জুমবাংলা ডেস্ক : মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতন দিয়েই চলছিল সংসারিক খরচ, মা-বাবার চিকিৎসা ব্যয় আর দুই ভাই ও এক বোনের পড়ালেখার খরচ। এই টানাপড়েনের মধ্যেই চাকরি আর পড়ালেখা যুগপত্ভাবে চালিয়ে যাচ্ছিলেন মোরসালিন। এরই মধ্যে করোনা মহামারি এসে সর্বনাশ হয়ে গেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৯ জুন প্রাণ গেছে মোরসালিনের। একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে পরিবারটি এখন দিশাহারা।
গত বুধবার ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার পাঁচরুখি গ্রামে কথা হয় মোরসালিনের মা আছমা খাতুনের সঙ্গে। চরম অসহায়ত্ব প্রকাশ করছিলেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘আমার পুত (ছেলে) কই গেল, সবই তো শেষ অইয়া যাইতাছে। অহন আমি কিবায় চলবাম, সবই তো আন্ধাইর দেখতাছি, কী খাইয়াম, কিবায় বাঁচবাম? করোনা তো সব শেষ কইর্যা দিল। অহন আঙ্গর সবাইরে করোনা ধইর্যা মাইর্যালাউক।’
মোরসালিনের বাবা সাইদুর রহমান বছর কয়েক আগে ধান কাটতে গিয়ে পড়ে যান। মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি এখন শয্যাশায়ী। তিনি জানাচ্ছিলেন, অসুস্থ হয়ে গত ১৩ জুন কর্মস্থল গাজীপুর থেকে বাড়ি ফেরেন মোরসালিন। স্থানীয় চিকিৎসায় সেরে না ওঠায় তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সেভাবে চিকিৎসা মেলেনি। পরে নমুনা পরীক্ষায় তাঁর করোনা ধরা পড়ে। এরপর তাঁকে ভর্তি করা হয় এসকে হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৯ জুন ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
মা আছমা জানান, মোরসালিন এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন। এর মধ্যে বাবার আয়-রোজগার বন্ধ হওয়ায় সংসারের হাল তাঁর কাধে এসে পড়ে। প্রাইভেট পড়িয়ে কিছুদিন চলার চেষ্টা করেন মোরসালিন। পরে গাজীপুরের মাওনায় একটি ওষুধ কম্পানিতে তাঁর চাকরি জোটে। সেখানকার ১২ হাজার টাকার বেতন দিয়ে নিজের চলাফেরার পাশাপাশি গ্রামে পরিবার চলছিল। মোরসালিনের পড়াশোনা চলছিল ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ সরকারি কলেজে, অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে। তিনি স্বপ্ন বুনছিলেন, পড়ালেখা শেষ করে ভালো চাকরি করবেন, সংসারে সচ্ছলতা ফেরাবেন।
আছমা একসময় অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। তবে চাকরি পাওয়ার পর মোরসালিন আর মাকে গৃহকর্মীর কাজ করতে দেননি। এখন ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে ফের অন্যের বাড়িতে কাজ করছেন আছমা। তবে সেই আয় দিয়ে পরিবারের খাবার জোটানোই সম্ভব হচ্ছে না। আছমা জানান, তাঁর মেঝো ছেলে মোস্তাকিম বিল্লাহ (১৬) একটি মাদরাসায় লেখাপড়া করে। আর ছোট ছেলে আহাদ (১১) স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়ছে। অন্যদিকে বড় মেয়ে সুরাইয়া খাতুনের বিয়ে আগেই হয়েছে। ছোট মেয়ে রাবেয়া (৮) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। তাদের সব খরচের জোগান দিতেন বড় ছেলে মোরসালিন। তাঁর মৃত্যুর পর সন্তানদের পড়ালেখা ও স্বামীর চিকিৎসা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আছমা।
সহায়-সম্বল না থাকায় ছেলের আয় দিয়েই সংসার চলত জানিয়ে মোরসালিনের বাবা সাইদুর বলছিলেন, ‘আমার অহন কী গতি অইবো। কেলা আইন্যা দিব আমার পত্তাদি। সংসারই টিকবো কিবায়?’ সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।