বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইইউ পার্লামেন্টের প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেন খোদ ইইউ পার্লামেন্টের সদস্য ম্যাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ। অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানের বিরুদ্ধে দেয়া আদালতের রায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মান অনুযায়ী হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। সুযোগ পেলেই মানবাধিকার ইস্যুকে পশ্চিমারা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বলেও অভিযোগ তার।
বুধবার (১১ অক্টোবর) বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইইউ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ সম্পর্কিত এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। স্টাডি সার্কেল ইউকে আয়োজিত ওই সেমিনারে বক্তব্য দেন ম্যাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ।
বিগত ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। কিন্তু সরকারিভাবে বলা হয়, মৃতের সংখ্যা ১৩। ওই বছরের ১০ জুলাই নিহতের তালিকা চেয়ে অধিকারকে চিঠি দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু সংগঠনটি তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
অধিকার-এর এমন অনড় অবস্থানের মধ্যেই দেশের একাধিক গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করে অধিকার যাদের মৃত বলে দাবি করেছে, তাদের অনেকেই জীবিত আছেন। এমনকি নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
পরে অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হয়। পররবর্তীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে উস্কানি ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ এনে তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করা হয় অধিকার-এর দুই নেতার বিরুদ্ধে।
এক দশক পর সেই মামলার রায়ে অধিকার-এর দুই নেতাকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ের দিন ১৪ সেপ্টেম্বর (চলতি বছরের) অধিকারের আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানের কারাদণ্ডের নিন্দা জানিয়ে দ্রুত এ রায় বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় ইইউ পার্লামেন্টে। এর সঙ্গে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে – এমন উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে ইইউ পার্লামেন্ট।
এরপর থেকেই দেশে-বিদেশে চলছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। ইইউ-এর অবস্থানকে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে নিন্দা জানায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
এবার ইইউ পর্লামেন্টের এ প্রস্তাব পাসের বিষয়ে নিন্দা জানালেন খোদ ইইউ পার্লামেন্টেরই এক সদস্য। সংবাদমাধ্যম ইইউ টুডেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্য ম্যাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ বলেন, তিনি ইইউ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একজন এনজিও কর্মী পুলিশি সহিংসতার বিষয়ে একটি ভুল বিবৃতি দিয়েছিলেন, যার ফলে দাঙ্গা হওয়ার ঝুঁকি ছিল। এ ধরনের ভুল তথ্য ইউরোপেও শাস্তিযোগ্য। সুতরাং, আমরা ইউরোপে যে আচরণের বিচার করব, সেই আচরণের জন্য বাংলাদেশিদের দোষারোপ করা সমীচীন নয়।’
এর আগে, ইইউ কার্যালয়ে বাংলাদেশ বিষয়ে এক সেমিনারে অংশ নিয়ে এ ইইউ পার্লামেন্ট সদস্য বলেন, সুযোগ পেলে মানবাধিকার ইস্যুকে পশ্চিমা বিশ্ব একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে অন্যান্য দেশের ওপর। পশ্চিমাদের নীতির সঙ্গে একমত না হলেই তারা মানবাধিকার নিয়ে সবক দেয়।
কীভাবে বিষয়টি ইইউ পার্লামেন্টের মোকাবিলা করা উচিত – জানতে চাইলে এনজিও দ্বারা উপস্থাপিত ভুল তথ্য সক্রিয়াভাবে যাচাইয়ের সুপারিশ করেন ম্যাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।