জুমবাংলা ডেস্ক : বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে আছে স্বজন ও বাবার পৈতৃক জমিদারি সম্পত্তি, আঁতুড়ঘর, বাবা-চাচার কবর ও স্মৃতিঘর। বছর ঘুরে এখানে সরকারিভাবে পালন করা হচ্ছে জন্ম-মৃত্যু দিবস। যাকে ঘিরে এত আয়োজন অথচ তার সমাধি নেই এখানে। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
তার দেহাবশেষ পড়ে আছে ভারতের কলকাতার সোদপুর নামের এক গ্রামে। প্রায় দেড় যুগে পরিবারের দাবি ছিল সেখান থেকে তার দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনার। কিন্তু সেই দাবি, চিঠি চালাচালিতে চাপা পড়ে আছে। এতে ক্ষুব্ধ পরিবার।
জানা গেছে, কুসংস্কারের শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি নারীর চোখে মুক্তি স্বপ্ন এঁকে দেওয়া রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মভূমি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে। এই গ্রামে ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বরে জন্ম নেন তিনি। তবে, ১৯৩২ সালের একই দিনে তিনি কলকাতায় মারা যান। সেখান থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে পানিহাটির সোদপুর গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
রোকেয়া অনুরাগীরা জানান, বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে জন্মভূমিতেই। এখানেই তাকে ধারণ ও চর্চা করা হয়। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে আনার কার্যত কোনো উদ্যোগ নেই।
পরিবারের পক্ষ থেকে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে পায়রাবন্দের রোকেয়া মেলায় তার দেহাবশেষ এনে নিজ গ্রামে বাবার কবরের পাশে সমাহিত করার দাবি তুলেছিল পরিবার। তৎকালীন জেলা প্রশাসক বি এম এনামুল হক সেই দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে ২০১০ সালে তার পরিবার ও স্থানীয়দের বিভিন্ন দাবি সংবলিত একটি লিখিত আবেদন সরকারের সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠান। এরপর দীর্ঘ সময়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
রোকেয়ার স্বজনদের অভিযোগ, ২০১০ সালে ডিসির আবেদনের পর প্রতিবছর আলোচনা হলেও দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনতে কাগজে-কলমে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তার পরিবার, স্বজন এবং রোকেয়া অনুরাগীরা।
রংপুর পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, ‘১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দে জমিদার জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার এবং রাহেতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরাণীর কোল আলোকিত করে জন্ম নেন এই মহীয়সী নারী। রোকেয়ার সব কিছুই আছে পায়রাবন্দে। বেদখল হলেও আছে তার বাবার জমিদারি সম্পদ। বাবা-চাচার কবরও।’
তিনি আরো বলেন, ‘রোকেয়ার আঁতুড়ঘর এই গ্রাম। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। এখানে তার নামে এখন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে তার জন্ম ও মৃত্যুদিনে অনেক কর্মসূচি পালন হয়। অথচ তার দেহাবশেষ পড়ে আছে সীমান্তের ওপারে সোদপুরের পানিহাটি নামে এক অখ্যাত গ্রামে।’
যেভাবে কলকাতায় গেলেন রোকেয়া
১৮৯৬ সালে ১৬ বছরের কৈশোরে পা দেন রোকেয়া। এই বয়সে বিয়ের জন্য বাড়িতে আসতে শুরু করে পাত্র। কিন্তু বড় ভাই ইব্রাহিম চেয়েছিলেন রোকেয়ার পড়ালেখা যেন বন্ধ না হয়। অনেক খুঁজে ২২ বছরের বড় বিপত্নীক ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে দেন। সাখাওয়াত হোসেনের আগের স্ত্রীর এক কন্যাসন্তানও ছিল। বিয়ের পর জীবনের অধিকাংশ সময় বিহার ও পশ্চিম বাংলার কলকাতায় কেটেছে রোকেয়ার।
বেগম রোকেয়ার কবর সোদপুরে কেন?
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বরে কলকাতায় মৃত্যু হলে বেগম রোকেয়াকে কলকাতা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে গঙ্গা নদীর তীরবর্তী পানিহাটি গ্রামে দাফন করা হয়। তখন তাকে কলকাতায় দাফনে বাধা দিয়েছিল সেখানকার রক্ষণশীল মুসলিম সমাজ। শেষপর্যন্ত বেগম রোকেয়াকে স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের বন্ধু ব্যারিস্টার আব্দুর রহমানের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘সোদপুরের পানিহাটিতে তার কবরটি বহু বছর ছিল সবার অজানা। অনেকটা অবহেলিত অবস্থায়ই ছিল কবরটি। পশ্চিমবঙ্গের স্পিকার মনসুর হবিবুল্লাহ নব্বইয়ের দশকে উদ্যোগী হন রোকেয়ার কবর সঠিকভাবে শনাক্ত করতে। সে সময়ে পানিহাটি পৌরসভার পুরনো নথিপত্র ঘেঁটে রোকেয়াকে সমাহিত করার স্থানটির সন্ধান মেলে। ১৯৯৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর রোকেয়ার কবরে উন্মোচন করেন একটি স্মৃতিফলক।’
দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনার দাবি
রোকেয়ার ভাতিজি রনজিনা সাবের বলেন, ‘রোকেয়ার সব কিছুই আছে পায়রাবন্দে। আমি নিজেই সেই সময় ডিসি এনামুল স্যারকে অনুরোধ করে বললাম রোকেয়ার দেহাবশেষ কলকাতা থেকে পায়রাবন্দে আনার জন্য। তিনি আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি ঢাকায় আবেদন পাঠিয়েছেন বলে আমরা শুনেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘তিনি যে আবেদন করেছিলেন তার কিছুদিন পর তার বদলি হয়। বিষয়টি নিয়ে অনেক খোঁজ নিয়েছি—অনেকবার বলেছি, অনেকবার। খোঁজ নিলেই বলে, প্রক্রিয়াধীন আছে। পরে কী হলো তা-ও জানি না। বছর বছর ডিসেম্বর আসে—আর আলোচনা হয়, কিন্তু কাজ হয় না।’
রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, ‘বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণ। আমরা এই বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে জানাব।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।