নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়া অনেকের শরীরে এমন ‘টি-সেল’ রয়েছে, যেটি এই ভাইরাসকে প্রতিহত করতে সক্ষম। কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্ভবত এসব ব্যক্তি অন্য কোনো করোনাভাইরাস দ্বারা এর আগে সংক্রমিত হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা আরেকটি আশার কথাও শুনিয়েছেন। সেটি হলো, মৃদু উপসর্গ থাকা ব্যক্তির শরীরেও এমন ‘টি-সেল’ এবং ‘অ্যান্টিবডি’ তৈরি হতে পারে, যেটি তাকে ভবিষ্যৎ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম।
এদিকে করোনা চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার নিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। গত বুধবার সংস্থাটি জানিয়েছে, করোনার সম্ভাব্য চিকিৎসায় এই ওষুধের ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ ফের শুরু হবে। যদিও একই দিন আরেকটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, করোনা চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন কার্যকর নয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলের অন্তত ৬৫ লাখ মানুষের মধ্যে ‘করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯’ (কভিড-১৯) শনাক্ত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা তিন লাখ ৯০ হাজারের বেশি। সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি লাতিন আমেরিকায়। সংক্রমণের তালিকায় চীনকে টপকে গেছে পাকিস্তান। এদিকে চীনের উহানে সব বাসিন্দার করোনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তাদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০।
আক্রান্তের আগেই অনেকে ‘করোনা প্রতিরোধী’
গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি ছাপা হয় সেল সাময়িকীতে। গবেষণায় মোট ৪০ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠেছে। বাকি ২০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। অর্থাৎ এই ২০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা থেকে সেরে উঠা ২০ জনের শরীরেই শ্বেত রক্তকণিকা এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালে যেসব নমুনা নেওয়া ছিল, সেগুলোর ৫০ শতাংশের মধ্যেও ‘সিডি৪+’ নামের ‘টি-সেল’ পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ‘টি-সেল’ করোনাভাইরাসকে শনাক্ত এবং প্রতিহত করতে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যাদের শরীরে এই ‘টি-সেল’ আগে থেকেই আছে, তারা করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ ধরনের ব্যক্তি আগে অন্য কোনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিল, যেগুলোর কারণে সাধারণ সর্দি-কাশি হয়ে থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই সক্ষমতাকে বলা হয় ‘ক্রস-রিয়েক্টিভিটি’। কিন্তু এই ‘ক্রস-রিয়েক্টিভিটি’ কতটা শক্তিশালী কিংবা অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতা থাকলে এটা কতটা সুরক্ষা দেবে, তা নিশ্চিত হতে আরো গবেষণা প্রয়োজন।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে ডাব্লিউএইচওর নতুন সিদ্ধান্ত
ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের পরীক্ষামূলক ব্যবহার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ডাব্লিউএইচও। গত বুধবার সংস্থাটির মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গ্রেব্রিয়েসিস বলেন, করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা যাবে। তাঁর দাবি, ডাব্লিউএইচওর গবেষকরা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন যে এই ওষুধ প্রয়োগের ফলে করোনায় আক্রান্তদের কেউ ঝুঁকিতে পড়েনি। এর আগে ল্যানসেটের এক গবেষণা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ডাব্লিউএইচও। এরপর ওই গবেষণা প্রতিবেদনের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই তত দিনে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। যদিও গত বুধবার নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা পাওয়া যায়নি।
দেশে দেশে করোনা পরিস্থিতি
চীনের উহানে দ্বিতীয়বার করোনা আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু সেই আশঙ্কা আপাতত নেই। কারণ সেখানকার প্রায় এক কোটি বাসিন্দার সবারই করোনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০০ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। আবার কারো মধ্যেই করোনার উপসর্গ নেই। উহানের কর্মকর্তারা জানান, ১৪ মে এই কার্যক্রম শুরু হয়। শেষ হয় ১ মে। এই ১৯ দিনে উহানের ৯৯ লাখ ৯০ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
এদিকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র এখনো শীর্ষে রয়েছে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ লাখের বেশি। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার। ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ছয় লাখ ছুঁই ছুঁই। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার মানুষের। এর মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ রোগীর মৃত্যু হয় গত বুধবার, এক হাজার ২৬৯ জন। আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে পেরু, চিলি, কলম্বিয়া ও মেক্সিকোতে। তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ৪০ হাজারের বেশি। পাশের দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার। সর্বোচ্চ আক্রান্তের তালিকায় চীনকে টপকে ১৭তম অবস্থানে উঠে এসেছে পাকিস্তান। সেখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮৫ হাজারের বেশি।
সার্বিক পরিস্থিতি
বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৬ লাখ ৩০ হাজার ৭০। মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার ৫৭৯ জনের। সুস্থ হয়েছে ৩২ লাখ এক হাজার ৫৪০ জন। চিকিৎসাধীন ৩০ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫১ জন। তাদের মধ্যে মৃদু উপসর্গ রয়েছে ২৯ লাখ ৮৩ হাজার ৮৪০ জনের (৯৮ শতাংশ)। বাকি ৫৫ হাজার ১১১ জনের (২ শতাংশ) অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া বিশ্বের প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৮৫১ জন। বৈশ্বিক মৃত্যুর হার ৫.৮৮ শতাংশ। সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার, গার্ডিয়ান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।