জুমবাংলা ডেস্ক: চীন থেকে কেনা নতুন ৭ বগি ও আমেরিকা থেকে আসা নতুন ইঞ্জিনের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ ট্রেন। পদ্মা সেতু রেল লিঙ্ক প্রকল্পে এই ট্রেন দিয়ে শুরু হবে ট্রায়াল রান। আজ দুপুরে এই ট্রেনটি প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলবে।
সোমবার ট্রেনটিকে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা থেকে ফরিদপুরে আনা হয়েছে।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে দুপুর ১২টায় শুরু হবে ট্রেনের যাত্রা। এরপর পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া স্টেশনে দুপুর ২টায় শেষ হবে ট্রায়াল রান।
ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলে সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের কাছে এই খবর বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে। শেষ নেই উৎসাহ-উদ্দীপনার।
পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত সরাসরি যাত্রী নিয়ে রেলপথে ট্রেন চলবে আগামী সেপ্টেম্বরে। তবে আগামী বছর ট্রেন চলবে ঢাকা- যশোর রেলপথে। পদ্মা সেতু ঘিরে দেশের আধুনিক রেল নেটওয়ার্কের খবরে আনন্দে উচ্ছ্বসিত পদ্মা পাড়ের মানুষ।
পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহম্মেদ জানান, ‘গ্যাংকার দিয়ে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত সাড়ে ৪১ কিলোমিটার রেলপথ পরীক্ষা করে দেখবো। এ পথে ডিজাইন স্পিড ১২০ কিলোমিটার থাকলেও ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে টেস্ট-রান চালানো হবে।’
তিনি জানান, পদ্মা সেতুর রেলপথ চালু আরও এক শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি করবে। ট্রান্স এশিয়া রেলপথের সঙ্গে এ লাইনটি যুক্ত হবে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদার চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)। আর পুরো প্রকল্প তদারকি করছে সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘এর আগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শরীয়তপুরের পদ্মা সেতু সংযোগ রেলপথে একটি ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছিল। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। আমরা এরই মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ করেছি।’
ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় ১৭২ কিলোমিটার রেললাইন দিয়ে যশোরের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ দেবে। চীন সরকার মনোনীত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড চায়না জিটুজি সিস্টেমের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পটি সম্পন্ন করার পর দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলার নতুন এলাকাজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ঢাকা-যশোর-খুলনার মধ্যে ২১২ দশমিক ০৫ কিলোমিটার সংক্ষিপ্ত রুট এবং উন্নত পরিচালন সুবিধার বিকল্প রেলপথ সংযোগ স্থাপিত হবে।
এটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি সাব-রুট স্থাপন এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মালবাহী এবং বিজি কনটেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। এই রুটটি কনটেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রে গতি এবং লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে।
সরকার ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত এই রেলপথ নির্মাণের অনুমোদন দেয় এবং এটি একটি ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন কালবেলাকে বলেন, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করছি। সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় কাজও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি, আগামী আগস্টের মধ্যে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে।
প্রকল্পে নির্মাণ করা হবে নতুন ১৪টি স্টেশন ও ৬৬টি বড় সেতু। এ ছাড়া ৬টি পুরোনো স্টেশন পুনর্নির্মাণ ও ২৫৪টি ছোট সেতু নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ১০০টি রেল কোচ কেনা হবে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভুক্ত (ফাস্ট-ট্র্যাক) ১০ প্রকল্পের একটি।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ বলেন, পদ্মা সেতুর রেলপথ ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলক ট্রেন যাত্রা শুরু করবে।
এর আগে সেতুর ২৫ নম্বর পিলার বরাবর নিচতলায় সাত মিটার দৈর্ঘ্যের স্লিপারে চীন থেকে আনা জিকে ৩০০০ কিউরিং কম্পাউন্ডের কংক্রিটের ঢালাই কাজ সম্পন্ন হয়। ৪৮ ঘণ্টা পর প্রথম দফায় ঢালাইয়ের কিউব কেটে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এরপর আরও ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ মোট ৭২ ঘণ্টা পর চূড়ান্ত পরীক্ষায় কোনো সমস্যা না পাওয়ায় পদ্মা সেতু রেল চলাচলের জন্য প্রস্তুত ঘোষণা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি)।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।