রুহুল আমিন রাসেল : আউটসোর্সিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার মতো দেশগুলোকে ছাড়িয়ে বিশ্বে এখন দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। এ খাতে ২০ লাখ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা থাকলেও, নিবন্ধিত আছেন সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার। তারা বিক্রয় ও বাজারজাতকরণ সেবায় এগিয়ে রয়েছেন। এই খাতে আয় এক বিলিয়ন হলেও, সম্ভাবনা আছে ৫ বিলিয়নের। আগামীতে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন- জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ৫ শতাংশ অবদান রাখবে আউটসোর্সিং। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্যে এসব জানা যায়।
বিশ্বে বছরে এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার রয়েছে আউটসোর্সিংয়ে। ভারত এই খাতে আয় করছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ২০২১ সালে আয়ের স্বপ্ন দেখছে ৫ বিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রে ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস- বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, আউটসোর্সিংয়ে গত ১০ বছরে ভালো উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। ফলে এখন আমাদের আয় এক বিলিয়ন ডলার। আগামী ২০২১ সালে আমাদের আয় ধরা হয়েছিল ৫ বিলিয়ন ডলার। তবে এ খাতে ভালো করতে হলে অবকাঠামো এবং সুলভমূল্যে ইন্টারনেটের সুবিধা আরও বাড়াতে হবে। শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি নারীদের কর্মসংস্থানেও অবদান রাখছে এই ইন্টারনেটভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোও বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করছে।
আউটসোর্সিং কি : আউটসোর্সিং মানে বাইরের মাধ্যম থেকে কোনো কাজ বা তথ্য নিজের কাছে নিয়ে আসা বা নিজের কাজ বা তথ্য অন্যের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে তুলনামূলক কম মূল্যে করিয়ে নেওয়া। শুধু ফ্রিল্যান্সিংকে এককভাবে আউটসোর্সিং বলা চলে না। স্থানীয় বা নিজ দেশের কাজকেও আউটসোর্সিং বলা যাবে না। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রকাশিত ‘হাউ দ্য ডিজিটাল ইকোনমি ইজ শেপিং এ নিউ বাংলাদেশ’ শীর্ষক নিবন্ধে সাফল্যের গল্প তুলে ধরে বলা হয়, কম খরচ ও ঝুঁকি বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বের অনেক বড় কোম্পানি এখন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে আউটসোর্সিং করছে। এতে বাংলাদেশ হয়ে উঠছে ফ্রিল্যান্সিং কর্মসংস্থানের একটি বড় উৎস। ফ্রিল্যান্সিং কাজের মধ্যে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে ওয়েব ডিজাইন, কর প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ ও সার্চ ইঞ্জিন ওপটিমাইজেশনসহ (এসইও) অনেক কাজই রয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে ফ্রিল্যান্সিং হয়ে উঠেছে অনেক বাংলাদেশির পছন্দের ক্যারিয়ার। এ দেশের তরুণ-তরুণীদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং অনেক সহজ হয়ে গেছে। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট- ওআইআই’র তথ্যমতে, অনলাইন শ্রমিক সরবরাহে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। বর্তমানে এ দেশের নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার রয়েছে ছয় লাখ ৫০ হাজার।
এর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ নিয়মিত কাজ করছে। বাংলাদেশের আইসিটি ডিভিশনের তথ্য অনুযায়ী, তারা বার্ষিক ১০ কোটি ডলার আয় করছে। অনলাইন শ্রমিক সরবরাহে বিশ্বের শীর্ষ দেশ ভারত, বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সার শ্রমিকের ২৪ শতাংশই ভারতের, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার বিশ্বের ১৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সার ১২ শতাংশ। একেক দেশ একেক ধরনের আউটসোর্সিং কাজে গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারতের ফ্রিল্যান্সাররা প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে বেশি কাজ করছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা বিক্রয় ও বাজারজাতকরণ সেবায় এগিয়ে। এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আগামী ২০২৩ সালে এই খাতে ৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা আছে। যার মধ্যে ২৫ শতাংশ আউটসোর্সিং থেকে আসবে বলে প্রাক্কলন করেছে সরকার। তিনি বলেন, আউটসোর্সিং নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। আমাদের ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে হবে। ব্যাংকের হয়রানিতে বৈধপথে আউটসোর্সিংয়ের প্রকৃত অর্থ দেশে আসছে না। বাণিজ্যবিষয়ক পত্রিকা ফোবর্সের তথ্যমতে, ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয়ে এগিয়ে থাকা বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। ফ্রিল্যান্সিং আয়ে ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। আর ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে সপ্তম অবস্থানে প্রতিবেশী ভারত।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের গবেষণার তথ্যমতে, বাংলাদেশের চার কোটি ৪০ লাখ তরুণের প্রতি ১০ জনের একজন বেকার। খুব সহজেই আইটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার সুযোগ রয়েছে তাদের সামনে। শিক্ষিত নারীর জন্যও ফ্রিল্যান্সিং দারুণ সুযোগ। ঘরে বসেই কাজের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশের নারীরা ফ্রিল্যান্সিংকে ক্যারিয়ার সংকটের সমাধান হিসেবে দেখছেন। নারীরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এখন পুরুষের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য। আর নারীদের অংশগ্রহণে এই খাত আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। বিশ্বের আউটসোর্সিং বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে এখনো বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বাংলাদেশের। সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এ ছাড়া ইন্টারনেট সেবার মান নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মূল্যও অনেক বেশি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটা অনেক বড় সমস্যা। ব্রডব্যান্ড সুবিধা থাকলেও অনেক সময় তা ধীরগতির হয়। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে টাকার সহজ লেনদেনের ব্যবস্থা। বিশেষ করে বিদেশ থেকে টাকা আনার ক্ষেত্রে সহজ কোনো উপায় নেই। আর নারী ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেলেও এখনো তা যথেষ্ট নয়। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।