জুমবাংলা ডেস্ক : আইএস নির্মূল হয়ে যাক এমনটা প্রত্যাশা করেন সাবেক জিহাদিকন্যা তানিয়া জয়া। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তানিয়ার জন্ম ১৯৮৪ সালে লন্ডনের কাছে। নিউ ইয়র্কে ১১ই সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি উগ্রপন্থি হয়ে ওঠেন। তারপর ২০১৩ সালে পালিয়ে যান সিরিয়া। কিন্তু পরে তিনি সে পথ থেকে ফিরে সমাজের মূলধারায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। অধিকারকর্মী হিসেবে কাজ করছেন- কিভাবে কট্টর জিহাদি থেকে একজন সমাজকর্মী হয়ে উঠেছেন সেই কাহিনী বর্ণনা করেছেন ভারতের ওয়ার্ল্ড ইন ওয়ান নিউজ (ডব্লিউআইওএন বা উইঅন) কে। তার ওপর ভিত্তি করে তানিয়ার একটি সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছে ভারতের অনলাইন ডিএনএ। এতে তানিয়া বলেছেন, তিনি চান না তার সন্তানরা তাদের পিতা বা তার বন্ধুদের মতো বেড়ে উঠুক।
কারণ, তারা নারীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন সেজন্য সে পথকে আর পছন্দ নয় তার। ওই সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ এখানে তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: সিরিয়াতে আইসিস নতুন করে সংগঠিত হওয়ার রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে। এতে কি আপনার মনে হয় আইসিস কোনদিন শেষ হয়ে যাবে? এ ছাড়া এশিয়ার অন্য এলাকাগুলোতে তাদের ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তানিয়া জয়া: তাদেরকে খতম বা শেষ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা নতুন করে সংগঠিত হতে পারে। তাদের তেমন পরিকল্পনাও আছে। তারা তাদের এজেন্ডাকে বন্ধ করবে না। তারা অপেক্ষা করছে নতুন করে গ্রুপিংয়ের জন্য। আমার মনে হয়, ফিলিপাইন ও আফগানিস্তানে তারা বেড়ে উঠছে। এশিয়া বা ভারতে তাদের এই বেড়ে উঠার বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানি না।
প্রশ্ন: আমাদেরকে কি আপনি আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে এবং এখন কোথায় বসবাস করছেন সে সম্পর্কে বলতে পারেন? এ ছাড়া আপনি কিভাবে আইসিসের একজন র্যাংকিং সদস্য থেকে উগ্রবাদ পরিহার করে সমাজকর্মীতে পরিণত হলেন সে সম্পর্কে বলতে পারেন?
তানিয়া জয়া: আমি একজন বৃটিশ বাঙালি। বড় হয়েছি ইংল্যান্ডে। তখন আমার বয়স ছিল ১৭ বা ১৮ বছর। এ সময়ে আমি একজন উগ্রপন্থি হয়ে উঠি। পরিণত হই একজন মুসলিম উগ্রবাদীতে। ৯/১১ হামলার পর আমি ১৯ বছর বয়সে জন জর্জিলাস (ইয়াহিয়া আল বাহরুমি)কে বিয়ে করি। তার সঙ্গে আমার চারটি সন্তান রয়েছে। বৈবাহিক সম্পর্কটা এতই জটিল ছিল যে, আমি বিবাহ থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। ১০ বছর পরে ২০১৩ সালে আমরা তুরস্কে অবস্থান করতে থাকি। এ সময় আমার সাবেক ওই স্বামী আমাদেরকে সীমান্ত অতিক্রম করিয়ে নিয়ে যায়। তখন আমি মার্কিন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখি যে, আমার সন্তানদের জীবন নিয়ে আমি ভীতশঙ্কিত। তাই আমি ওর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাই। সেখান থেকে আমি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাই। বর্তমানে আমি বসবাস করছি ডালাসে।
প্রশ্ন: একজন নারী হিসেবে, একজন স্বাধীন চিন্তার ধারক হিসেবে আপনার এই বিবর্তনের কাহিনী এখন কিভাবে নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
তানিয়া জয়া: আমি মনে করি হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাদের জন্য আমি হতে পারি একজন উত্তম রোল মডেল। পশ্চিমা বহু টিনেজার পরিচয় সংকটে ভুগছে এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তারা মাদক, ধর্মীয় অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে নিজেদের উগ্রপন্থায় কপি করে নেয়। যখন আমি মুসলিম উগ্রপন্থি হয়ে উঠার সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমার শুভ শক্তি ত্যাগ করি, মানবজাতি হিসেবে আমার অধিকারকে ত্যাগ করি। আমি চাই গৃহাভ্যন্তরে নির্যাতিত যুবতীদের উদ্ধার করে তাদের জীবন পুনর্গঠন করতে।
প্রশ্ন: কট্টরপন্থি জিহাদি থেকে আপনি উগ্রপন্থি বিরোধী অধিকারকর্মী হয়েছেন, আপনার চারপাশের মানুষজন আপনাকে কিভাবে গ্রহণ করেছে? যদি এমন কোনো নারীর সন্ধান পান যিনি আপনার বিগত পথের দিকে ধাবিত, তাহলে তাদেরকে আপনি কি বলবেন?
তানিয়া জয়া: এমন কোনো মানুষকে যদি বের করে আনা যায়, তাদেরকে একটি ভিন্ন একটি স্থান দেয়া যায়, তারা নতুন করে নিজেকে সাজাতে পারে। তারা শিখতে শুরু করে। নতুন কিছু হওয়ার চেষ্টা করে। আমি আশা করি বিষাক্ত পরিবেশ ভেঙে দিয়ে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেই। সহিংস উগ্রপন্থা বিষয়ক কর্মসূচির বিরুদ্ধে যে সংগঠন কাজ করে আমি তাদের হয়ে কাজ করি। পরিচালনা করি সেই সব পিতামাতা, শিক্ষক ও পুলিশ অফিসার বা অন্য যেকারো জন্য, যারা উগ্রবাদ বিরোধী এই কোর্স গ্রহণ করতে চায়। এই ওয়ার্কশপ ফ্রি।
প্রশ্ন: আপনাকে কখনো কখনো ‘আইসিসের ফার্স্টলেডি’ বলা হতো। এটা জেনে আপনার কেমন অনুভূতি হতো?
তানিয়া জয়া: ওটা একটা ভয়াবহ নাম। আইসিসের একজন কমান্ডার, উচ্চ পদস্থ মার্কিনিকে বিয়ে করেছিলাম। সে আইসিসে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু তার থেকে আমি আলাদা হয়ে গিয়েছি। চলে এসেছি আমেরিকা। আমি ছিলাম উগ্রবাদী। বিয়ে করেছিলাম একজন উগ্রবাদিকে। শেষ পর্যন্ত সন্তানদেরকে নিয়ে সরে আসতে পেরেছি। নিজে নিজে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে আমি উগ্রবাদ থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমি সব সময় মধ্যপ্রাচ্যের মনস্তত্ত্ব, দর্শন ও বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে আগ্রহী ছিলাম।
প্রশ্ন: কোন ঘটনা আপনাকে উগ্রপন্থি হয়ে উঠার কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল?
তানিয়া জয়া: আমি বাস্তবে চাইনি যে আমার সন্তানরা তার পিতা বা তার পিতার বন্ধুদের মতো হোক, তারা নারীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে সেই আচরণ রপ্ত করুক। আমি চেয়েছি আমার সন্তানরা অন্যের জীবন ধ্বংস করার চেয়ে নিজের জীবন গড়–ক ও অন্য মানুষকে সহায়তা করুক। কারণ, জঙ্গিরা কখনো বিশ^টাকে অথবা পরিবেশকে বাঁচাতে চায় না। তারা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। তারা দায়িত্বজ্ঞানহীন। আমি আমার সন্তানের জীবন শেষ হয়ে যাক এমনটা দেখতে চাই না।
প্রশ্ন: সব নারীকে আপনি কি পরামর্শ দিতে চান?
তানিয়া জয়া: নারীদের প্রতি আমার বার্তা হলো উচ্চাকাঙ্খা পোষণ করুন। এর চেয়ে কম কিছু নয়। নিজেকে শিক্ষিত করে তুলুন। কারো ওপর নির্ভর করবেন না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।