অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। তন্মধ্যে, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী স্বর্ণপদক-২০১১ (২০১৪ সালে প্রদত্ত) এবং আইডিবি ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৮, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ভোকেশনাল এক্সিলেন্স এওয়ার্ড-২০১৭, কমনওয়েলথ ইনোভেশন এওয়ার্ড-২০১৯, কেআইবি বেস্ট প্রেজেন্টার পুরস্কার-২০১৬। কৃষি বিজ্ঞানে মৌলিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পরপর দু’বার (২০০৪ এবং ২০০৭) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক গবেষণা অ্যাওয়ার্ড এবং জাপানের জেএসবিবিএ শ্রেষ্ঠ তরুণ বিজ্ঞানী পদক-২০০৩ উল্লেখযোগ্য।
টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ইম্প্যীক্ট ২০২২ রেংকিং অনুযায়ী হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটি জাপানে ১ম এবং বিশ্ব ১০ম স্থান লাভ করে। ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি জাপানের প্রথম কৃষিতে উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।