কোনো এক সুন্দর সন্ধ্যায়, যখন অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে, এসো, সেই সময় মাঠে যাওয়া যাক, কিংবা যাওয়া যাক সমুদ্রের তীরে, কোনো একটা খোলামেলা জায়গায়, যেখানে ঘরবাড়ি বা গাছপালা আকাশ আড়াল করে দাঁড়িয়ে নেই। আরও দেখতে হবে সেখানে যেন কোনো রাস্তার আলো না থাকে, জানালার বাতি চোখে না পড়ে। মোট কথা, জায়গাটা হতে হবে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ! আকাশে কত তারা! সবগুলো কেমন ধারালো-খরশান। দেখে মনে হয় যেন একটা কালো চাঁদোয়ার গায়ে ছুঁচ ফুটিয়ে ছোট ছোট ছেঁদা করা হয়েছে, আর সেগুলোর আড়ালে ঝিকমিক করছে নীল নীল আলো।
আর তারাগুলো কতই না বিচিত্র! ছোট, বড়, নীলচে, হলদেটে; কতক তারা সম্পূর্ণ একা, বিচ্ছিন্ন, আবার কতকগুলো একসঙ্গে ছোট ছোট ঝাঁকবাঁধা, একেকটি গুচ্ছ। এই ‘ঝাঁকগুলোকে’ বলা হয় ‘নক্ষত্রপুঞ্জ’। এই আজ আমরা যেমন তারাভরা রাতের আকাশ দেখছি, হাজার হাজার বছর আগেও লোকে তেমনি দেখত।
দিক-দর্শনযন্ত্র, ঘড়ি আর ক্যালেন্ডারের কাজ তখন করত আকাশ। যাত্রীরা তারার অবস্থান দেখে দিক ঠিক করত। তারা দেখে লোকে জানতে পারত সকাল হতে আর কত দেরি। তারা দেখে ঠিক করত কখন বসন্ত আসছে। আকাশ সব সময়, সর্বক্ষেত্রে মানুষের কাজে লাগত। মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো বহুক্ষণ ধরে চেয়ে চেয়ে দেখত তাকে, তার তারিফ করত, তাকে দেখে আশ্চর্য হতো, আর ভাবত, কেবলই ভাবত।
তারারা আসলে কী? কীভাবে আকাশে তাদের আবির্ভাব ঘটল? কেনই-বা আকাশে ওরা ঠিক এইভাবে ছড়িয়ে পড়ল, অন্য কোনো রকমভাবে কেন নয়? নক্ষত্রপুঞ্জের অর্থ কী? রাতেরবেলায় চরাচর শান্ত—বাতাস পড়ে আসে, গাছপালার পাতা সরসর আওয়াজ করে না, সমুদ্র শান্ত। পশুপাখি নিদ্রামগ্ন। মানুষও। এই নিস্তব্ধতার মধ্যে যখন আকাশের তারার দিকে তাকানো যায়, তখন আপনাআপনিই মাথার ভেতরে এসে ভিড় করে রাজ্যের রূপকথা—একটি আরেকটির চেয়ে সুন্দর।
প্রাচীনকালের মানুষেরা তারাদের নিয়ে অসংখ্য কল্পকাহিনি আমাদের জন্য রেখে গেছে। প্রাচীনকালে চীন দেশে এই নক্ষত্রপুঞ্জকে তাই বলা হতো ‘পে-তেউ’, যার অর্থ হলো চাটু বা কোষা। মধ্য এশিয়ায় ঘোড়া অনেক ছিল বলে এই তারাগুলোকে বলা হতো ‘খুঁটি বাঁধা ঘোড়া’। আর আমাদের এই অংশে এর নাম ‘সপ্তর্ষিমণ্ডল’ বা ‘ঋক্ষমণ্ডল’।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।