আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেন যুদ্ধের রেশ কাটতে না কাটতে এখন উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থায় নতুন শঙ্কা তৈরি করছে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা। আপাতদৃষ্টে ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা বন্ধ হলেও ফিলিস্তিনকে কেন্দ্র করে যে কোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে তিনটি পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের কমোডিটি মার্কেট আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা জ্বালানি, সার ও খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এ অঞ্চলটি (মধ্যপ্রাচ্য) গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সরবরাহকারী। বিশ্ববাণিজ্যের প্রায় ২০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহন হয় হরমুজ প্রণালি দিয়ে। জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হলে সারের দাম যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে, সম্ভবত খাদ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ তিন পণ্যের উচ্চমূল্য বাংলাদেশের উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সারের দাম আরও বাড়লে কৃষি উৎপাদন কমবে। জ্বালানির উচ্চমূল্যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিল্পোৎপাদন ও সেবা খাত। আর খাদ্যমূল্য বাড়লে নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।
অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও এডিবির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়েছে। এবারের বাজেটেও সারের ভর্তুকি বাবদ ৩০ হাজার কোটি টাকার সংস্থান রেখেছে সরকার। মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারণে আরেক দফা সারের দাম বাড়লে এটি নিশ্চিতভাবে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া জ্বালানির দাম বাড়লে এটি শুধু শিল্পোৎপাদন নয়, পরিবহন ও গৃহস্থালি খাতেও ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। একই সঙ্গে সরকারের বাজেট-শৃঙ্খলাও নষ্ট করবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর মহাপরিচালক এম কে মুজেরী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়লে জ্বালানি সরবরাহ বিঘিœত হতে পারে। এর ফলে দেশের বাজারেও দাম বাড়বে। জ্বালানির দাম শুধু উৎপাদন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তাই নয়, খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও বাড়বে।’
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, শিল্পোৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ার আরও কারণ রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতিনির্ধারণী সুদের হার বাড়িয়েছে। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের সুদহারও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে উৎসাহ পাচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি ও খাদ্য মূল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়লে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও বেশি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সুদের হার আরও বাড়বে।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা না বাড়লে কী হবে : ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় আর কোনো উদ্দীপনা নেই বলে ধরে নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে চলতি বছর বৈশ্বিক দ্রব্যমূল্য ৩ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ৪ শতাংশ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সামগ্রিক খাদ্যের দাম ২০২৪-এ ৬ শতাংশ এবং ২০২৫-এ ৪ শতাংশ কমতে পারে; সারের দাম ২০২৪-এ ২২ শতাংশ এবং ২০২৫-এ ৬ শতাংশ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, এটি ঘটলেও বেশির ভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার ওপর রয়ে যাওয়া মুদ্রাস্ফীতির হার খুব কমই হ্রাস পাবে। এর পরও করোনা মহামারির আগের পাঁচ বছরের পণ্যমূল্যের চেয়ে গড়ে প্রায় ৩৮ শতাংশ দাম বেশি থাকবে।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের চিফ ইকোনমিস্ট এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্দ্রমিত গিল বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। তার মানে সুদের হার এ বছর এবং পরবর্তী সময়ে প্রত্যাশার তুলনায় বেশি থাকতে পারে। বিশ্ব একটি খারাপ সময় পার করছে । এ অবস্থায় একটি বড় শক্তির ধাক্কা (মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ) গত দুই বছরে মুদ্রাস্ফীতি কমানোর লক্ষ্য অনেকাংশে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।