জুমবাংলা ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল নিষিদ্ধের বিষয়টি সরকারের পর্যালোচনায় রয়েছে। খবর বাসস
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
এ ছাড়া তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকার শিগগিরই একটি সার্চ কমিটি গঠন করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দলনিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবে।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকার দ্রুত একটি সার্চ কমিটি গঠন করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের দলনিরেপক্ষ যে অবস্থান, সেই অবস্থানে থেকে সার্চ কমিটি এবং নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।’
তবে পরবর্তী সময়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে, কবে নির্বাচন হবে—এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ অন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মাহফুজ আলম বলেন, ‘তখন আপনারা দেখতে পাবেন রোডম্যাপ কিভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে গণফোরাম, এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাসদ (আম্বিয়া), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টসহ ১০টি রাজনৈতিক দল সংলাপ করে। নতুন করে সরকার গত ৫ অক্টোবর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে। কিন্তু দুর্গাপূজার কারণে কয়েকটি দল বাকি ছিল, যারা গতকাল সংলাপে অংশ নেয়।
প্রধান উপদেষ্টা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, পোশাক কারখানার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার বিষয় সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, ‘যাঁরা গত তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, অবৈধভাবে নির্বাচিত হয়ে তাঁরা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট—তাঁদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করবে। কিভাবে বাধা বাস্তবায়িত হবে, সেটা দেখতে পাবেন। এটার আইনি ও প্রশাসনিক দিক আছে। যখন নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে তখন বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা ১৪ দল নিষিদ্ধের বিষয়টি সরকার পর্যালোচনা করছে। সব রাজনৈতিক দল এবং সব ধরনের স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকার একা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ফ্যাসিজমে নীরব সমর্থন দিয়ে গেছে। তারা অবৈধ নির্বাচনের বৈধতা দিয়েছে। এ জন্য আমরা জাতীয় পার্টিকে আপাতত সংলাপে রাখছি না।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জানান, সংলাপে রাজনৈতিক নেতারা জানতে চেয়েছেন—সংস্কারপ্রক্রিয়া, আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং অর্থ লুটপাট ও অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে কী করছে সরকার। গণহত্যার বিচার কার্যক্রম নিয়েও তাঁরা কথা বলেছেন।
এর পাশাপাশি গণহত্যা চালানোর ব্যাপারে গণভবনে বসে ১৪ দল শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেছে; এই ১৪ দলের বিষয়ে সরকার কী করবে রাজনৈতিক দলগুলো তা জানতে চেয়েছে।
গণহত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকে দেশের বাইরে কিভাবে পালিয়ে গেলেন—এমন এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশে কোনো সরকার ছিল না। এক সপ্তাহের মতো পুলিশ কর্মবিরতিতে ছিল। সে সময়ে আপনি যদি জানেন একটি লোক পালাচ্ছে—তখন তো পুলিশ দিয়ে তাকে আটকানো। কিন্তু সেই পরিস্থিতি ছিল না।’
তবে গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের আটক করার ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এই অবস্থানে অনড় আছে।
প্রেসসচিব বলেন, গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কিভাবে পালালেন সেটা সরকার তদন্ত করছে।
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মুজমদার বলেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে পরামর্শ এসেছে এবং তারা উপদেষ্টাদের কাজের মূল্যায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এই প্রস্তাব মনোযোগ দিয়ে শুনে বলেছেন, পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেসসচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।