জুমবাংলা ডেস্ক : শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজধানীর যে ক’টি থানা সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়া হয়, তার মধ্যে ভাটারা অন্যতম। এই থানার আটটি গাড়ি পুড়ে ছাই। একটি মামলারও আলামত অক্ষত নেই; হয় পুড়ে গেছে, নয়তো লন্ডভন্ড। মামলার নথিরও একই দশা। গুলশান-২ নম্বরে একটি ভবনের ছোট্ট কক্ষে এখন চলছে এই থানার কার্যক্রম।
গুলশান থানা থেকে চারটি গাড়ি অস্থায়ীভাবে এনে দেওয়া হয়েছে ভাটারা থানা পুলিশকে। তবে অভিযান, টহল, মামলা ও জিডি কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হয়নি। শুধু ভাটারা নয়, এমন চিত্র দেশের অনেক থানার। এসব থানায় পুড়ে যাওয়া হাজারো আলামত-নথি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পুলিশ। কারণ, বিচার কার্যক্রমের জন্য এসব আলামত-নথি গুরুত্বপূর্ণ।
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর বলেন, ‘রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণের কাজ চলছে। পুলিশের কত অস্ত্র ও গুলি লুট হয়েছে, সেই তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। আমরা এসব নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি। অনেক থানায় মামলার আলামত, নথি ও আসবাব পুড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়ার পর পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’ মানুষকে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশের কার্যক্রম স্বাভাবিক রূপে ফিরিয়ে আনতে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ সদরদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৫৩৪টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার হয়েছে ১০ হাজার ২১৯ রাউন্ড গুলি, টিয়ার শেল ৩৫৯ রাউন্ড ও সাউন্ড গ্রেনেড ১৪২টি।
মামলার আলামত ও নথি পুড়ে যাওয়ার বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘যেসব মামলার আলামত একেবারেই আর পাওয়া যাবে না, সেই মামলার সাক্ষ্য আদালতে দুর্বল হবে। নতুন আলামত পাওয়া যায় কিনা, তা তদন্ত কর্মকর্তা খুঁজতে পারেন। এগুলো কেস টু কেস দেখতে হবে। আর মামলার নথিপত্র থানা ছাড়াও আদালত এবং পুলিশের সার্কেল অফিসে থাকে। সেখান থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে।’
তবে ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ আমিনুল গণি টিটো বলেন, ‘আদালতে যেসব মামলা আলামতের ওপর নির্ভর করে প্রমাণ করতে হয়, সেগুলো প্রমাণ করা রাষ্ট্রপক্ষের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, আলামত ছাড়া অভিযোগ প্রমাণ করা দুরূহ।’
গত শুক্রবার পুলিশ সদরদপ্তর এসএমএসে জানায়, দেশের ৬৩৯টি থানার সব ক’টিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশ যেসব কার্যক্রমের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে, সেখানে পৌঁছাতে আরও সময় লাগবে। পুলিশ সদস্যরা কাজে ফিরলেও পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অপেক্ষা করছেন।
এক পুলিশ সুপার জানান, তাঁর জেলায় তিনটি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো রকম মেরামত করে সেখানে কাজ চলছে। গুরুতর অপরাধ ছাড়া মামলা বা জিডি হচ্ছে না। লোকজন আসামি ধরে দিলে পুলিশ আদালতে হাজির করছে। পুলিশ লাইন্স থেকে দু-একটি গাড়ি দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযান চালানোর মতো অবস্থা থানায় নেই।
পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, লুট হওয়া অস্ত্র দ্রুত উদ্ধারে জোর দেওয়া হচ্ছে। কারণ, অপরাধীদের হাতে এসব অস্ত্র গেলে তা দুশ্চিন্তার বিষয় হবে।
চট্টগ্রাম নগরীর আট থানা ও আট ফাঁড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোতোয়ালি, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, ইপিজেড, সদরঘাট ও পতেঙ্গা থানায় পুড়ে গেছে ৫৮৯টি মামলার নথিপত্র।
ডেমরা থানায় চলছে যাত্রাবাড়ীর কার্যক্রম
গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর সেখানে পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। মামলার আলামত ও নথিপত্র সবই পুড়ে গেছে। থানা ভবনের কোনো কক্ষে বসার মতো অবস্থাও নেই। এ অবস্থায় ডেমরা থানা ভবনে সীমিত আকারে শুরু হয়েছে যাত্রাবাড়ী থানার কার্যক্রম। মামলা ও জিডি নেওয়ার কার্যক্রম চলছে। তবে টহল, মামলার তদন্ত, অভিযান ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন শুরু হয়নি।
কমিউনিটি সেন্টারে উত্তরা পূর্ব থানা
উত্তরা পূর্ব থানা ভবনে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষোভকারীরা। এতে থানার ৫টি গাড়ি, আসবাব, মামলার আলামত ও নথিপত্র ভস্মীভূত হয়েছে। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে সিটি করপোরেশনের কমিউনিটি সেন্টারে শুরু হয়েছে উত্তরা পূর্ব থানার কার্যক্রম। এখানে পুলিশ সদস্যরা মেঝেতে রাত কাটাচ্ছেন। সেবা বলতে শুধু জিডি নথিভুক্ত করা হচ্ছে। জনতা কোনো অপরাধীকে আটক করলে তাকে এলাকায় দায়িত্বরত সেনাসদস্যের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান থানার এক কর্মকর্তা। থানার ওসি শাহ আলম বলেন, ‘পোড়া থানা ভবন সংস্কারের কাজ চলছে। সংস্কার শেষ হলেই থানা ভবনে ফিরে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।’
খিলক্ষেত থানার কাজ ফাঁড়িতে
রাজধানীর খিলক্ষেত থানা ভবনেও আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এতে থানার সব মামলার আলামত, মামলার নথি, আসবাব পুড়ে গেছে। ওসির গাড়িটিও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। থানায় বসার মতো অবস্থাও নেই। তাই নিকুঞ্জের ১১ নম্বর রোডের ফাঁড়িতে শুরু হয়েছে খিলক্ষেত থানার কার্যক্রম। এখানে জিডি ও মামলা নেওয়া শুরু হলেও পুলিশ টহল শুরু হয়নি।
খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এনামুল হক খন্দকার বলেন, ‘প্রিজনভ্যান নেই, তাই অটোরিকশায় করে আসামি আদালতে পাঠাতে হচ্ছে।’
টহল দিচ্ছে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পুলিশ
গত ৯ আগস্ট শুরু হয়েছে উত্তরা পশ্চিম থানার কার্যক্রম। মামলা ও জিডি নথিভুক্ত হচ্ছে এই থানায়। সেনাসদস্যদের নিয়ে পুলিশ টহলে বের হচ্ছে। এই থানার ওসি শাহ আলম জানান, গতকাল মাদক মামলায় একজন গ্রেপ্তার হয়। প্রিজনভ্যান না থাকায় তাকে আদালতে পাঠাতে সমস্যায় পড়তে হয়।
গত ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীরা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায়ও আগুন দেয়। এতে থানা চত্বরে থাকা পুলিশের তিনটি পিকআপ এবং ওসি ও পরিদর্শকের (তদন্ত) কক্ষ পুড়ে যায়। এর পর থানার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত ১১ আগস্ট সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল হোসেন বলেন, ‘ধীরে ধীরে থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক হচ্ছে। একটি টহল টিম প্রতিদিন বের হচ্ছে। তবে মামলার তদন্ত ও গ্রেপ্তার অভিযান এখনও শুরু হয়নি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।