আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানে ফিরতে শুরু করেছেন তালেবানের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা। মঙ্গলবার কান্দাহারে ফিরেছেন তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং জ্যেষ্ঠ নেতা মোল্লাহ আবদুল গানি বারাদার। তিনি তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়েরও প্রধান। খবর বিবিসি বাংলার।
এটা পরিষ্কার নয় যে, তিনি কোন দেশে থেকে ফিরেছেন। তবে তালেবানের বেশিরভাগ নেতা কাতারের রাজধানী দোহায় ছিলেন। সেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর সেনা প্রত্যাহার বিষয়ে আলোচনা করছিলেন।
কান্দাহার শহরটি তালেবানের আধ্যাত্মিক জন্মস্থান। ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী তাদের বিতাড়িত করার আগে পর্যন্ত এই শহরটি ছিল তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কান্দাহার বিমানবন্দর থেকে যখন মোল্লাহ আবদুল গানি বারাদার গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, তখন, উচ্ছ্বসিত জনতা তাকে অভিবাদন জানায়।
তালেবান আফগানিস্তানের দখল নেবার পর সোমবার তাদের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, তারা সরকার গঠনের লক্ষ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
এই প্রথম জনসম্মুখে এসে বক্তব্য দিলেন তালেবানের এই নেতা। এর আগে এই নেতারা বক্তব্য ও বিবৃতি পেতো সংবাদ মাধ্যম। কিন্তু সোমবার তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অনেক প্রশ্নেরও জবাব দেন।
“সব পক্ষ, সব গোষ্ঠী, সবার অন্তর্ভুক্তি আমরা নিশ্চিত করব, কাজ সম্পূর্ণ হলে আমরা সরকার ঘোষণা করব,” বলেছেন মি. মুজাহিদ।
“সরকার গঠনের পর সব কিছু পরিষ্কার হবে,” তিনি জানান।
“সরকার গঠনের পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব এবং দেশের জনগণকে জানাব দেশ কোন আইনে চলবে,” বলেন জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।
“আমি স্পষ্ট বলতে চাই সরকার গঠনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের কাজ সম্পূর্ণ হলে আমরা এ বিষয়ে ঘোষণা দেব।”
তালেবানের নতুন সরকারে কে কে থাকছে, তার কোন ঘোষণা এখনো আসেনি। তবে তালেবানের নেতাদের সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে:
১. হিবাতুল্লাহ আকুন্দযাদা
তালেবান নেতা আখতার মানসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর ২০১৬ সালের মে মাস থেকে তিনি তালেবানের সুপ্রিম কমান্ডারের দায়িত্বে রয়েছেন।
আশির দশকে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তবে সামরিক নেতার তুলনায় একজন ধর্মীয় নেতা হিসাবে তার পরিচিতি বেশি।
তার বয়স ৬০ বছর বলে ধারণা করা হয় এবং জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি আফগানিস্তানে কাটিয়েছেন।
দলের সুপ্রিম লিডার হিসাবে রাজনৈতিক, সামরিক ও ধর্মীয় বিষয়ের প্রধান আকুন্দযাদা। তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর তাকে অবশ্য এখনো প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
২. আবদুল গানি বারাদার
তালেবানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আবদুল গানি বারাদার এখন দলের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১০ সালে তাকে একটি অভিযানে গ্রেপ্তার করা হলেও, আট বছর পর শান্তি আলোচনার জন্য মুক্তি দেয়া হয়। ২০২০ সালে প্রথম তালেবান নেতা হিসাবে তিনি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেন।
মঙ্গলবার তিনি কাতার থেকে আফগানিস্তানে ফিরে এসেছেন।
৩. মোহাম্মদ ইয়াকুব
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা নেতা মোল্লা ওমরের সন্তান মোহাম্মদ ইয়াকুব। তার বয়স প্রায় ৩০ বছর এবং তিনি দলের সামরিক শাখার প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন।
২০১৬ সালে আখতার মানসুরের মৃত্যুর পর তালেবানের একটি অংশ তাকে দলের সুপ্রিম লিডার বানাতে চেয়েছিলেন। তবে অন্যরা তাকে বয়স কম ও অনভিজ্ঞ বলে মনে করেন।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মোহাম্মদ ইয়াকুব আফগানিস্তানে রয়েছেন।
৪. সিরাজুদ্দিন হাক্কানি
তালেবানের অন্যতম শীর্ষ নেতাদের একজন সিরাজুদ্দিন হাক্কানি। তার পিতা জালালুদ্দিন হাক্কানির মৃত্যুর পর তিনি হাক্কানি নেটওয়ার্কের নতুন নেতা হন। আফগান ও পশ্চিমা বাহিনীর ওপর ভয়াবহ সব হামলার জন্য এই দলকে দায়ী করা হয়।
এই এলাকার সবচেয়ে ভয়াবহ ও শক্তিশালী দলগুলোর একটি হাক্কানি নেটওয়ার্ক। অনেকে মনে করেন, আফগানিস্তানের আল-কায়েদার চেয়ে এই বাহিনী বেশি শক্তিশালী।
তিনিও আফগানিস্তানে রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি: আমরুল্লাহ সালেহ
তবে এর মধ্যেই আশরাফ গানির আফগান সরকারের প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ বিবিসির কাছে পাঠানো একটি অডিও বার্তায় দাবি করেছেন, তিনিই এখন দেশের তত্ত্বাবধায়ক প্রেসিডেন্ট।
তিনি জানিয়েছেন, তিনি আফগানিস্তানেই আছেন এবং যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।