জুমবাংলা ডেস্ক : দুই মাস পর ফাঁস হওয়া ধর্ষণের একটি ভিডিও থেকে জানা গেল রংপুরের বদরগঞ্জের এক স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার কারণ। প্রেমের ফাঁদে ফেলে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের সময় গোপনে বন্ধুকে দিয়ে ওই ভিডিও ধারণ করেছিল প্রতারক প্রেমিক। সেই ভিডিও অন্যদের হাতে চলে যাওয়ায় লজ্জা-অপমানে বিষপান করে দুই মাস আগে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় মেয়েটি।
জীবন দিয়েও ক্ষমা মেলেনি, প্রেমিক কর্তৃক ধর্ষণের সেই ভিডিও এখন হাতে হাতে ছড়িয়ে গেছে। এখন লোকলজ্জার ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভাগ্যাহত মেয়েটির মা। পুলিশ বলছে, মেয়েটি রংপুর মেডিক্যালে মারা গেছে। নিয়ম অনুযায়ী, এ ব্যাপারে রংপুর কোতোয়ালি থানায় একটি ইউডি (অস্বাভাবিক মৃত্যু) মামলা থাকলেও আর কোনো অভিযোগ কেউ করেনি।
গত ৫ জানুয়ারি বদরগঞ্জের লোহানীপাড়া এলাকার স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী চিকিৎসাধীন রংপুর মেডিক্যালে মারা যায়। এ ব্যাপারে নিয়মানুযায়ী রংপুর কোতোয়ালি থানায় একটি ইউডি মামলা হয়। হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মেয়েটি বিষপান করেছিল। তার ময়নাতদন্তও করা হয়। সেই সময় মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে এমন কথাই বলেছিল তার পরিবার। একই দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় শ্মশানঘাটে মেয়েটির লাশ দাহ করা হয়।
সোমবার মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। মূল ঘরে তালা ঝুলছিল। প্রতিবেশীরা জানান, গত সপ্তাহখানেক ধরে বাড়িতে কেউ নেই। আট বছর আগে স্বামী মারা গেলে বড়
দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে সবার ছোট মেয়েটিকে নিয়ে তার মা বসবাস করতেন। মেয়ের চাচা ভবেশ চন্দ্র দাস বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। মেয়ের মা বলেছিল মোবাইল কিনে না দেওয়ায় মেয়ে অভিমানে আত্মহত্যা করে। কিন্তু এখন অন্য কথা শুনছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফাঁস হওয়া ৪ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে একটি ঘরে লোহানীপাড়া ইউপি সদস্য ইউনুস আলীর ছেলে হাফিজুর রহমানের সঙ্গে মেয়েটির অন্তরঙ্গ ভিডিওর সঙ্গে কিছু কথোপকথন শোনা যায়। ভিডিওটি দেখে বোঝা যায় একই ঘরে খাটের আড়াল থেকে ভিডিওটি মোবাইল ফোনে ধারণ করা। একসঙ্গে দুজনের কয়েকটি ছবিও প্রকাশ হয়েছে।
এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন, হাফিজুরের অন্তরঙ্গ বন্ধু প্রতিবেশী কালীপদ মাস্টারের ছেলে বিপুলচন্দ্রের মোবাইল ফোনে হাফিজুর ও ওই মেয়ের ছবি থাকার কথা জানতে পেরে মাস দুয়েক আগে রাসেল, শহীদুল ও ফজু মেম্বার বিপুলকে ধরে তার মোবাইল ফোন থেকে একটি মেমোরি কার্ড কেড়ে নেন। তার পরই এলাকার অনেকের মোবাইলে ভিডিওটি চলে যায়। এর পরই মেয়েটি আত্মহত্যা করে বলে জানান এলাকার অনেকেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলার রহমান ফজু মিয়া একটি আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর মেয়েটি আত্মহত্যা করে বলে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। অভিযুক্ত হাফিজুলের বাবা ইউনুস আলী জানান, তার ছেলে আগে দুটি বিয়ে করে তালাক দেওয়ায় আগেই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। কিন্তু সে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, তা তিনি জানেন না।
ভিডিও ধারণ করা বিপুলচন্দ্রকেও বেশ কিছু দিন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার পরিবার জানিয়েছে, সে কোথায় আছে তা তারা জানেন না। ভিডিও ধারণের বিষয়েও কিছু জানেন না তারা। পরিবারের দাবি, বিপুলের মাথা খারাপ।
বদরগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, ওই সময় থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। এখন নিহতের পরিবারের কেউ একজন অভিযোগ করলে আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা নেওয়া যাবে। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বিষয়টি জানার পর বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতাকে ভিকটিমের বাড়িতে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। পরিবার যাতে ভয় না পায়, সে জন্য পুলিশ নিরাপত্তা দেবে বলেও জানান তিনি। এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দিলে থানা তা গ্রহণ করবে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।